Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কোনা এক্সপ্রেসওয়ের চাপ কমাতে নতুন রাস্তা

কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কের যানবাহনের চাপ কমাতে বিদ্যাসাগর সেতুর হাওড়ার দিক থেকে মুম্বই রোড পর্যন্ত কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে বিকল্প পথ হিসেবে ‘এলিভেটেড করিডর’ তৈরির প্রকল্প নিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল রাজ্য।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:১৭
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে চাপ কমাতে রাজ্যের দেওয়া ‘এলিভেটেড করিডর’ তৈরির প্রস্তাবের অনুমোদন দিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে। এখন সাঁতরাগাছি সেতুর পাশ দিয়ে আরও একটি সেতুর পথে বাধা রইল না। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথমে আপত্তি করা হলেও দক্ষিণ-পূর্ব রেল রাজ্যের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এখন রাজ্যের দেওয়া নকশা অনুযায়ী ‘এলিভেটেড করিডর’ করা যাবে।’’

কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কের যানবাহনের চাপ কমাতে বিদ্যাসাগর সেতুর হাওড়ার দিক থেকে মুম্বই রোড পর্যন্ত কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে বিকল্প পথ হিসেবে ‘এলিভেটেড করিডর’ তৈরির প্রকল্প নিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল রাজ্য। রেলেরই সংস্থা রাইটস-কে দিয়ে প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু মাস খানেক আগে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দক্ষিণ-পূর্ব রেল সাঁতরাগাছি সেতুর পাশ দিয়ে আরও একটি সেতু তৈরির প্রস্তাব জানায়। রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওই জায়গায় রেললাইনের আরও সম্প্রসারণ হবে। তাই নতুন সেতুর জন্য পিলার করা যাবে না। রেলের ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, সেতু করতে হলে প্রকল্পের

পুরো নকশা পাল্টাতে হবে এবং তা করে এলিভেটেড করিডর বানাতে গেলে তাতে প্রায় ১০-১২টি বাড়ি ভাঙতে হবে।

রেলের এই বিকল্প প্রস্তাবের জেরে গোটা প্রকল্পটি থমকে যায়। রাজ্যের পূর্ত দফতরের কর্তাদের দাবি, রেলের প্রস্তাব অনুযায়ী নকশা পরিবর্তন করতে গেলে অনেকগুলি বাড়ি ভাঙতে হবে। যা কার্যকর করতে গেলেই আদালতে মামলা হবে। ফলে প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে, কেউ জানে না। যদিও রেল দেরিতে হলেও এই প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়ায় সব সমস্যা মিটে গিয়েছে।

কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বর্তমানে অত্যন্ত ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে ওঠায় হাওড়া সিটি পুলিশকে যান নিয়ন্ত্রণের উপরে আলাদা নজরদারি চালাতে হয় ২৪ ঘণ্টাই। পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০১৪ সালে ওই সড়ক দিয়ে দিনে যেখানে ১৮ হাজার গাড়ি চলাচল করত, বতর্মানে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে গড়ে ১ লক্ষ। এত গাড়ির চাপ নিতে না পারায় ওই রাস্তায় যানজট হয়ে গিয়েছে নিত্য দিনের ঘটনা। বিশেষ করে মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে রাত ১০টার পর থেকে কলকাতা ও মুম্বই রোডের দিক থেকে আসা হাজার হাজার মালবাহী ট্রাকের চাপ সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশের। হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তাদের মতে, দৈনন্দিন এত গাড়ির চাপ নেওয়া সাঁতরাগাছির মতো পুরানো সেতুর পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সে কথা ভেবেই সম্প্রতি ইয়েলো বক্স ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, সেতুর দু’পাশে একটি নির্দিষ্ট দাগের আগে গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। পরে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে সেতুর উপরে। হাওড়া সিটি পুলিশের মতে, এতে এক সময়ে সেতুর উপরে ভারী গাড়ির চাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সেতুর ক্ষতি কম হবে। তাতে সেতুর আয়ু কিছুটা বাড়বে।

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, বিদেশে যানজট কমাতে এই ব্যবস্থা চালু আছে। মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে সাঁতরাগাছি সেতু স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়। তাঁরাই মতামত দেন, অবিলম্বে সেতুর উপর থেকে যানজট কমাতে হবে। কারণ সেতুটি সারা দিন ধরে চলা এত গাড়ির ভার বেশি দিন বহন করতে সক্ষম নয়। এর পরেই ইয়েলো বক্স ব্যবস্থা চালু হয়। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছি সেতু নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সেতুর ক্ষতি অনেকটা কমবে বলে মনে হয়। যানজটও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যতদিন না এলিভেটেড করিডর হয়, ততদিন এই ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Road Plan Kona Expressway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE