Advertisement
E-Paper

প্রতিশ্রুতি-পরিকল্পনা সত্ত্বেও বন্যায় ভাসে শহর

কয়েক শতাব্দী ধরেই বানভাসি হিসাবে খানাকুলের পরিচিতি, তার শস্য-সম্পত্তি এবং জীবনহানির ইতিহাস দীর্ঘ। পাশাপাশি এলাকায় বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিও দীর্ঘদিনের। যদিও বানভাসির অভিজ্ঞতা, সে সবের কোনও কোনও ফল তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। ফলে বন্যাচিত্রেরও যেমন বদল ঘটেনি, তেমনই বন্যাজমিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে বই কমেনি।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০০:১০
বন্যা়য় ভেঙেছে দোতলা বাড়ি।

বন্যা়য় ভেঙেছে দোতলা বাড়ি।

কয়েক শতাব্দী ধরেই বানভাসি হিসাবে খানাকুলের পরিচিতি, তার শস্য-সম্পত্তি এবং জীবনহানির ইতিহাস দীর্ঘ। পাশাপাশি এলাকায় বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিও দীর্ঘদিনের। যদিও বানভাসির অভিজ্ঞতা, সে সবের কোনও কোনও ফল তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি। ফলে বন্যাচিত্রেরও যেমন বদল ঘটেনি, তেমনই বন্যাজমিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে বই কমেনি। বন্যাদুর্গতদের অভিজ্ঞতায়, অতীতে খানাকুলের বন্যার জল নামতে তিন-চারদিন লেগে যেত, এখন যা নামতে দিন পনেরো লেগে যাচ্ছে।

খানাকুলে বন্যা নিয়ন্ত্রণে নিম্ন দামোদর প্রকল্পের অসম্পূর্ণতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এখানকার মানুষের অভিযোগ, সরকারি স্তরে বন্যারোধে প্রচুর প্রতিশ্রুতি আর বন্যার পর ক্ষতিপূরণের নামে কোটি কোটি টাকা হরিরলুঠ হয়, কাজের কাজ কিছু হয় না। সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই এ বারও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস মিলেছে। কি সেই আশ্বাস? রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘স্থায়ীভাবে বন্যারোধের উদ্দেশ্যে খানাকুল তথা আরামবাগ মহকুমার জন্য পৃথক একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই হয়েছে। গত ২৮ অগাস্ট, এ নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠকও হয়ে গিয়েছে।

যদিও খানাকুলের মতো এলাকায় স্থায়ী বন্যারোধ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত করা সম্ভব কি না সেই প্রশ্নে বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ ও বর্তমানে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘অবস্থানগত কারণে খানাকুলে বন্যা স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে এটা ভাবা কঠিন। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর দিকে। কিন্তু বন্যা মোকাবিলায় সেই প্রস্তুতি নেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, নদীবাঁধ উঁচু এবং শক্ত করে বাঁধার কথা ভাবলেই বন্যারোধ হবে না। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে নদীতে ডিভিসির ছাড়া জল, এই সব জমা জল বের হওয়ার পথ চাই। সেই পথগুলি পরিকল্পনা এবং নজরদারির অভাবে রুদ্ধ হয়ে যাওয়াতেই বিপত্তি বাড়ছে। খানাকুলের নদীগুলিতে বোরো বাঁধ নির্মানের বিষয়টিকেও বন্যা মোকাবিলায় বড় বাধা বলে চিহ্নিত করেছেন কল্যাণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘খানাকুলে বোরো চাষের জন্য অবৈজ্ঞানিকভাবে প্রচুর বোরো বাঁধ তৈরি হয়। কিন্তু বর্ষার আগে সেই মাটির বাঁধ সরানো হয় না। ফলে বহু বছর ধরে নদীর মূল স্রোতে মাটি জমে নদীর খাত মজে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে তার জল ধারণের ক্ষমতা।


মাটি আলগা হয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে অনেক বাড়িতে।

জেলা সেচ-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিও স্বীকার করেছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ বিভিন্ন সড়ক পথ কিংবা রেলপথগুলিতে যত কালভার্ট রাখার প্রয়োজন তা থাকছে না। নিকাশি নালাগুলি অবৈধ উপায়ে ভরাট করা হচ্ছে।

খানাকুলে বন্যার অনিবার্যতার প্রসঙ্গে জেলা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমার অন্যান্য এলাকার চেয়ে খানাকুলের দু’টি ব্লক সাধারণ অন্তত ১০ ফুট নীচে। গামলা বা কড়াইয়ের আকারে প্রায় ২৯৪ স্কোয়ার কিলোমিটার ওই বেসিন এলাকায় রয়েছে ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। যার ১৪৭টি মৌজায় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের বাস। পূর্বে মুণ্ডেশ্বরী, পশ্চিমে দ্বারকেশ্বর ও দক্ষিণে রূপনারায়ণ নদী দিয়ে ঘেরা এই দুই ব্লক এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে হরিণখালি, কানা দ্বারকেশ্বর, রামপুর খাল, রঢ়ার খাল, রণ খাল, খেটেদল খাল, তালযুগির খাল, শশাপোতার খাল ইত্যাদি অসংখ্য নদী সংযোগকারী খাল। খানাকুলে বৃষ্টির জমা জল এবং নদীর অতিরিক্ত জলের নিকাশির উপায় হিসাবে এই সব খালই ছিল ভরসা। যে গুলি দিয়ে ওই সব জল এসে পড়ত রূপনারায়ণ নদীতে। রূপনারায়ণ ওই জল নিয়ে যেত হুগলি হয়ে সমুদ্রে। কিন্তু পলি পড়ে এবং সংস্কারের অভাবে রূপনারায়ণ বহু জায়গায় আজ মজে যেতে বসেছে।

ঘোড়াদহে মোহন দাসের তোলা ছবি।

(চলবে)

Arambagh master plan flood Mohan Das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy