শেষযাত্রায়: দেহ নিয়ে শহর পরিক্রমণ দলীয় কর্মীদের। ছবি: তাপস ঘোষ
রাস্তার মধ্যে পরপর পাঁচটি গুলিতে যে ভাবে ভদ্রেশ্বরের ডাকাবুকো পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুন হলেন, তাতে হুগলির কয়েকজন পুরপ্রধানের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল।
উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া বা ডানকুনি, তারকেশ্বর, আরামবাগ মিলিয়ে জেলার ১৩টি পুরসভাই এখন তৃণমূলের দখলে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তাই বলছেন, ‘‘কয়েকজন পুরপ্রধানের নিরাপত্তা কিন্তু প্রশ্নের মুখে। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে। আমরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছি তাঁদের। কিন্তু অনেকেই বাড়িতে বা দলীয় কার্যালয়ে তাঁদের বসিয়ে রাখছেন। এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে।’’ ভদ্রেশ্বরের পরে আর কারও সেই ভুল করা উচিত নয়, এমন সতর্কবার্তাও শুনিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।
কিন্তু কেন?
পুলিশের একাংশ এবং তৃণমূল নেতাদের অনেকেও মানছেন, যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বলছেন, যে ভাবে সিন্ডিকেট বা তোলাবাজির বিরুদ্ধে তিনি কড়া অবস্থান নিয়েছেন, তাতে পুরপ্রধানদেরও অনেককে কঠোর হতে হচ্ছে। তাতেই তাঁরা অনেকর চক্ষুশূল হচ্ছেন। আর মনোজ খুনের পরে জেলার কিছু পুরপ্রধান রীতিমতো হাড়কাঁপানো আতঙ্কে রয়েছেন।
পুকুর বোজানো হোক বা কোনও বেআইনি নির্মাণের নকশা অনুমোদন বা প্রোমোটারের অনিয়মের সামনে চোখ বুজে থাকার চাপ— সবেতেই কিন্তু শেষ বিচারে দায় পুরপ্রধানদেরই। তাই চন্দননগর কমিশনারেটের কর্তা থেকে জেলার গ্রামীণ পুলিশের কর্তারা ইতিমধ্যেই সতর্কবাণী শুনিয়েছেন পুরপ্রধানদের।
উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, চন্দননগরে এখন প্রোমোটারদের রমরমা। রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা বা দুষ্কৃতীদের আর্থিক দায় মেটাতে প্রোমোটারেরা এখন রীতিমতো চাপে। উত্তরপাড়ার মাখলার এক প্রোমোটার দুষ্কৃতীর দাবিমতো টাকা দিতে না-চাওয়ায় সরাসরি তাঁর প্রকল্প-অফিসে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা।
তদন্তকারী অফিসাররা জানান, দুষ্কৃতীরা একটি দামি গাড়িতে ট্রাকের নাম্বার প্লেট লাগিয়ে সেখানে হামলা চালিয়েছিল। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে। উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘মনোজের অপরাধ কী ছিল? পুরপ্রধানেরা তো কত সময় কত অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সবাইকে সন্দেহ করা যায়? পুলিশ কর্তারা সতর্ক হতে বলছেন। কিন্তু যারা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রমাগত কাজ করে চলেছে, তাদের কোন ছাঁকনিতে আটকানো যাবে?’’
পুলিশের একাংশের মতে, তাদের কাজেও অযথা হস্তক্ষেপ চলছে। যা পুরো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এতে দুষ্কৃতীদের পোয়া বারো। উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁরা জানান, সম্প্রতি কোন্নগরে এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে একটি ফোন পেয়ে পুলিশ ধৃতকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর আর পুলিশের মুখ থাকে? কোন্নগরের পাড়ঘাট এবং রিষড়া, চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া পুরসভার নানা বিষয় নিয়েও কিন্তু শাসকদলের অন্দরে তীব্র মতভেদ আছে বলে পুলিশ প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট খবর রয়েছে।
কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘কয়েকজন পুরপ্রধানের উপর যে কোনও সময় আঘাত আসতে পারে। বারে বারেই বলা হচ্ছে, গোলমাল মেটাতে। দুষ্কৃতীদের মাথাদের আমরা জেলে ভরেছি। কিন্তু এখন অনেক অল্পবয়স্ক ছেলেরা টাকার জন্য নানা অপরাধে সামিল হচ্ছে যাদের অনেকের নাম পুলিশের খাতায় আদৌ নেই। তাদের নিয়েই আমাদের চিন্তিত। এর পিছনে নেতাদেরও হাত রয়েছে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অনেক ঘাম-রক্তের বিনিময়ে আমরা সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করেছি। দলের যে সব নেতা নিজেদের স্বার্থে সব ভুলছেন, তাঁদের কিন্তু কর্মীরা ক্ষমা করবেন না। বিশ্বাস তো শুধু পুলিশ দিয়ে ফেরানো যায় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy