Advertisement
E-Paper

অস্ত্র দেখিয়ে লুঠের চেষ্টা, গণপ্রহারের পরে গ্রেফতার

আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে একটি লোহার রডের গুদামে লুঠপাট করতে এসেছিল তিন দুষ্কৃতী। কিন্তু পালানোর সময়ে এলাকার লোকজন তাড়া করে দু’জনকে ধরে ফেলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
জনরোষ। বৃহস্পতিবার লিলুয়ায় ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।

জনরোষ। বৃহস্পতিবার লিলুয়ায় ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।

আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে একটি লোহার রডের গুদামে লুঠপাট করতে এসেছিল তিন দুষ্কৃতী। কিন্তু পালানোর সময়ে এলাকার লোকজন তাড়া করে দু’জনকে ধরে ফেলেন। তার পরে শুরু হয় বেধড়ক মার। এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাথির সঙ্গে লাঠি আর বাঁশ দিয়েও পেটানো হয় তাদের। শেষমেশ গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ওই দু’জনকে। ধৃতদের এক সঙ্গী অবশ্য আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পালিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়ার বেনারস রোডে। সাতসকালে এই লুঠপাটে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, জনতা কি এই ভাবে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে নৃশংস মারধর করতে পারে? পুলিশ জানিয়েছে, লুঠের মামলার পাশাপাশি দুষ্কৃতীদের মারধর করার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (উত্তর) স্বাতী ভাঙ্গারিয়া বলেন, ‘‘এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীদের আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া যেত। কিন্তু এ ভাবে মারধর করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, লিলুয়ার এল রোডে স্থানীয় বাসিন্দা মাখনলাল জায়সবালের একটি লোহার রডের দোকান ও গুদাম রয়েছে। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ তাঁর এক কর্মী দিলীপ পাণ্ডে দোকান খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিন যুবক সেখানে আসে। দোকানে তারা বিভিন্ন রডের দরদাম শুরু করে। এর মধ্যেই ওই যুবকেরা দিলীপের কাছে জানতে চায়, মালিক কখন আসবেন। দিলীপ বলেন, ‘‘মালিকের আসতে দেরি হবে শুনে ওরা তিন জনই বসে ছিল। কিন্তু কিছু‌ক্ষণ পরে দেখি ওদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র রয়েছে।’’ অভিযোগ, এর পরেই দিলীপের মাথায় ওয়ান শটার ও গলায় চপার ঠেকিয়ে ওই দুষ্কৃতীরা জানতে চায়, দোকানের টাকা কোথায় রয়েছে। দিলীপ কিছু বলতে না চাইলে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মাথায় মেরে তাঁর মোবাইল ও টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ওই তিন জন। ওই সময়েই মাখনবাবু দোকানে চলে আসেন। অভিযোগ, অস্ত্র দেখিয়ে তাঁর সোনার হার, আংটি, টাকার ব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। এর মধ্যেই চেঁচামেচি শুনে দোকানের বাইরে ভিড় জমতে শুরু করে। তা দেখে অস্ত্র নিয়েই পালানোর চেষ্টা করে ওই দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীদের হাতে অস্ত্র থাকায় ভয়ে কিছু বলতে পারেননি ভিড় করে থাকা লোকজন। ফলে বিনা বাধায় বেরিয়ে যায় তিন দুষ্কৃতী। কিছুটা যাওয়ার পরেই অবশ্য স্থানীয় লোকজন তাদের তাড়া করে এন রোডের কাছে ধরে ফেলেন। শুরু হয় গণধোলাই।

সেই সময় এক জন অবশ্য আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পালায়। ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে দু’জনকে ঘিরে ধরে জনতা। শুরু হয় এলোপাথাড়ি লাথি, চড়, ঘুষি। কেউ কেউ আবার লাঠি, বাঁশ দিয়েও পেটাতে থাকেন। নাক, মুখ, মাথা ফেটে যায় দুই দুষ্কৃতীর। এক সময় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে দু’জনই। অভিযোগ, তাতেও ক্ষান্ত হয়নি উন্মত্ত জনতা। নাক, কান, মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোলেও এক দুষ্কৃতীর মাথা পা দিয়ে চেপে ধরে এক জন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে লিলুয়া থানার পুলিশ। তারাই দু’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, গুরুতর জখম দুই দুষ্কৃতীকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু রাত পর্যন্ত পুলিশ তাদের জেরা করতে পারেনি। জানা যায়নি তাদের পরিচয়। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। কারা তাদের এমন নৃশংস ভাবে মারধর করল, তা নিয়েও খোঁজ চলছে।’’

দুষ্কৃতীদের মারধরের বিষয়টি সমর্থন করছেন না স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা হাওড়ার মেয়র পারিষদ ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি সে সময়ে এলাকায় ছিলাম না। থাকলে বাধা দিতাম।’’

Youth Beaten up
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy