Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সরকারি হাসপাতাল ঘুরে মিলল না চিকিৎসা, জ্বরে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু

জ্বরে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করাতে একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ঘুরতে হল তার পরিবারকে। সব জায়গাতেই শয্যার অভাব। শেষ পর্যন্ত পরিবারের লোকেরা তাকে ভর্তি করেন একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় শিশুটি।

প্রকাশ পাল
বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

জ্বরে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করাতে একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ঘুরতে হল তার পরিবারকে। সব জায়গাতেই শয্যার অভাব। শেষ পর্যন্ত পরিবারের লোকেরা তাকে ভর্তি করেন একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় শিশুটি।

হুগলির বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়ার বাসিন্দা শেখ সাফিকের (৬) এমন মৃত্যু ফের সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘জ্বর হয়েছিল সাফিকের। ঘটনা হচ্ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকলে চিকিৎসক কী করবেন! পরিকাঠামোর অভাবেই একরত্তি ছেলেটা এ ভাবে মারা গেল। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

পরিবার সূত্রে খবর, গত ৩ অগস্ট রাতে সাফিকের জ্বর আসে। বৃহস্পতিবার সকালে বরাবাজারে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেন। কিন্তু জ্বর কমেনি। রাতে চিকিৎসক সাফিকের রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। শুক্রবার সকালে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। শনিবার সকালে রিপোর্ট হাতে পান চিকিৎসক। তাতে ডেঙ্গির প্রমাণ মেলেনি। প্লেটলেটও পর্যাপ্ত ছিল। যদিও জ্বর না কমায় চিকিৎসক সাফিককে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।

সমস্যার শুরু এখানেই। সাফিকের দাদু মহম্মদ কাদের জানান, নাতিকে নিয়ে তাঁরা চন্দননগর মহকুমা হাসপাতলে যান। সেখানে বলা হয়, বেড নেই। তখন সাফিককে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি নেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থা জটিল থাকায় কলকাতা মেডিক্যাল ক‌লেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মেডিক্যাল ক‌লেজ হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি নিতে চাওয়া হয়নি। এর পর তাঁরা স্থানীয় (চাঁপদানি) বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের দ্বারস্থ হন। তাঁর হস্তক্ষেপে সাফিককে ভর্তি নেওয়া হলেও পরে জানানো হয়, শিশুটিকে আইসিইউতে রাখতে হবে। কিন্তু সেখানে জায়গা নেই। এর পরে তাঁরা এনআরএস এবং বিসি রায় শিশু হাসপাতালে যান। কিন্তু দুই জায়গাতেই ‘বেড নেই’ বলা হয়। বাধ্য হয়ে তাঁরা বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাকে পদ্মপুকুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। ততক্ষণে নাতির শরীরে খিঁচুনি ধরেছে। সে নেতিয়ে পড়ে। রাত আটটা নাগাদ ওই নার্সিংহোমেই সাফিক মারা যায়।

নার্সিংহোমের চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিখেছেন, ‘সিভিয়ার সেপসিস উইথ শক’ (সংক্রমণে শারীরিক অবনতি)। সাফিকের কাকা সেখ নজরুল ইসলামের দাবি, ‘‘জ্বরেই সাফিক মারা গিয়েছে। অন্য কোনও অসুখ ওর ছিল না। চিকিৎসা পেতে এ ভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘুরতে হবে ভাবিনি।’’ কাদেরের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পেলে নাতিটা মারা যেত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE