Advertisement
E-Paper

অরক্ষিত পড়ে হাওড়ার এটিএম

গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, এটিএম থেকেই কোনও ভাবে ‘স্কিমিং’ করে হ্যাকারেরা টাকা আত্মসাৎ করছে। যে সমস্ত এটিএম থেকে এই টাকা চুরি চলছে বলে অভিযোগ, সেগুলির অধিকাংশই অরক্ষিত। সিংহভাগ এটিএম কাউন্টারেই নিরাপত্তারক্ষীর কোনও বালাই নেই। আজ নজরে হাওড়া।গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, এটিএম থেকেই কোনও ভাবে ‘স্কিমিং’ করে হ্যাকারেরা টাকা আত্মসাৎ করছে। যে সমস্ত এটিএম থেকে এই টাকা চুরি চলছে বলে অভিযোগ, সেগুলির অধিকাংশই অরক্ষিত। সিংহভাগ এটিএম কাউন্টারেই নিরাপত্তারক্ষীর কোনও বালাই নেই। আজ নজরে হাওড়া।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:২১
নজরে: নিরাপত্তারক্ষী নেই কাউন্টারে। উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা।

নজরে: নিরাপত্তারক্ষী নেই কাউন্টারে। উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা।

কলকাতায় তো বটেই, এক সপ্তাহ আগে লিলুয়া থানা এলাকার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দু’টো এটিএম থেকে লুট হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। তবে গ্রামীণ হাওড়ায় এটিএমে চুরির অভিযোগ এখনও আসেনি বলে দাবি পুলিশের। ফলে গ্রামীণ হাও়ড়ার বিভিন্ন এটিএমে না রয়েছে রক্ষীর কড়াকড়ি, না রয়েছে নজরদারি ক্যামেরা। আর এর সঙ্গে নিয়ম ভাঙা গ্রাহকরা তো রয়েছেনই। সোমবার গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান, কুলগাছিয়া, উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন এটিএম ঘুরে দেখা গেল এমনই ছবি।

তবে নজরদারিতে ঘাটতি অবশ্য মানতে নারাজ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, কোনও অভিযোগ না এলেও তাঁরা এ বিষয়ে খুবই জোর দিচ্ছেন। পুলিশের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলার ১২টি থানা এলাকায় যতগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক রয়েছে সকলের সঙ্গে বৈঠক করে কাউন্টারগুলিতে রক্ষী রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে প্রতিটি এটিএম কাউন্টারে সিসি ক্যামেরা এবং অ্যালার্মের ব্যবস্থা রয়েছে কি না সে বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি চালানোর কথাও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলিকে জানানো হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, বছরখানেক আগে কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তা এবং পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। সেখানে পুলিশের তরফে সব এটিএম কাউন্টারগুলিতে রক্ষী রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছিলেন অধিকাংশ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই। তাঁদের পাল্টা দাবি ছিল, সব এটিএম কাউন্টারে রক্ষী রাখার প্রয়োজন নেই। বাছাই করা এটিএম কাউন্টারগুলিতেই রক্ষী বসালেই সমস্যা মিটে যাবে।

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেয়। বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা আধিকারিক এবং পুলিশ যুগ্ম ভাবে বিভিন্ন এলাকার এটিএম কাউন্টারগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবে। যে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সমস্যা রয়েছে, সেখানকার এটিএম কাউন্টারেই নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হবে। তবে প্রতিটি এটিএম কাউন্টারে সিসি ক্যামেরা এবং অ্যালার্ম ব্যবস্থা রাখার কথা জানিয়ে দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

এত কিছুর পরেও হাওড়া গ্রামীণের অধিকাংশ এটিএম কাউন্টারের নিয়ম মানার বালাই নেই। আন্দুল বাজারে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গোটা চারেক এটিএম কাউন্টার রয়েছে। অথচ সেখানে একটাতেও সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক করে কাজ করে না। এটিএমে যেখানে একজন ঢোকার কথা, সেখানে ভিতরে ঢুকে অপেক্ষা করতে থাকেন আরও কয়েকজন। বাগনান বাসস্ট্যান্ডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রক্ষীবিহীন কাউন্টারে একইসঙ্গে ঢুকে পড়েছেন একাধিক গ্রাহক। একজন যখন টাকা তুলছেন, পিছনে দাঁড়িয়েই অন্য জন সব কিছু দেখছেন। এই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, এখানে গ্রাহকরা কোনও অভিযোগ করেননি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থাটি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইড লাইন এবং পুলিশের পরামর্শ মেনে ফের পর্যালোচনা করা হবে বলে এই ব্যাঙ্কের এক কর্তা জানান।

হাওড়ার জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার লাকি ভাগনানি বলেন, ‘‘প্রতিটি ব্যাঙ্ককে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই গাইডলাইন মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। যে সব এলাকা ব্যবসায়িক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে সেখানেও এটিএম কাউন্টারে নিরাপত্তারক্ষী বহাল করার কথা বলা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে। প্রয়োজনে তারা দিনের বেলা এটিএম কাউন্টার খুলে রাখতে পারে। রাতে বন্ধ করে দেবে। তবে যখন খোলা থাকবে তখন নিরাপত্তারক্ষী অবশ্যই বহাল রাখতে হবে।’’ এই নিয়মেই এটিএম কাউন্টারগুলি চলছে বলে লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানান।

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, কলকাতা আর হাওড়া শহরের এটিএম লুটের পর বাছাবাছির কিছু নেই। প্রতি কাউন্টারে নিরাপত্তারক্ষী বহাল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, অনেক কাউন্টারে সিসি ক্যামেরা বিকল হয়ে গিয়েছে। সেগুলি দ্রুত মেরামত করার কথা বলা হয়েছে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে। লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, সিসি ক্যামেরা বিকল হলে যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তার দায় কিন্তু নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকেই।

তবে নিয়ম থেকে যায় নিয়মের জায়গাতেই। আর তা মানা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ATM এটিএম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy