Advertisement
E-Paper

ছেলেধরা সন্দেহে মার বাবাকেই

তবে বুধবার সন্ধ্যার এই ঘটনার পরে রাতে ওই ব্যক্তির স্ত্রী থানায় আসতেই ঝাঁপিয়ে তাঁর কোলে ওঠে শিশুটি। ওই শিশু যে তাঁদেরই সন্তান, এর পরে সে সম্পর্কে কাগজপত্রও জমা দেন ওই মহিলা।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
মায়ের কোলে সারিকা। শুক্রবার, বালিতে। নিজস্ব চিত্র

মায়ের কোলে সারিকা। শুক্রবার, বালিতে। নিজস্ব চিত্র

পাঁচ বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য বাসযাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইছিলেন বাবা। কিন্তু সাহায্য তো দূর অস্ত্‌, উল্টে বাচ্চাটি চুরি করে তাকে সামনে রেখে টাকা রোজগার করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক পেটালেন কয়েক জন বাসযাত্রী। এমনকী, বাস থেকে নামিয়েও চলল মারধর। ‘হাতের সুখ’ করে নিলেন আরও কয়েক জন পথচলতি লোকজন। শেষে পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে এবং বাচ্চাটিকে থানায় নিয়ে যায়। সত্যিই ওই ব্যক্তি শিশুটির বাবা কি না, তা নিয়ে ধন্দে পরে পুলিশও!

তবে বুধবার সন্ধ্যার এই ঘটনার পরে রাতে ওই ব্যক্তির স্ত্রী থানায় আসতেই ঝাঁপিয়ে তাঁর কোলে ওঠে শিশুটি। ওই শিশু যে তাঁদেরই সন্তান, এর পরে সে সম্পর্কে কাগজপত্রও জমা দেন ওই মহিলা। শেষে সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন দম্পতি। যদিও ওই দম্পতির বাড়িতে পুলিশ গিয়ে সব যাচাই করে নিশ্চিত হয়।

বস্তুত, রাস্তাঘাটে কাউকে কয়েক জন মিলে মারধর শুরু করলেই, কিছু না জেনে স্রেফ ‘হাতের সুখ’ করে নিতে ঢুকে পড়েন আরও কিছু অতি উৎসাহী লোকজন। তাঁরাই নিজস্ব মতামত দিয়ে ঘটনার একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। যেমন হয়েছে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি বাচ্চাটিকে চুরি করে এনেছেন। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘মাঝেমধ্যে দেখা যায় কেউ মিথ্যা বলে সাহায্য চাইছেন। তেমন মনে হলে তাঁকে সাহায্য না করলেই হল। কিন্তু স্রেফ সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে মারধর করা অন্যায়।’’

তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা এই প্রবণতার জন্য দায়ী করছেন মানুষের সহ্য ক্ষমতার অবনতিকে। যার ফলে যে কোনও বিষয়ে চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন অনেকে। মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘অদৃশ্য কারণে মানুষ আজ অখুশি। চারপাশে নানা প্রলোভনের বেড়েছে উচ্চাকাঙ্খাও। কিন্তু সেটা না পাওয়ায় আত্মসম্মান এবং সহ্যক্ষমতা কমছে। সব মিলিয়ে চটজলদি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন অনেকে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা। সকলেই বুঝে নিলেন, চুরি করে আনা বলেই সে ভয়ে চুপচাপ। আর তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখার সময়টুকুও না দিয়ে শুরু হল মারধর।

এর আগে শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনার পরে হাবরা, বসিরহাটে মাইক প্রচার করে গুজবে কান না দিতে সতর্ক করেছিল পুলিশ। আবার কল্যাণীর এক দম্পতিকে শিশু চোর সন্দেহে তাঁদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল । এ সবের পরে শিশুচোর গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বিবৃতিও দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা।

পুলিশ সূত্রের খবর, বালি হল্টের ওই ব্যক্তির নাম তারিমুল্লা পাইক। টিটাগড়ের নয়াবস্তিতে স্ত্রী সাবিনা বিবি ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। বড় মেয়ে সারিকা ন’মাস বয়স থেকেই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। সে ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। তরল ছাড়া খেতেও পারে না। হাঁটাচলাতেও সমস্যা আছে তার। শুক্রবার বস্তির ঘুপচি ঘরে বসে সাবিনা বলেন, ‘‘বর জোগাড়ের কাজ করেন। সামান্য আয়ে সংসার চলে না। সেখানে মেয়েকে ভাল খাবার খাওয়ানো, চিকিৎসার পয়সা পাব কোথায়? তাই মাঝেমধ্যে রাস্তায় সাহায্য চাই।’’ তারিমুল্লা জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি পরিচিত এক জনের কাছে সাহায্য না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে বালি হল্টে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কি‌ছু টাকা পেলে মেয়েটার জন্য দুধ কিনব ভেবেছিলাম।’’

অভিযোগ, আচমকাই তাঁকে ঘিরে ধরে কয়েক জন যাত্রী জানতে চান কোথা থেকে বাচ্চাটিকে চুরি করা হয়েছে। মেয়েকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে শুরু হয় এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড়। বাস থেকে নামিয়েও চলে মারধর। খবর পেয়ে নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। কিন্তু সারিকা কিছু বলতে না পারায় তারিমুল্লা সত্যিই বাবা কি না তা নিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশেরও।

তারিমুল্লা অবশ্য প্রশংসা করেছেন থানার অফিসারদের ভূমিকায়। তিনি জানান, থানায় গিয়ে আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিল সারিকা। তখন ওসি সঞ্জীব সরকার নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে দুধ এনে খাওয়ান।

Public Lynching Father Kidnap
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy