কোথাও বন্ধ থাকছে আতসবাজির প্রদর্শনী, কোথাও বাদ বাহারি আলো।
কোথাও পুজোর জমি থেকে সবেমাত্র বন্যার জল নেমেছে। কোথাও আবার চাঁদা নিয়ে দুশ্চিন্তা।
বন্যার ধাক্কায় পুজোর আড়ম্বর কমছে হাওড়ার আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুর— দুই ব্লকেই। জুলাইতে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত হয় দুই এলাকা। তার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখানকার বাসিন্দারা। কৃষিপ্রধান দুই ব্লকে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। তার মধ্যে কয়েকটি প্রতি বছরই নজর কাড়ে। তাদের অবস্থাও এ বারে কাহিল। তবে, কোনও পুজো বন্ধ হওয়ার খবর নেই।
আমতা-২ ব্লকের অন্যতম বড় পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে পারবাকসি মিলন সমিতির পুজো। প্রতি বছর গড়ে ৬ লক্ষ টাকা বাজেট থাকে। এ বার বন্যায় ডুবে গিয়েছিল পুরো এলাকা। মণ্ডপ করার জায়গা কয়েকদিন আগে জেগেছে। সাদামাটা ভাবে পুজো হবে বলে জানান অন্যতম উদোক্তা তরুণ দলুই।
প্রায় ৫০ বছরের পুরনো রাউতাড়া গ্রামবাসীবৃন্দের পুজো গত বছর থেকে মহিলারা পরিচালনা করছেন। গত বছর বাজেট ছিল প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এ বারে অনেক কম। এলাকার বহু যুবক গয়নার কাজের সূত্রে দিল্লি-মুম্বইয়ে থাকেন। তাঁদের পাঠানো টাকা এতদিন পুজোর একটা বড় ভরসা ছিল। এ বছর সেই টাকাতেও কোপ পড়েছে। পুজো কমিটির প্রাক্তন সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত রায় বলেন, ‘‘নোটবন্দি এবং জিএসটি-র জন্য ভিন্ রাজ্যে থাকা যুবকদের রোজগার কমেছে। তাঁরা বেশি চাঁদা পাঠাতে পারেননি।’’
একই ছবি উদয়নারায়ণপুরেরও। সোনাতলা-শিবতলা সর্বজনীনের প্রধান আকর্ষণ ছিল আলোকসজ্জা। এ বছর সেটাই বাদ দেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানান পুজো কমিটির সভাপতি স্বপন গোস্বামী। বলেন, ‘‘কিছু করার নেই। টাকা কোথায়?’’ এলাকার পুরনো পুজো সোনাতলা অভিরাম প্রাঙ্গণ সর্বজনীন। স্থানীয়েরা জানান, প্রায় তিনশো বছর আগে অভিরাম প্রামাণিক নামে একজন এই পুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর নামেই পুজোর নামকরণ। এখানকার পুজোর বিশেষত্ব আতসবাজির প্রদর্শনী। এ বার সেই রোশনাই বন্ধ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিমাই আদক বলেন, ‘‘আতসবাজির প্রদর্শন বাদ দেওয়া ছাড়াও আর কী ভাবে বাজেট কমানো যায় তার চিন্তাভাবনা চলছে।’’
স্থায়ী দুর্গামন্দিরে পুজো হয় ভবানীপুর সর্বজনীনের। বন্যার সময়ে মন্দিরের মাথায় এক ফুট জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। জল নেমে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা স্বস্তিতে। রীতি মেনে প্রতিমা কুমোরটুলি থেকে আনা হবে ঠিকই, তবে বাকি আড়ম্বর বাদ দেওয়া হয়েছে। পুজো কমিটির সভাপতি রসেস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিমা একজন দান করেন। তাই তাতে কোপ পড়েনি। কিন্তু মণ্ডপ ও আলোকসজ্জা কমানো হচ্ছে।’’
অনেক উদ্যোক্তা বলছেন, মানুষের হাতে পয়সা নেই। তাই চাঁদা তোলা যাচ্ছে না। তা বলে পুজো বন্ধ করার কথা তাঁরা ভাবতে পারেননি। অনেকেরই আশা, পুজোর হাত ধরেই ফের ছন্দে ফিরবেন বন্যাদুর্গতেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy