সাফাই: পুরসভার উদ্যোগে চলছে এলাকা পরিষ্কার। নিজস্ব চিত্র
বর্ষা হাজির পুরোদমে। তার হাত ধরে হানা দিচ্ছে জ্বরও। গত বছর ডেঙ্গির হামলার স্মৃতি এখনও টাটকা। এই অবস্থায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় কতটা তৈরি শহর শ্রীরামপুর? প্রশ্ন তুলছেন পুরবাসীই।
গত বছর শ্রীরামপুরের কয়েক হাজার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, শহরে একাধিক ফিভার ক্লিনিক খুলতে হয় প্রশাসনকে। জ্বরে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গি লেখা থাকলেও পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর তা স্বীকার করেনি— এমনও ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে পুরসভাকে নাজেহাল হতে হয়েছিল। গত পয়লা জুন তারকেশ্বরে হুগলি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়কে দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, গত বছর এখানে ডেঙ্গি পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ছিল, এ বার ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুর-কর্তৃপক্ষ কতটা তৈরি।
আদৌ কি অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে হুগলির এই শহর?
পুরসভার দাবি, চলতি বছর রাজ্য সরকারের নির্দেশে যথেষ্ট আগেই পথে নামে পুরসভা। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে পুরসভার তরফে সাফাই অভিযান শুরু হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান। মশার লার্ভা নিধনের জন্য তেল ছড়ানোর কাজ শুরু হয়। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, অক্টোবর মাস পর্যন্ত লাগাতার অভিযান চলবে। অনেক এলাকাতেই অবশ্য এখনও অভিযানের ছায়া পড়েনি বলে অভিযোগ।
পুরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল (জঞ্জাল ও জনস্বাস্থ্য) গৌরমোহন দে অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি মাসে দশ দিন করে বাড়ি বাড়ি অভিযান চলছে।’’ তাঁর দাবি, পুর-এলাকার বড় নিকাশি নালাগুলি সংস্কার করা হয়েছে। ম্যানহোল পরিস্কার করা হচ্ছে। এমনকী ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা কিছু পুকুরও পরিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘পুরকর্মীদের অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চান না বাসিন্দারা। এতে সমস্যা হয়। মানুষ সচেতন না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।’’
তবে পুর-কর্তৃপক্ষের স্বস্তি, এ বার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির কোনও রিপোর্ট আসেনি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বরের রোগী আসছেন। তবে বেশির ভাগই ভাইরাস-ঘটিত। কিন্তু চূড়ান্ত সতর্ক না থাকলে গত বারের পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযানে কেউ অসহযোগিতা করলে প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’ পতঙ্গবাহিত রোগ মোকাবিলায় গত দু’মাসের অভিযানের রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে আজ, বুধবার জেলা প্রশাসনের তরফে পুরসভাগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বিষয়টি তদারক করবেন। রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীরামপুরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির রিপোর্ট রয়েছে কি না, এই প্রশ্নে জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলে ওঠেন, ‘‘দুর্গা, দুর্গা!’’ এতেই পরিস্কার, গত বারের ডেঙ্গির দাপট কেমন আতঙ্কে রেখেছিল স্বাস্থ্য দফতর তথা প্রশাসনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy