শোকস্তব্ধ: হাওড়ায় রাজন কুমারের বাড়ির সামনে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
বাইরে থেকে ঝুলছে তালা। কিন্তু রোজকার মতোই ইংরেজি আর হিন্দি খবরের কাগজ দু’টো বারান্দায় ফেলে দিয়ে গিয়েছেন কাগজওয়ালা। বারান্দার কোণে রাখা অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছেরা খেলে বেড়াচ্ছে এখনও। এক পাশে দাঁড়িয়ে খুদে গোলাপি সাইকেল।
সব আগের মতোই আছে। কিন্তু আসলে, কিছুই আগের মতো নেই। কারণ, এই কাগজ-সাইকেল-মাছেদের কাছে কখনও ফিরবে না বাড়ির বাসিন্দাদের স্পর্শ। বুধবার সকালেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁরা সকলে।
খবর পাওয়ার পরেই হাওড়ার গোলমোহর কলোনির ১৭৮ নম্বর কোয়ার্টার্সের সামনে ভিড় ভেঙে পড়ে পড়শিদের। এই বাড়ি থেকেই এ দিন ভোর ছ’টায় সদ্য কেনা নতুন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন সাত জন। বাবা-মা, ছেলে-বৌমা, তিন নাতি-নাতনি মিলে হইহই করে যাচ্ছিলেন বিহারের ভোজপুরে। পড়শিরা জানান, যাওয়ার পথে ধানবাদের কোনও এক মন্দিরে নতুন গাড়িটির পুজো করানোর কথা ছিল তাঁদের। রেলপুলিশের কর্তা, মৃত রাজন কুমারের বাড়ি সেখানেই।
রাজনের ফুটফুটে তিন সন্তান ঋত্বিকা (১৩), অন্বেষা (৮) এবং আরভ (৬)-এর ছটফট করে খেলে বেড়ানোর কথা ভুলতে পারছেন না কেউ। রাজনের ঠিক উপরের তলার প্রতিবেশী সুমনা জানালেন, এই দোলের দিনও সকলে একসঙ্গে রং মেখে ভূত হয়ে ছবি তুলেছিলেন তাঁরা। পাশের কোয়ার্টার্সের মেনকা মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, রাজনের বাবাও দিল্লিতে কর্মরত পদস্থ রেলকর্তা। চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য মাস দুয়েক হল ছেলের কাছে এসেছিলেন তিনি। এ দিন গাড়িটা তিনিই চালাচ্ছিলেন।
প্রতিবেশীরা জানান, রোজ সকালে ছুটে গিয়ে স্কুলের গাড়িতে উঠত রাজনের দুই মেয়ে। সবচেয়ে ছোট ছেলেটি পড়ত লিলুয়া ডন বস্কো -স্কুলে। ছটফটে বাচ্চাগুলোর কথা মনে পড়তেই শোক যেন আর বাঁধ মানছে না তাঁদের।
স্থানীয়রা জানালেন, রাজন কুমারের পরিবার বছর দুয়েক হল এখানে এসেছে। সকলেই একবাক্যে বলছেন, হাসিখুশি, খোলা মনের পরিবারটি খুব কম দিনেই সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছিল। ‘‘ক’দিন আগে আমার ডেঙ্গি হয়েছিল, রাজনবাবুর স্ত্রী নিয়মিত এসে খোঁজ নিয়ে যেতেন,’’ ভারী গলায় বলেন মেনকাদেবী।
নতুন কেনা ছাই রঙের গাড়িটা পরশুই প্রথম দেখেন প্রতিবেশীরা। ‘‘গাড়িটাকে ঘিরেই সারা ক্ষণ খেলছিল বাচ্চাগুলো। কে জানে, এই গাড়িতেই...,’’ গলা বুজে আসে সুমনার। নতুন গাড়ির আনন্দ যে দু’দিনের মধ্যে মৃত্যুর হাহাকারে বদলে যাবে, ভাবতে পারেননি কেউই। তাই প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘‘গাড়িটা কপালে সইল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy