শ্রীরামপুর কলেজের দরজার নোটিস টাঙিয়েছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের কলেজে কলেজে ভর্তিতে ‘তোলাবাজি’ রুখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নড়েচড়ে বসেছে হুগলি ও হাওড়া— দুই জেলার পুলিশ প্রশাসনও। সোমবার দুই জেলাতেই পথে নামল পুলিশ। চলল প্রচার, নজরদারিও।
হুগলিতে কলেজের সংখ্যা ২৮। ৯টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন, বাকিগুলি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। সূত্রের খবর, সব কলেজেই ভর্তির ফর্ম তোলা এবং জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া অনলাইনে হয়েছে। সর্বত্রই অধিকাংশ আসন পূরণ হয়ে গিয়েছে। সোমবার শ্রীরামপুর কলেজ এবং শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ চত্বর-সহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের তরফে পোস্টার সাঁটা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের মতোই তাতে থানার ল্যান্ডলাইন এবং মোবাইল নম্বর দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেল আইডি-ও দেওয়া হয়েছে। পুলিশের আর্জি, কেউ টাকার বিনিময়ে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দিলে বা অন্য ভাবে প্ররোচিত করলে তা ওই নম্বরে বা ই-মেলে জানান। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। সকালে শ্রীরামপুর কলেজের গেটের সামনে পুলিশকর্মীদের এই সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করতেও দেখা যায়। পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা বিজয়নারায়ণ মহাবিদ্যালয়ের গেটের সামনে এ দিন পুলিশের নজরদারি ছিল। সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশও ছিল। পড়ুয়াদের থানার ফোন নম্বর দেন পুলিশকর্মীরা।
চন্দননগর কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অম্লান ঘোষ বলেন, ‘‘ভর্তি হতে এসে কেউ যাতে সমস্যায় না-পড়েন, পুলিশ তা দেখবে। কোনও অভিযোগ থাকলে নির্দ্বিধায় পুলিশকে জানান। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তবে, এখনও পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগ পুলিশের কাছে আসেনি।’’
শ্রীরামপুর মহকুমার একটি কলেজের ভর্তি সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত এক শিক্ষক বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে কলেজে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে কিছু কানাঘুষো কানে আসছে।’’
রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজের টিচার-ইনচার্জ রমেশ কর বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। কোনও অভিযোগ পাইনি।
অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশের এই দৌড়ঝাঁপ, বা মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তাকে জেলা এসএফআই নেতৃত্ব ‘লোকদেখানো’ বলে মনে করছে। তাঁদের অভিযোগ, জেলায় বিভিন্ন কলেজ টিএমসিপি তথা তৃণমূল নেতাদের টাকা তোলার আখড়া। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অমৃতেন্দু দাস বলেন, ‘‘টিএমসিপি এবং তৃণমূল নেতাদের পকেট ভরার পাশাপাশি পড়ুয়াদের থেকে তোলা টাকা ওদের দলের তহবিলেও জমা পড়ে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা টিএমসিপি নেতৃত্ব। সংগঠনের জেলা সভাপতি গোপাল রায়ের দাবি, ‘‘এসএফআই অভিযোগ তথ্য সহকারে জানালে ব্যবস্থা নেব। টিএমসিপির কোনও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ নেই। সংগঠনের সব স্তরে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনও সমস্যায় পড়ুয়া বা অভিভাবকরা আমাদের জানালে সাহায্যের জন্য দ্রুত
পৌঁছে যাব।’’
হাওড়ার আন্দুলের প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজ, ডোমজুড়ের আজাদ হিন্দ কলেজ, উলুবেড়িয়া কলেজ, বাগনান কলেজ, জগৎবল্লভপুর শোভারানি মেমোরিয়ল কলেজ, জয়পুর পঞ্চানন রায় কলেজ— সর্বত্রই পুলিশের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে কলেজের সামনে হুগলির মতো পোস্টারও ঝুলিয়েছে পুলিশ। চলেছে নজরদারি। প্রতিটি কলেজেই অনলাইনে ভর্তি চলছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষেরা। বিকেল পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ
সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy