Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Library

কর্মী বাড়ন্ত, হুগলিতে সমস্যায় বহু গ্রন্থাগার

চন্দননগর মহকুমা পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন বাহিরখণ্ডে। আরামবাগ, বৈঁচি, উত্তরপাড়ার তিনটি গ্রন্থাগারের দায়িত্বও একইসঙ্গে সামলাচ্ছেন।

গুপ্তিপাড়া শিশির বাণীমন্দির পাঠাগার। ছবি: সুশান্ত সরকার

গুপ্তিপাড়া শিশির বাণীমন্দির পাঠাগার। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ০০:২৪
Share: Save:

কর্মীর অভাবে ধুঁকছে অসংখ্য গ্রন্থাগার। নিয়মিত তালা খোলার লোক নেই। ইন্টারনেটের যুগে এই ভাবে চললে গ্রন্থাগারে স্থায়ী ভাবে তালা পড়া কী স্রেফ সময়ের অপেক্ষা? প্রশ্ন তুলছেন পাঠক।

চন্দননগর মহকুমা পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন বাহিরখণ্ডে। আরামবাগ, বৈঁচি, উত্তরপাড়ার তিনটি গ্রন্থাগারের দায়িত্বও একইসঙ্গে সামলাচ্ছেন। দেবানন্দপুরের নিখিলবন্ধু গোস্বামী বাঁশবেড়িয়ার একটি গ্রন্থাগারের দায়িত্বে। মগরা এবং চন্দননগরের দু’টি গ্রন্থাগারের বাড়তি দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। কালনার রুমা দাসের হাতে চুঁচুড়া এবং রিষড়ার দু’টি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব। তারকেশ্বরের ঝণ্টু চৌধুরী বন্দিপুর-সহ তিনটি জায়গায় গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করছে‌ন।

এই উদাহরণই বলে দিচ্ছে হুগলি জেলা জুড়ে গ্রন্থাগারের হাল। এখন করোনা পরিস্থিতিতে গ্রন্থাগারে তালা। গ্রন্থাগার খুলে বই বাঁচানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগের দাবি তুল‌ছেন সাধারণ মানুষ। বইপ্রেমীদের আশঙ্কা, ইন্টারনেটের যুগে বই পড়ার আগ্রহ কমছে। বেহাল পরিকাঠামো মেরামত না হ‌লে গ্রন্থাগারের ঘোর দুর্দিন অনিবার্য।

চুঁচুড়ার বাসিন্দা সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘জেলা গ্রন্থাগারে সদস্য কার্ড নবীকরণ করতে গিয়ে এত বার ফিরে আসতে হয়েছিল যে বিরক্ত হয়ে আর করাইনি। এ ভাবে নিজেরাই পাঠক সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘দুষ্প্রাপ্য বইয়ের খোঁজে বিভিন্ন পাঠাগারে গিয়ে দেখি, খুঁজে দেওয়ার লোক নেই। পাঠাগার জানা-অজানার ভাণ্ডার। সেই জায়গা অচল করে রেখে দেওয়া হবে?’’

সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল গ্রন্থাগার দফতর। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন পদন্নোতি আটকে ছিল। গত জানুয়ারি মাসে সেগুলো করা হয়েছে। কর্মী নিয়োগ নিয়ে দফতর ভাবনাচিন্তা করছে। অনুমোদন পেলেই যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার অধিকর্তা স্বাতী ভট্টাচার্য জানান, বেশ কিছু পদে নিয়োগের জন্য অর্থ দফতরের অনুমোদন চেয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর উদ্যোগে রাজ্যে ৫৮৫ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের জন্যও অর্থ দফতরের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই সমস্যা অনেকটা মিটবে।

গ্রন্থাগার দফতর সূত্রের খবর, হুগলিতে ১৫৮টি গ্রন্থাগার রয়েছে। ১৩৫টি গ্রামীণ, ২২টি শহর গ্রন্থাগার। একটি জেলা গ্রন্থাগার। ৮-৯টি গ্রন্থাগার বন্ধ। গ্রন্থাগারিক-সহ সব মিলিয়ে ৩৬৮ জন কর্মী থাকার কথা। সেই জায়গায় রয়েছেন সাকুল্যে ৭৮ জন। গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিক, জুনিয়র সহকারী গ্রন্থাগারিক, বই বাঁধাইকারী, নিরাপত্তারক্ষী— সব ক্ষেত্রেই বিপুল ঘাটতি।

একাধিক পাঠাগারের দায়িত্বে থাকা এক গ্রন্থাগারিকের কথায়, ‘‘বইয়ের তালিকা মেলানো, পুরনো বই সংরক্ষণ, টাকার হিসেব, বই কেনা-সহ নানা পরিকল্পনা, পরিচালন কমিটির বৈঠক— সবই করতে হয়। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন নির্দিষ্ট গ্রন্থাগারে যাই।’’ শ্রীরামপুর পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখানে ৭-৮ বছর গ্রন্থাগারিক ছিলেন না। এক জন বই বাঁধাইকারী ছিলেন মাত্র। এক প্রাক্তন সহকারী গ্রন্থাগারিক-সহ দু’জন যৎসামান্য সাম্মানিক নিয়ে বাকি কাজ সামলাচ্ছিলেন। কয়েক মাস আগে গ্রন্থাগারিক যোগ দিয়েছেন। বই বাঁধাইকারী অবসর নিয়েছেন। ফলে কর্মীসংখ্যা একেই রয়েছে। শূন্যপদ পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।’’

গুপ্তিপাড়ার শিশির বাণীমন্দিরে গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ শূণ্য। খামারগাছির মুক্তকেশী লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক অসীম হালদার এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে। তিনি সপ্তাহে এক দিন আসেন। ফলে একদিনই পাঠাগার খোলে। এই নিয়ে সেখানকার সদস্য এবং বইপ্রেমীরা হতাশ। স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে পাঠাগারটিকে বাঁচানোর দাবিতে গত জানুয়ারি মাসে স্থানীয় গ্রামবাসীরা গণস্বাক্ষর করে দরখাস্ত পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরিস্থিতি বদলায়নি।

বইপ্রেমীদের খেদ, গ্রন্থাগার রয়েছে। বইয়ের সম্ভার রয়েছে। অথচ পাঠকের হাতে বই তুলে দেওয়ার লোক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Library Hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE