প্রতীকী ছবি।
শিয়ালদহের পরে চুঁচুড়া স্টেশন। কয়েক মাসের ব্যবধানে এ বার লোকাল ট্রেনের ছাদে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা। চুঁচুড়া স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল হাওড়াগামী ডাউন ব্যান্ডেল লোকাল। কোনও ফাঁকে বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা ট্রেনের ছাদে ওঠেন। নেমে আসার জন্য কারও অনুরোধ তিনি শোনেননি। সকলের সামনে মিনিট দশেকের মধ্যে মারা যান। ঘটনার পরে রেল কর্তৃপক্ষ এবং রেল পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান নিত্যযাত্রীরা। ঘটনার জেরে ২ নম্বর লাইনে ঘণ্টা দুয়েক ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। তবে, ১ ও ৩ নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন চলেছে।
কয়েক মাস আগে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তবে তা কেউ চাক্ষুষ করেননি। একটি লোকাল শিয়ালদহ স্টেশনে ঢোকার পরে ইঞ্জিনের প্যান্টোগ্রাফে জড়িয়ে থাকা এক ভবঘুরে ব্যক্তির মৃতদেহ মেলে। রেল পুলিশের অনুমান ছিল, ওই শাখার কোনও স্টেশন থেকে ওই ব্যক্তি ট্রেনের ছাদে উঠে ছিলেন। সেই ঘটনায় কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যায়নি।
কিন্তু এ দিন চুঁচুড়া স্টেশনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেলা সওয়া ১০টা বেজে যায়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা আরপিএফ এবং রেল পুলিশকে আরও সতর্ক, আরও তৎপর হতে বলেছি। যাতে এমন কাণ্ড কেউ ঘটাতে না-পারেন।’’
ব্যান্ডেল রেল পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘ওই মহিলা কখন ট্রেনের ছাদে ওঠেন, কেউ দেখেননি। ওঁকে নামানো সহজ ছিল না। দক্ষ বিদ্যুৎকর্মী না-আসা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব ছিল না। রেল পুলিশের কোনও ত্রুটি নেই।’’
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলাকে বেশির ভাগ সময়ে প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরেই দেখা যেত। এ দিন ট্রেনটি এলে কোনও ফাঁকে তিনি সামনের দিকের চতুর্থ কামরার ছাদে উঠে পড়েন। যাত্রীরা চিৎকার করে ওঠেন। তার মধ্যেই তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন। যাত্রীরা চালককে জানান। খবর যায় স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। আসে রেল পুলিশ। মহিলা একবার পড়ে যান। তার পরে কোনওমতে উঠে দু’টি কামরা টপকে সামনের ইঞ্জিন-কামরায় গিয়ে প্যান্টোগ্রাফে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে আসে দমকলের একটি ইঞ্জিন। পৌনে ৯টা নাগাদ রেলের বিদ্যুৎকর্মীরা এসে ওভারহেড তারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে দমকলকর্মীরা দেহ নামান।
কিন্তু তার আগেই দেরির কারণে যাত্রীরা রেলকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে দেন। ওঠে রেলকর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগও। নিত্যযাত্রীদের মধ্যে অয়ন গোস্বামী বলেন, ‘‘স্টেশনে নজরদারির অভাব এবং রেলের গাফিলতিতে এতবড় ঘটনা ঘটল। আমাদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হল।’’ অপরূপা সেন নামে আর এক যাত্রী বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষ একটু তৎপর হলেই এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy