তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা। মাঝখান দিয়ে গিয়েছে জাতীয় সড়ক। দুর্ঘটনা তো লেগেই রয়েছে। খুন-ডাকাতি-ছিনতাইও নেহাত কম নয়।
বাড়তে থাকা অপরাধের মোকাবিলায় ডোমজু়ড়ের বাঁকড়া পঞ্চায়েত এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পের পরিবর্তে একটি থানার দাবি গ্রামবাসীরা তুলছিলেন বেশ কিছু দিন ধরেই। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাঁদের যে কালঘাম ছুটছে, সে কথা মানেন ক্যাম্পের পুলিশকর্মীরাও। তাই বছর কয়েক আগে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় থানা তৈরির প্রস্তাব নেয় জেলা পুলিশ। সেই থানার জন্য জমি বাছা হল সলপ উড়ালপুলের নীচে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকড়া পঞ্চায়েত এলাকাটি বর্তমানে ডোমজু়ড় থানার আওতায়। ওই থানার চাপ কমাতেই সলপ এবং সংলগ্ন বাঁকড়ার মোট ৫টি পঞ্চায়েত এবং মাকড়দহ-২ ও মহিয়াড়ি-২ পঞ্চায়েতকে নিয়ে সলপ থানা তৈরির প্রস্তাব কয়েক বছর আগেই নেওয়া হয়। সম্প্রতি সলপ উড়ালপুলের নীচে কেএমডিএ-র একটি জমি বাছা হয় ওই থানার জন্য। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘‘বাঁকড়া ফাঁড়িকে আলাদা করে থানায় উন্নীত করায় সমস্যা রয়েছে। নতুন থানার জন্য যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি বাঁকড়া পঞ্চায়েত এলাকাতেই পড়ে। থানা হলে ওই এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে বলেই মনে হয়।’’
তবে, নতুন থানার কাজ কবে শুরু হবে, সে নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও মন্তব্য করেননি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন। তিনি বলেন, ‘‘জেলার বেশ কয়েকটি বড় থানাকে ভেঙে ছোট থানা গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। তার মধ্যে ডোমজু়ড়ও রয়েছে।’’
মোট ১৮টি পঞ্চায়েত এবং হাওড়া পুরসভার কিছু এলাকা ডোমজুড় থানার অন্তর্গত। থানা থেকে বাঁকড়া অন্তত ৮ কিলোমিটার দূরে। দূরত্বের কারণে বাঁকড়ায় কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ বহু ক্ষেত্রে সময়মতো না পৌঁছনোয় এক সময়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বাড়ছিল। সমস্যা মেটাতে বাঁকড়া মিশ্রপাড়া এলাকায় ২০০১ সালে পুলিশ ক্যাম্পটি তৈরি হয়। টালির চালের ঘরে কয়েক জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে শুরু হয় কাজ। ২০০৫ সালে বাঁকড়া পুলিশ ক্যাম্পের নতুন বাড়ি তৈরি হয়। একজন সাব ইনস্পেক্টরকে (এসআই) ক্যাম্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সেই বাড়ির সামনের সাইনবোর্ডে ‘বাঁকড়া ওপি (আউট পোস্ট)’ লেখা থাকলেও পুলিশের খাতায় এটি এখনও একটি ক্যাম্প। বর্তমানে সেখানে এক জন এসআই, দু’জন এএসআই, ১৪ জন কনস্টেবল, সাত জন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ৩ জন ভিলেজ পুলিশ কাজ করেন
ওই ক্যাম্প সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রতি দিন গড়ে ২টি এফআইআর হয়। জেলা পুলিশের খাতায় বাঁকড়া এলাকাটি ‘ঘটনাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত। গত তিন মাসে ১০০টির বেশি এফআইআর হয়েছে। সাধারণ ডায়েরির সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে বাঁকড়া কবর পাড়ায় যুবক খুন হয়েছিলেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চুরি ও ডাকাতিও উদ্বেগ বাড়িয়েছে পুলিশের। তার মধ্যে রয়েছে পুলিশ সেজে ডাকাতিও। কিন্তু গোটা এলাকা সামলানোর জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি গাড়ি ও একটি মোটরবাইক। পরিকাঠামো যা রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে ক্যাম্পের পুলিশকর্মীদের দাবি। বাঁকড়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান আখতার হোসেন মোল্লা (ভুলন) বলেন, ‘‘বাঁকড়া পুলিশ ক্যাম্পে কোনও অভিযোগ হলে সেটা প্রথমে ডোমজুড় থানায় যায়। ফলে, অনেক সময় চলে যায়। এলাকায় আলাদা থানা হলে এই সমস্যা থাকবে না। আমরা পঞ্চায়েতগত ভাবে বিষয়টি জেলা পুলিশে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy