Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিজেরা লড়াই করে দলটাকে হারিয়ে দিলেন: মমতা  

বস্তুত সিঙ্গুরে দলের হার নিয়ে রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে কম কাঁটা-ছেঁড়া হচ্ছে না। কোনওক্রমে আরামবাগ লোকসভায় দলের জয় হলেও, হুগলি লোকসভায় কার্যত হালে পানি পায়নি তৃণমূল।

আলোচনা: হুগলির নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে মমতা। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে। নিজস্ব চিত্র

আলোচনা: হুগলির নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে মমতা। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

গোষ্ঠীবিবাদের জেরে হুগলির অনেক জায়গাতেই যে লোকসভা নির্বাচনে দলের হার হয়েছে, তা জেলার নেতাদের ডেকে শুক্রবার স্পষ্ট করে দিলেন মমতা। সিঙ্গুরে দলের হারকে তিনি এ দিন দলের ‘লজ্জা’ বলেও চিহ্নিত করেন।

‘সিঙ্গুরে কে বড় নেতা—বেচারাম না মাস্টারমশাই?’ এ দিনের বৈঠকে এক সময় বলে ওঠেন দলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি সিঙ্গুরের জন্য কী করিনি? আর আপনারা নিজেরা লড়াই করে সিঙ্গুরে দলটাকে হারিয়ে দিলেন?’’ ওই বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী এক নেত্রী বলেন, ‘‘দিদি বলতে গিয়ে এ দিন কার্যত কেঁদে ফেলেছেন। এক সময় দিদি বলেন, ‘‘যখন থাকব না। তখন তোমরা বুঝবে।’’

বস্তুত সিঙ্গুরে দলের হার নিয়ে রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে কম কাঁটা-ছেঁড়া হচ্ছে না। কোনওক্রমে আরামবাগ লোকসভায় দলের জয় হলেও, হুগলি লোকসভায় কার্যত হালে পানি পায়নি তৃণমূল। ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটে বিজেপি-র লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হেরে গিয়েছেন রাজ্যের শাসকদলের প্রার্থী রত্না দে নাগ। এরপরই রাজ্য নেতৃত্ব নড়েচড়ে বসেন। রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে হুগলির পর্যবেক্ষক রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয় পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে।

কেন সিঙ্গুরের ফল ভাল হল না?

সেই প্রশ্নে বেচারাম অকপট। তিনি বলেন,‘‘এখন সিঙ্গুরে আমার বিরুদ্ধ গোষ্ঠী এমনভাবে কাজ করছে যে, দলের ক্ষতির কথা তাঁরা চিন্তা করছেন না। আমি যেহেতু সিঙ্গুরে লোকসভা নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলাম দলের তরফে, তাই দল সেখানে দু’হাজার ভোটে জিতলেও বেচার ভাল হবে মনে করে‌ছেন তাঁরা। তাই দল নয়, সিঙ্গুরে বেচাকে হারানোই ছিল মূল কথা। এইভাবে ভোট হয়!’’ মাস্টারমশাই অবশ্য এদিন মুখ খলতে চাননি। তাঁর মোবাইল বারেবারই বেজে গিয়েছে। একবার, ফোন ধরে জানানো হয়,‘‘মাস্টারমশাই বিশ্রাম নিচ্ছেন।’’

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কলকাতার কাছের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হুগলিতে মমতা শুক্রবার ঝুঁকি নিতে চাননি। এদিন জেলায় খারাপ ফলের জন্য তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্রকে বকাবকি করেছেন। কিন্তু আগামী দিনে হুগলিতে দলের রাশ যে উত্তরপাড়া পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের হাতেই থাকবে, তা তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও তাতে সায় দেন। দিলীপ বর্তমানে দলের খাতায় কমলে কার্যকরী সভাপতি। কিন্তু উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র এবং দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের সঙ্গে গোষ্ঠী বিন্যাসের রাজনীতিতে তেমন বনিবনা ছিল না। তাই তিনি জেলার বৈঠক এড়িয়ে চলতেন। চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদারের উপরও যে রাজ্য নেতৃত্ব খুশি নয়, তাও দলনেত্রী এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

কলকাতায় দলের ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া এক বিধায়ক বলেন, ‘‘এতদিন তো আমাদের জেলা সদর চুঁচুড়া নয়, ধনেখালি হয়ে গিয়েছিল। মানুষকে ধন্যবাদ দিতে হবে, হুগলিতে যে সাংসদের আসনই ‘খালি’ করে দেননি সেইজন্য। জেলা সদর থেকে উজিয়ে নেতারা এতদিন ধনেখালিতে দলের বৈঠকে যাচ্ছিল। তার ফল হাতেনাতে মানুষ দিয়েছে। বিরোধীদের পঞ্চায়েত শূন্য করে দেওয়ার শাস্তি মানুষ দিয়েছেন আমাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inner Conflict TMC BJP Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE