Advertisement
০৭ মে ২০২৪
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে গরিবের রান্নাঘর

মাত্র পাঁচ টাকাতেই মিলছে ভাত-ডাল

এতদিন তাঁদের ২৫-৩০ টাকা খরচ করে এই খাবার খেতে যেতে হচ্ছিল ঘড়ির মোড়ে বা আদালত চত্বরে। এ দিন তা এল হাতের নাগালে, নামমাত্র খরচে। লাইনও পড়ল দেদার।

ব্যতিক্রম: খাবার কিনতে লাইন রোগীর পরিজনদের। ছবি:তাপস ঘোষ

ব্যতিক্রম: খাবার কিনতে লাইন রোগীর পরিজনদের। ছবি:তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

এক থালা ভাত, ডাল, তরকারি, চাটনি, পাঁপড়— দাম মাত্র পাঁচ টাকা!

অগ্নিমূল্যের বাজারে এই দামে দুপুরের খাবার! বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের মূল গেটের সামনে ‘গরিবের রান্নাঘর’-এ এসে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। বেশির ভাগই রোগীর আত্মীয়স্বজন। এতদিন তাঁদের ২৫-৩০ টাকা খরচ করে এই খাবার খেতে যেতে হচ্ছিল ঘড়ির মোড়ে বা আদালত চত্বরে। এ দিন তা এল হাতের নাগালে, নামমাত্র খরচে। লাইনও পড়ল দেদার।

‘গরিবের রান্নাঘর’ আসলে একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। যা তৈরি হয়েেছ একটি ছোট ট্রাকে। উদ্যোক্তা ওই হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকজন। তাঁরা জানিয়েছেন, মূলত গরিব রোগীদের আত্মীয়দের কথা ভেবেই আপাতত সপ্তাহে একদিন করে এই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর দিন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, পাঁচ টাকার বিনিময়ে যে কেউ-ই খাবার খেতে পারবেন।

হুগলির জেলা সদর হাসপাতাল হওয়ায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে রোগীর চাপ সব সময়েই বেশি। দূরদূরান্ত থেকে রোগী আসেন। তাঁদের জন্য হাসপাতাল থেকে খাবার দেওয়া হলেও সঙ্গে আসা আত্মীয়েরা পড়েন মুশকিলে। কারণ, আশপাশে কোনও খাবারের দোকান নেই। তাঁদের হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। সঞ্জয় সিংহ নামে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা কেন্দ্রের এক সদস্য জানান, খাবারের জন্য রোগীর আত্মীয়দের অসহায় অবস্থা বদলাতে চেয়ে তাঁদের উদ্যোগ।

কিন্তু খরচ উঠবে কী ভাবে?

শেখ ঝন্টু নামে আর এক অ্যাম্বুল্যান্স-চালক বলেন, ‘‘আমরা ঠিক ব্যবসা করতে বসিনি। উপার্জনের টাকা কত দিক দিয়েই তো নষ্ট হয়। বাজে খরচ বন্ধ করে সাধারণ দরিদ্র মানুষের জন্য এই ব্যবস্থা করতে পেরে আমরা গর্ব বোধ করছি। আমরা প্রায় ৬০ জন আছি। এক-একদিন আমাদের এক-একজন একটু বেশি দায়িত্ব নেবেন বলে ঠিক হয়েছে। তাতে কারও উপরে চাপ পড়বে না।’’

বৃহস্পতিবার, গরিবের রান্নাঘর-এর প্রথম দিনের মেনুতে ছিল— ভাত, লাউ দিয়ে মুগ ডাল, আলু-পটলের তরকারি, টম্যাটোর চাটনি, পাঁপড় এবং পায়েস। আয়োজন ছিল আড়াইশো জনের। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব শেষ। ‘‘প্রথম দিন বলেই পায়েসের ব্যবস্থা করেছিলাম। রোজ পারব না।’’— জানালেন এক উদ্যোক্তা।

সকাল ১০টা নাগাদ ‘গরিবের রান্নাঘর’ যখন হাসপাতালের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল, তখন কিন্তু কেউ-ই বিশেষ গুরুত্ব দেননি। বেলা বাড়তেই ছবিটা বদলে গেল। কুপন কেটে খাবারের জন্য লাইন দিয়েছিলেন ধনেখালির বৃদ্ধা বসুন্ধরা মাঝি। খাওয়া সেরে উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানালেন, ‘‘খুব ভাল করেছো বাবা। স্বামীর কঠিন অসুখ। অনেক দিন ধরে এখানে আসছি। আমরা গরিব মানুষ। এখানে বেশির ভাগ দিন খাওয়াই হয় না। আজ পেট ভরে খেলাম। এটা বন্ধ কোরো না বাবা।’’

উদ্যোক্তারা তৃপ্ত। উদ্দেশ্য সফল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Fish Fish meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE