Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রাক্তন প্রেমিকের সাজা, খুশি কুমারী মা

প্রায় দু’বছর ধরে আইনি লড়াই লড়ার পরে মুখে হাসি ফুটল এক কুমারী মায়ের। তাঁকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের দায়ে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে বৃহস্পতিবার সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিল আদালত।

আদালতে সাজা ঘোষণার পরে উত্তম। ছবি: তাপস ঘোষ।

আদালতে সাজা ঘোষণার পরে উত্তম। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

প্রায় দু’বছর ধরে আইনি লড়াই লড়ার পরে মুখে হাসি ফুটল এক কুমারী মায়ের। তাঁকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের দায়ে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে বৃহস্পতিবার সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিল আদালত।

এ দিন চুঁচুড়া বিশেষ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক পুলক কুমার তিওয়ারি পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা গ্রামের যুবক উত্তম মালিককে ওই সাজা শোনান। ওই তরুণীও একই গ্রামের। উত্তমের দূর সম্পর্কের আত্মীয়া। এ দিন তিনিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পরে দৃশ্যতই খুশি ওই তরুণী বলেন, “আমার যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তবে পরেও আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম মেয়েটার কথা ভেবে। কিন্তু ও রাজি হয়নি। ও আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তাতে ওর উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে। এখন চিন্তা, মেয়েটাকে নিয়ে কী ভাবে থাকব! বড় হলে ওর মনে কোনও আঘাত লাগবে কি না!’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ওই তরুণীর সঙ্গে উত্তমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সময় উত্তম বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। তরুণী ছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পরিবারের অন্যদের অনুপস্থিতির সুযোগে উত্তম মাঝেমধ্যেই তরুণীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেন। এ ভাবে কয়েক মাস চলার পরে তরুণী উত্তমকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উত্তম এড়িয়ে যায়। বছর দুয়েক পরে তরুণী সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। দুই পরিবারেই বিষয়টি জানাজানি হয়। কিন্তু এর পরেও উত্তম বিয়েতে রাজি হয়নি। সে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। তরুণী পুলিশের দ্বারস্থ হন। উত্তমের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি লিখিত অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে উত্তমকে গ্রেফতার করে। পরে জামিন পায় উত্তম। এর মধ্যেই কন্যাসন্তান প্রসব করেন ওই তরুণী।

মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সুব্রত গুছাইত বলেন, ‘‘গত বুধবারই উত্তমকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। বৃহস্পতিবার তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিচারক। অনাদায়ে আরও তিন মাস হাজতবাসের নির্দেশ দেন। জরিমানার টাকা ওই তরুণীকে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।’’

তরুণীর বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। কষ্টের সংসার হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের লড়াইয়ে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ দিন রায় শোনার পরে তিনি বলেন, “দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও আমরা উত্তমের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। উত্তম কান দেয়নি। বর্তমান বাজারে মেয়েটাই বা কী করে তাঁর সন্তানকে একা মানুষ করবে? উত্তমের উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে।” এ দিন আদালতে উত্তমের পরিবারের লোকজন উপস্থিত থাকলেও এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE