Advertisement
E-Paper

মাটি কাটায় গতি হারাচ্ছে রূপনারায়ণ

রাধাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে রূপনারায়ণ নদ। গাদিয়াড়ায় গিয়ে এই নদ মিশেছে হুগলি নদীর সঙ্গে। বছর পঞ্চাশ আগে রাধাপুরের কাছে রূপনারায়ণের বুকে চর জেগে ওঠে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৩
রূপনারায়ণের পাড় থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে মাটি। ছবি: সুব্রত জানা

রূপনারায়ণের পাড় থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে মাটি। ছবি: সুব্রত জানা

ইটের টুকরোয় ভরছে নদের দু’ধার। পাড় ভরাট হয়ে ক্রমশ মজে আসছে নদী। যার ফলে চাষিরা প্রয়োজনের সময়ে জল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবিটা হাওড়ার শ্যামপুরের রাধাপুর পঞ্চায়েত এলাকার।

রাধাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে রূপনারায়ণ নদ। গাদিয়াড়ায় গিয়ে এই নদ মিশেছে হুগলি নদীর সঙ্গে। বছর পঞ্চাশ আগে রাধাপুরের কাছে রূপনারায়ণের বুকে চর জেগে ওঠে। যা মায়াচর নাম পরিচিত। যেহেতু রূপনারায়ণ নদ পূর্ব মেদিনীপুরের ভৌগলিক সীমায় পড়ে তাই মায়াচরও পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের অধীনে পড়ে যায়। ক্রমে সেখানে বসতি গড়ে ওঠে। মায়াচর মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। মায়াচরের দুইদিক দিয়েই বইছে রূপনারায়ণ। পুরনো অংশটি আছে রাধাপুরের দিকে। যার স্থানীয় নাম ছোট গঙ্গা। আর উল্টোদিক দিয়ে বইছে মূল রূপনারায়ণ।

ছোট গঙ্গা নামে রূপনারায়ণের ওই অংশ দিয়ে এক সময়ে পণ্য পরিবহণ চলত। রাধাপুর পঞ্চায়েতের শত শত বিঘা জমিতে চাষ হয় ওই জলে। ফলে সেদিক থেকে রাধাপুরের মানুষের কাছে ছোট গঙ্গার গুরুত্ব অনেক। গত কয়েক বছর ধরে ছোটগঙ্গার দুই পারে একাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সংখ্যা প্রায় তিরিশ। যত দিন গিয়েছে, ভাটাগুলি জমি বাড়াতে বেআইনি ভাবে নদের পাড় ভরাট করছে। ফলে ক্রমশ ছোট হচ্ছে নদ। যত্রতত্র এ ভাবে ভরাট করায় অনেক জায়গায় নদীর তলদেশে পলি জমে তা মজে আসছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্রোত নেই বললেই চলে। তাঁদের আরও অভিযোগ, নদ সরু হয়ে যাওয়ায় নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে নদ থেকে চাষে সেচের ব্যবস্থা সঙ্কটে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাধাপুর পঞ্চায়েতের জাল্লাবাজ গ্রামে অন্তত ৫০০ বিঘা জমিতে চাষ হয় এই নদের জলে। এখানে একটি সরকারি রিভার লিফটিং পাম্পের সাহায্যে নদী থেকে জল তুলে চাষের কাজে লাগানোর জন্য। বোরো মরসুমে প্রতিদিন জোয়ারের সময়ে আট ঘণ্টা জল তোলা হয়। কিন্তু বছর পাঁচেক ধরে ঘণ্টাচারেকের বেশি জল তোলা যাচ্ছে না। ফলে জমিতে চাষের কাজে প্রয়োজনীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে চাষের। আর এর জন্য নদের পাড়ে ভাটাগুলির দিকেই আঙুল তুলেছেন চাষিরা।

তাঁদের অভিযোগ, ভৌগোলিক দিক থেকে তাঁরা হাওড়া জেলার বাসিন্দা হলেও ভাটাগুলি যেহেতু মায়াচরে তাই হাওড়া জেলা প্রশাসন ভাটাগুলির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। চাষিরা জানান, তাঁরা হাওড়া জেলা প্রশাসনের কাছে গেলে তাঁদের বলা হয় এটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ব্যাপার। প্রণব গুড়িয়া, মনোজ দাস প্রমুখ চাষির কথায়, ‘‘এখান থেকে মহিষাদল যাওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে ভাটামালিকেরা।’’

শুধু জাল্লাবাজ নয়, রাধাপুর পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরাও একই সমস্যা পড়েছেন। অমৃতবড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান মধুমিতা দলুই বলেন, ‘‘আমরা ভাটাগুলির কাছ থেকে কর নিলেও তারা অনিয়ম করছে কিনা সেটা দেখে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুব্রত নস্কর বলেন, ‘‘চাষিদের কাছ থেকে আমরা এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’ ভাটা মালিকেরা অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বংশীধর দাস নামে এক ভাটা মালিকের দাবি, ‘‘নদীর পাড় বাঁধালে তা মজবুত হয়। তাতে নদীর ক্ষতি হয় না। চাষিরা অযথাই অভিযোগ করছেন।’’

Ruparayan River erosion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy