Advertisement
E-Paper

চুঁচুড়া থেকে ঝাড়খণ্ডের বালক উদ্ধার

ঝাড়খণ্ডের বছর দশেকের ঋত্বিক কুমারও শুক্রবার পাকেচক্রে চুঁচুড়া হাসপাতালে পৌঁছে বাড়ি ফেরার জন্য উতলা হয়ে ওঠে। পুলিশের সাহায্যে শনিবার তার বাবা-মা’র কাছে ফিরে গেল ছেলেটি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৫

প্রায় দু’দিন অভুক্ত ছেলেটা আর পারছিল না।

কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। চোখ বুজে আসছিল। পেটে ব্যথাও শুরু হয়েছিল।

বাবা-মায়ের বকুনিতে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঝাড়খণ্ডের বছর দশেকের ঋত্বিক দু’দিনেই বুঝে গিয়েছে, বাইরের জগৎ বড় কঠিন। এখানে চাইলেও খাবার মেলে না। ঠিক যেমনটা বুঝেছিল ‘বাড়ী থেকে পালিয়ে’র আট বছরের কাঞ্চন। কলকাতার নানা কঠিন বাস্তবের সামনাসামনি হয়ে শেষমেশ ঋত্বিক ঘটকের ছবির কাঞ্চন ফিরে গিয়েছিল তার গ্রামের বাড়িতে। ঝাড়খণ্ডের বছর দশেকের ঋত্বিক কুমারও শুক্রবার পাকেচক্রে চুঁচুড়া হাসপাতালে পৌঁছে বাড়ি ফেরার জন্য উতলা হয়ে ওঠে। পুলিশের সাহায্যে শনিবার তার বাবা-মা’র কাছে ফিরে গেল ছেলেটি।

ঋত্বিকের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের পিলপাহাড় এলাকায়। তার বাবা বাবলু নোনিয়া দিনমজুরের কাজ করেন। মা পিঙ্কিদেবী পরিচারিকার। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় ঋত্বিকই। এ বছর চতুর্থ শ্রেণিতে ওঠার পরে সে পড়া ছেড়ে কাজ শুরু করতে চায়। কিন্তু তার বাবা-মা মানেননি। এ জন্য তাকে বকাঝকা করায় অভিমানে বুধবার বিকেলে বাড়ি ছাড়ে ছেলেটি।

পুলিশকে ঋত্বিক জানিয়েছে, পকেটে টাকা-পয়সা না-থাকায় সে হেঁটেই স্টেশনে পৌঁছয়। ট্রেন ধরে বৃহস্পতিবার সকালে এসে পৌঁছয় হাওড়ায়। খিদে পাওয়ায় সে ট্রেনের কয়েক জনের কাছে খাবার চেয়েছিল। কিন্তু এক জন তাকে শুধু একটি রুটি দেয়। তাতে তার পেট ভরেনি। হাওড়া থেকে সে গিয়ে পৌঁছয় নৈহাটি। রাতটা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেই কাটায় সে। শুক্রবার সকালে ফের ট্রেন ধরে হুগলিঘাট স্টেশনে নামে। তার পরে হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে।

হাসপাতালে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে এক রোগীর আত্মীয়ের মোবাইল পড়ে থাকতে দেখে সে কৌতূহলে তোলে। ওই ব্যক্তি চিৎকারে পুলিশ আসে। পুলিশকে সব কথা জানায় ছেলেটি। প্রথমেই ছেলেটি তার খিদে পাওয়ার কথা বলে। পুলিশ তাকে চকোলেট, বিস্কুট দেয়। শনিবার বাড়ি ফেরার আগেও সে মাছ-ভাত খেয়েছে। চুঁচুড়া থানায় দাঁড়িয়ে ছেলেটি বলে, ‘‘কেউ খেতে দেয়নি। ভাবলাম বাড়ি ফিরে যাই। পুলিশকাকুদের সব বললাম।’’

ঠিকানা জানার পরেই চন্দননগর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শনিবার ঋত্বিকের বাবা-মা চুঁচুড়ায় আসেন। পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘ছেলেটি আমাদের না-জানালে বড় বিপদ হতে পারত। দু’দিন ধরে খেতে না পেয়ে কাহিল হয়ে গিয়েছিল।’’

হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন পিঙ্কিদেবী। তিনি বলেন, ‘‘বকাবকি করায় ছেলেটা ঘর ছেড়েছিল। ভেবেছিলাম পেটে টান পড়লেই বাড়ি ফিরবে। কিন্তু ও যে এতদূর চলে আসবে কে জানত!’’ বাবা-মায়ের বকাবকিতে খুদে-কিশোরদের ঘরছাড়া নতুন নয়। মনোবিদ সোমশুভ্র চট্ট্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অনেক সময় বড়দের বকাবকিতে ছোটদের মধ্যে একটা জেদ তৈরি হয়। এই ঘটনার নেপথ্যে হয়তো সেই বিষয়টিই কাজ করছে।’’

এ দিন মায়ের কাছে ফিরতে পেরে ঋত্বিকও প্রথমে কেঁদে ফেলে। তারপর থেকে আর মায়ের হাত ছাড়েনি।

Missing Recovered Jharkhand Chinsurah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy