Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মৈত্রীপথের জঞ্জাল সরল না কেন, প্রশ্ন বিরোধীদের

ঝুলিভর্তি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রিষড়া পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল পুরবোর্ড। কিছু দিন পর কংগ্রেস কাউন্সিলারদের দলে টেনে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তৃণমূল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিশ্রুতি পালনের দায়িত্ব বর্তেছিল তাদের উপর। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে কতটা সফল তৃণমূলের পুরবোর্ড। কতটা পালিত হয়েছে সেই সব প্রতিশ্রুতি ?

রাস্তার ধারে এ ভাবেই জমে থাকে জঞ্জালের পাহাড়।—নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার ধারে এ ভাবেই জমে থাকে জঞ্জালের পাহাড়।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
রিষড়া শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩০
Share: Save:

ঝুলিভর্তি প্রতিশ্রুতি দিয়ে রিষড়া পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল পুরবোর্ড। কিছু দিন পর কংগ্রেস কাউন্সিলারদের দলে টেনে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় তৃণমূল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিশ্রুতি পালনের দায়িত্ব বর্তেছিল তাদের উপর। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে কতটা সফল তৃণমূলের পুরবোর্ড। কতটা পালিত হয়েছে সেই সব প্রতিশ্রুতি ?

শাসক দলের অবশ্য যুক্তি, প্রভূত উন্নতি হয়েছে শহরের। যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীদের অভিযোগ, অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও পুরসভা কাজের কাজ বিশেষ করেনি। বদলে দুর্নীতি হয়েছে। এই অবস্থায় শাসক-বিরোধী তরজা নিয়েই আরও একটা পুরভোটের মুখে হুগলির এই শহর।

আগের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৯টি আসন। তৃণমূল ৮টি। মাঝপথে বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের হাত ধরে কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলার দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তাতে এক দিকে কংগ্রেস সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে, অন্য দিকে পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউয়ের পদ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত পদ ধরে রাখতে তিনি এবং আরও ৪ জন কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। পদ বহাল থাকে শঙ্করপ্রসাদের।

বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘খুঁটি’ ধরে নিজের পদ ধরে রাখতে পারলেও শঙ্করবাবু কিন্তু পুরপ্রধান হিসেবে আদৌ ‘পাশ মার্ক’ পাবেন না। রেল স্টেশনের পাশেই মৈত্রীপথের এক প্রান্তে বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে চুঁচুড়া এবং হাওড়ার বাস ছাড়ে। অন্য যানবাহনও দাঁড়ায় ওই চত্বরে। বাসস্ট্যান্ডের ধার ঘেঁষেই জমে থাকা আবর্জনার পাহাড়। শহরের সমস্ত আবর্জনা ফেলার জায়গা। নোংরার মধ্যে চরে বেড়াচ্ছে শুয়োর। পাশেই বস্তি। পুরবাসীর অভিযোগ, বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্য বা পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আদৌ ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর দুর্গন্ধে নিত্যযাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। আবর্জনা আর জল মিশে দুর্বিষহ অবস্থা হয় বাসস্ট্যান্ডের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ওই জায়গা থেকে জঞ্জাল সরানোর জন্য আন্দোলনে পর্যন্ত নেমেছিলেন বাসমালিকরা। বস্তুত, শহরের এই অংশে চোখ পড়লে, পুর পরিষেবার যে ছবিটা নজরে আসে, তা মোটেই আদর্শ পুরসভার বিজ্ঞাপন নয়।

পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সুকুমার গড়গড়ি (এ বার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী) বলেন, ‘‘বাম পুরবোর্ড মৈত্রীপথ নামে রাস্তা তৈরি করেছিল। তৃণমূলের পুরবোর্ড রাস্তাটা কার্যত শেষ করে দিয়েছে। আবর্জনার স্তূপ তো রয়েইছে, কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপনের জন্য ডাম্পিং স্টেশনও তৈরি হচ্ছে এখানে।’’ যদিও বিদায়ী পুরপ্রধানের যুক্তি, ‘‘দীর্ঘাঙ্গিতে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প চালু হলেই এই সমস্যা মিটে যাবে। আবর্জনা পড়ে থাকবে না, দূষণও থাকবে না।’’

২২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সাবির আলির অভিযোগ, শহরের নিকাশির এখনও উন্নতি হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই রেললাইনের পশ্চিম পাড়ে জল জমে। কেন্দ্রের টাকায় পূর্বপাড়ের নর্দমা করা হয়েছে। পশ্চিমে দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা থেকে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘লেভেল ক্রসিংয়ের গেট পড়লে যানজটে নাকাল হতে হয়। সাবওয়ে তৈরি হবে বলে ওরা কম প্রচার করেনি। অথচ এখনও তা হল না! ওরা প্রচারে যতটা এগিয়ে, পরিষেবায় ততটাই পিছিয়ে।’’ কংগ্রেসের একমাত্র বিদায়ী কাউন্সিলর ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ব্রহ্মদেও রবিদাসও সোচ্চার পুরসভার অনুন্নয়ন নিয়ে।

পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল বিজয় মিশ্র এবং সুভাষ দে এ সব অভিযোগে কান দিতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছরে রাস্তাঘাট, আলো-সহ অন্যান্য পরিষেবার কতটা উন্নতি হয়েছে, প্রতিটা মানুষ জানেন।’’

বিদায়ী পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘ওরা সেবাসদন হাসপাতালের অবস্থা খারাপ করে ছেড়েছিল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে সেখানে পরিষেবা ঢেলে সাজার চেষ্টা করছি। নতুন করে ক্লিনিক্যাল লাইসেন্স পাওয়া গিয়েছে। পুরসভার কর্মীরা মাসের নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পাচ্ছেন। এ সব বিরোধীগের চোখে পড়ছে না?’’

ভোটের প্রচারে এ হেন শাসক-বিরোধী তরজা এখন দিন-রাত শুনতে হচ্ছে এলাকার মানুষকে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে পুর পরিষেবা তাঁদের কতটা সন্তুষ্ট করেছে তা বোঝার জন্য শাসকদলকে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৬টা দিন। কারণ ২৮ এপ্রিল ভোট গণনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE