Advertisement
E-Paper

মশা তাড়াতে রোগীর শয্যার পাশে ধূপ

শ্রীরামপুর মহকুমায় ডেঙ্গি ‘মহামারি’ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্যভবন। জেলার হাসপাতালগুলিতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। পরিষেবা নিয়ে উঠছে নানা অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালগুলিতে পরিচ্ছন্নতার বহর কেমন, তা দেখল আনন্দবাজার।মূল গেটের সামনে গোড়ালি ডোবা নোংরা জল। তার মধ্যে দিয়েই এখন ঢুকতে হচ্ছে হাসপাতালে। বেলা ১১টাতেও ঝাঁট পড়ে না বেশিরভাগ দিন। ফিনাইল বা ব্লিচিং পাউডার দূরঅস্ত্! বহির্বিভাগের দেওয়াল জুড়ে পানের পিক। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দেন রোগীরা। হাসপাতাল চত্বর ঝোপঝাড়ে ভর্তি। সেখানে মশার নিশ্চিন্ত আস্তানা।

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:২২
(বাঁ দিকে) এমনই ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা হাসপাতাল চত্বর। (ডান দিকে) জ্বলছে মশা মারার ধূপ। —নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিকে) এমনই ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা হাসপাতাল চত্বর। (ডান দিকে) জ্বলছে মশা মারার ধূপ। —নিজস্ব চিত্র।

মূল গেটের সামনে গোড়ালি ডোবা নোংরা জল। তার মধ্যে দিয়েই এখন ঢুকতে হচ্ছে হাসপাতালে। বেলা ১১টাতেও ঝাঁট পড়ে না বেশিরভাগ দিন। ফিনাইল বা ব্লিচিং পাউডার দূরঅস্ত্! বহির্বিভাগের দেওয়াল জুড়ে পানের পিক। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দেন রোগীরা। হাসপাতাল চত্বর ঝোপঝাড়ে ভর্তি। সেখানে মশার নিশ্চিন্ত আস্তানা।

জেলার নানা প্রান্তে জ্বর হানা দিচ্ছে। শ্রীরামপুরে বহু মানুষ ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উপরে জোর দেওয়ার কথা বলছে প্রশাসন। কিন্তু পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালের এখন এমনই দশা। ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের ভরসা এই হাসপাতাল। অথচ পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই সাধারণ মানুষের। পরিকাঠামোর ঘাটতি আর পরিচ্ছন্নতার অভাবে ভোগা এই হাসপাতালেরই যেন চিকিৎসার প্রয়োজন! ব্লক জুড়ে মশা নিধনে পদক্ষেপ করা হলেও মশার আঁতুরঘর হাসপাতাল চত্বর কবে পরিষ্কার হবে, সেটাই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

বিএমওএইচ শঙ্করনারায়ণ সরকার সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেই মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। এই ব্লকে কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত হননি। তবুও মশা নিধন করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং সচেতনতা ছড়ানোর জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরেই ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের প্রধানকে নিয়ে আলোচনায় বসেন বিএমওএইচ।

পান্ডুয়ায় জি টি রোডের ধারে ৮ বিঘা জমির উপর এই হাসপাতাল। রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিদিন গড়ে ছ’শো রোগী আসেন বহির্বিভাগে। অন্তর্বিভাগে শয্যা রয়েছে ৩০টি। যদিও রোগী থাকেন অনেক বেশি। ফলে, অনেকেরই জায়গা হয় মেঝেতে। এই বিপুল রোগীর চাপ সামলানোর জন্য আছেন সাকুল্যে ৪ জন চিকিৎসক এবং ৮ জন নার্স। হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স নেই। নেই ব্লাড-ব্যাঙ্ক। অভিযোগ, রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলেই পত্রপাঠ চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল বা কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়।

হাসপাতাল চত্বরে পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই বলে ক্ষোভ রয়েছে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের। বহির্বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগের দেওয়াল পানের পিকে ভর্তি। ফিনাইলের বালাই নেই। নেই ব্লিচিং পাউডারের চিহ্ন। হাসপাতালের চৌহদ্দিতে আবর্জনার স্তূপ। আইসোলেশন ওয়ার্ডের পিছনে জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় অন্তর্বিভাগে রোগীর শয্যার পাশে মশা মারার ধূপ এবং হাত পাখা নিয়ে সজাগ থাকতে হয় আত্মীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, ঝোপজঙ্গল সাফাইয়ের কথা বললেই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, এ জন্য পর্যাপ্ত টাকা নেই। হাসপাতালের শৌচাগারও কার্যত ব্যবহারের অযোগ্য। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার এড়াতে অনেকেই ঝোপের আড়াল খোঁজেন। হাসপাতালের সেপটিক ট্যাঙ্কে ঢাকনা নেই। নর্দমাগুলিও অপরিষ্কার। এই সব জায়গা মশার ডিম পাড়ার আদর্শ জায়গা, এমনটাই অভিযোগ। প্রধান ফটকের সামনে পানীয় জলের কল আছে। তাও অপরিষ্কার।

বিএমওএইচের হাসপাতাল চত্বরেই থাকার কথা। কিন্তু পান্ডুয়া হাসপাতালে বিএমওএইচের আবাসন নেই। তাঁর অফিসের ছাদের চাঙর খসে পড়ছে। ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে জরুরি কিছু কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। স্বাস্থ্যকর্তার অফিসেরই যেখানে এই হাল, সেখানে হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি কী ভাবে হবে, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা।

dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy