Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জঞ্জাল-বেহাল নিকাশিতে নাজেহাল শহর

সুইমিং পুল, বোট ক্লাব, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, শিশু উদ্যান— আধুনিক শহুরে জীবনযাপনের নানা অভিজ্ঞান আরামবাগ শহরে হাজির হয়েছিল সেই বাম আমলেই।

সাফ: আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয়রাই। নিজস্ব চিত্র

সাফ: আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয়রাই। নিজস্ব চিত্র

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০১:২০
Share: Save:

সুইমিং পুল, বোট ক্লাব, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, শিশু উদ্যান— আধুনিক শহুরে জীবনযাপনের নানা অভিজ্ঞান আরামবাগ শহরে হাজির হয়েছিল সেই বাম আমলেই।

তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে শহরে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। আলোয় সেজেছে রাস্তাঘাট। সব ওয়ার্ডের রাস্তা কংক্রিটের হয়েছে। গরিবরা বাড়ি পেয়েছেন। সুলভ শৌচাগার হয়েছে।

কিন্তু আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ এবং নিকাশি ব্যবস্থা এখনও সেই তিমিরেই। বাম আমলেও যা ছিল, এখনও তাই। শহরের ১৯টি ওয়ার্ডেই যত্রতত্র পড়ে থাকে আবর্জনার স্তূপ। হাসপাতাল রোড-সহ বেশ কিছু এলাকার নিকাশি নালা পলিথিনে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নোংরা জল উপচে আসে রাস্তায়। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই পুর এলাকার বাসিন্দাদের।

চারটি জেলার কেন্দ্রবিন্দু এই শহর। কয়েক বছর আগে আরামবাগে রেল এসেছে। তার পর থেকে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। পুরসভার হিসেবে, বর্তমানে ১৯টি ওয়ার্ডে পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এখনও যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থা এবং জঞ্জাল সাফাইয়ের ব্যবস্থা গড়ে উঠল না।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে জঞ্জাল তুলে আনার জন্য ৬টি ট্রাক্টর রয়েছে। ভ্যাট রয়েছে ৩৬টি। জঞ্জাল ফেলার জন্য কয়েকশো প্লাস্টিক ডাস্টবিন দেওয়া হলেও সেগুলির অধিকাংশই উধাও। পাড়ায় পাড়ায় বাঁশি বাজিয়ে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ১৬টি হাত-গাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ১০টি কাজে লাগানো হয়েছে। পুরবাসীদের দাবি, ওয়ার্ডপিছু অন্তত ৫টি করে ভ্যাট বসানো হোক। কারণ, সামান্য পরিকাঠামো নিয়ে সব ওয়ার্ডকে পুরসভা জঞ্জালমুক্ত রাখতে পারছে না বলে অভিযোগ।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা আরামবাগ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সাজিদুল ইসলাম বলেন, “বেহাল নিকাশির কারণে আন্দিমহল এলাকা মাঝমধ্যেই ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তার উপর জঞ্জালের স্তূপ!’’ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মমতাজুল হকের অভিযোগ, “পুরসভার সাফাই কর্মীরা বাড়ির কাছে বাঁশিতে ফুঁ মেরেই পালান। গৃহস্থের জন্য অপেক্ষা করেন না।’’ বিবেকানন্দ পল্লিতে কোনও আস্তাকুঁড় নেই। ফলে, এলাকাবাসী রাস্তাতেই আবর্জনা ফেলেন। কিন্তু সেই আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। তাই কয়েকটি পাঁচিলঘেরা জায়গাকে আস্তাকুঁড় বানিয়ে ফেলেছেন এলাকাবাসী। জঞ্জাল জমলে তাঁরাই সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন। জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে নানা ওয়ার্ড থেকেই মিলছে অভিযোগ।

কী করছে পুরসভা?

চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী জানান, সাফাই ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। প্রতি বাড়িতে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য দু’টি করে (সবুজ এবং হলুদ) বালতি দেওয়া হবে। প্রতি সকালে পুরসভার গাড়িতে সেই বালতির আবর্জনা তুলে দেবেন বাসিন্দারা। তিনি বলেন, ‘‘বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য কালীপুর রেলগেটের কাছে একটি ২৭ বিঘা জমি মিলেছে। শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে। ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার কাজ চলছে। সেটি সম্পূর্ণ হলে নিকাশির সমস্যাও থাকবে না।”

এখন দেখার, কবে শহরবাসীর সমস্যা মেটে।

(সহ প্রতিবেদন: মোহন দাস)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Distress Waste Garbages
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE