Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গাছের ভাগীদারের প্রশ্নে বন্ধ রাস্তা সংস্কার

পূর্ত দফতরের রাস্তা। সেই রাস্তার দুই ধার বরাবর হাজার তিনেক গাছের মালিকানা দাবি করল পঞ্চায়েত। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ওই সব গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পূর্ত দফতর। সেখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। পঞ্চায়েতের দাবি, ওই সব গাছ কেটে বিক্রির অধিকার তাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:২৬
Share: Save:

পূর্ত দফতরের রাস্তা। সেই রাস্তার দুই ধার বরাবর হাজার তিনেক গাছের মালিকানা দাবি করল পঞ্চায়েত।

রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ওই সব গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পূর্ত দফতর। সেখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। পঞ্চায়েতের দাবি, ওই সব গাছ কেটে বিক্রির অধিকার তাদের। যা মানতে নারাজ পূর্ত দফতর। দুই দফতরের এই টানাপড়েনে মাস ছয়েক ধরে আটকে রয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ। ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাট ১ নম্বর ব্লকের। বিষয়টির মীমাংসা চেয়ে তৃণমূল পরিচালিত গোঘাট পঞ্চায়েতের প্রধান বনলতা পাল মহকুমা শাসকের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন।

প্রধানের অভিযোগ, পঞ্চায়েতকে না জানিয়ে পঞ্চায়েতের লাগানো গাছ কাটার জন্য সেগুলি চিহ্নিতকরণ করেছে পূর্ত দফতর। পঞ্চায়েত যাতে গাছগুলির যাতে অধিকার পায় এবং সেগুলি বিক্রি করতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মহকুমাশাসককে অনুরোধ করেছেন তিনি। অন্যদিকে পূর্ত দফতর ওই গাছগুলির স্বত্ব ছাড়তে নারাজ। তাঁদের দাবি, তাঁদের জায়গার উপর গাছ পঞ্চায়েতকে কাটতে দেওয়া যাবে না। পূর্ত দফতরের (আরামবাগ হাইওয়ে সাব ডিভিশন) সহকারী বাস্তুকার জ্যোতিপ্রকাশ ধর বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের জায়গায় গাছের মালিক পূর্ত দফতরই। ওই গাছ কাটার কোনও এক্তিয়ার নেই পঞ্চায়েতের।’’

মহকুমা শাসক প্রতুল কুমার বসু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অন্যায় দাবি করছে। কেউ তাদের বেনিফিসিয়ারি কমিটি করে পূর্ত দফতরের জায়গায় গাছ লাগাতে বলেনি। তাঁদের গাছ কাটারও কোন এক্তিয়ার নেই।’’ তিনি জানান, ওই সব গাছ কাটার ব্যবস্থা হচ্ছে।। তবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গাছ বিক্রির একটি অংশ সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত পাবে। সেই টাকায় তারা ফের বৃক্ষ রোপণ করবে। এবং সেই অংশ থেকেই তারা বেনিফিসিয়ারিদের দিতে পারে।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত গাছ লাগালে সেই গাছ বিক্রির টাকার প্রায় ২৫ শতাংশ পঞ্চায়েত পাবে। প্রাপ্য টাকার ৫০ শতাংশ তারা বেনিফিসিয়ারিদের দিতে পারে।

গোঘাট পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় মানুষের যৌথ উদ্যোগে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে গাছগুলি লাগানো হয়েছিল গত ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। উদ্যোগীদের(গ্রামবাসীদের নিয়ে বেনিফিসিয়ারি কমিটি) সঙ্গে চুক্তি ছিল, তাঁরা গাছ লাগাবেন এবং তদারকি করবেন। পরিবর্তে গাছ কাটার পর সেই গাছের মূল্যের ৫০ শতাংশ তাঁরা পাবেন। বাকি ৫০ শতাংশ পঞ্চায়েত নেবে।

এই অবস্থায় উদ্যোগী তথা বেনিফিসিয়ারি কমিটির পক্ষে অসিত নন্দী, বাবলু রায় প্রমুখর দাবি, পঞ্চায়েতের সঙ্গে শর্ত মাফিক সমস্ত গাছ বিক্রির ন্যায্য মূল্য তাঁরা যাতে পান, পঞ্চায়েতের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তা না পেলে একটাও গাছ কাটতে দেবেন না। গাছ না কাটলে আটকে যাবে রাস্তা সংস্কারের কাজ। এ বিষয়ে মহকুমাশাসক জানান, নিয়মানুযায়ী যে টাকা পঞ্চায়েতের প্রাপ্য সে টাকাই তারা পাবে। তা থেকেই বেনিফিসিয়ারিদের টাকা দেওয়া যাবে। পঞ্চায়েতকেই ওই টাকা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ করা যাবে না।

পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই মেদিনীপুরের সঙ্গে যোগাযোগের আরামবাগ-রামজীবনপুর ওই রাস্তায় ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর থেকে আরামবাগ মহকুমার অংশে ২১.৪৫ কিমি সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখনও পিচের কাজ না হলেও আরামবাগের দিক থেকে প্রায় ৮ কিমি রাস্তা চওড়া করার কাজ শেষ হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road reformation goghat tree panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE