পান্ডুয়ায় ছবিটি তুলেছেন সুশান্ত সরকার।
পান্ডুয়ার সিমলাগড়ে রেল লাইনের ধারের বালিখাদ। সেখানে দেখা গেল গোটা ছয়েক কিশোরকে দাঁড়িয়ে থাকতে। কারও গোফের রেখা গজায়নি। তাতে কী! অন্তত চার জনের হাতে সিগারেট জ্বলছে। টান দেখলেই বোঝা যায়, এ কাজে তারা রীতিমতো অভ্যস্ত। এই বয়সে সিগারেট খাওয়ার কারণ জানতে চাইলে এক জন ধোঁয়া ছাড়ার মতোই মুখের উপর সটান জবাব ছুড়ে দিল, ‘‘ভাল লাগে তাই খাই।’’ পান্ডুয়ার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমার কয়েক জন বন্ধু খায়।’’
মাসখানেক আগে চোখে দেখা দৃশ্যটা আসলে প্রতীকী। শুধু পান্ডুয়াই নয়। হুগলি জেলার নানা প্রান্তে তামাক-সহ অন্য মাদকদ্রব্যে আশক্তি বাড়ছে কিশোর-তরুণদের। বালিখাদে বসে থাকা ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ারা জানিয়ে দেয়, সিমলাগড় স্টেশনের আশপাশ থেকে তারা বিড়ি-সিগারেট কেনে। হাত খরচের টাকা থেকেই ধূমপানের খরচ চলে। বিড়ি হলে গোটা। সিগারেট হলে একটাতে দু’-তিন জনের হয়ে যায়। এক জনের আধখাওয়া সিগারেট নেওয়ার নাম যে ‘কাউন্টার’-তাও দিব্যি জানে স্কুল পড়ুয়ারা।
সন্ধ্যা ঘনালে শ্রীরামপুরের কলেজ ঘাট, রায়ঘাট-সহ গঙ্গার ধারে ছোটদের মুখে সিগারেট দেখা যায়। একই চিত্র উত্তরপাড়াতেও। শ্রীরামপুরে স্কুলের সামনে জিটি রোডের ধারে আড়াল খুঁজে নিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের সিগারেট ফুঁকতে দেখা যায়। পান্ডুয়ার সিমলাগড় শুটকিপাড়া, মহানাদ চৌমাথা, পান্ডুয়া ফুটবল মাঠের আশপাশেও আঠারো না পেরনো ছেলেদের সিগারেট, বিড়ি খেতে দেখা যায়। কিন্তু প্রশাসনের তো টনক নড়ে না।
মনোবিদ মোহিত রণদীপ মনে করেন, ‘‘ছোটদের হাতে সিগারেট-সহ অন্য নেশার জিনিস যাতে সহজে না পৌঁছয় সেই ব্যবস্থা করা দরকার। সরকারকে কড়া নজরদারি করতে হবে।’’ মাদক-বিরোধী আইন সরকারকে কড়া হাতে কার্যকর করতে হবে বলে অভিমত পোষণ করেন পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। বলাগড়ের বাকুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নিবেদিতা সাহা বলেন, ‘‘যাতায়াতের পথে প্রায়ই ছোটদের সিগারেট খেতে দেখি। খুব খারাপ লাগে। এটা বন্ধ করতে প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ নিক।’’
এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিক্রিতাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই। চুঁচুড়ার খাদিনামোড়ের সিগারেট বিক্রেতা নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘ছোটদের সিগারেট দিতে চাই না। না দিলে আজকাল ছেলেরা দল বেঁধে এসে ঝামেলা পাকায়। বাধ্য হয়ে দিতে হয় তাদের।’’ আবার কিছু কিছু বিক্রেতা ওই সব কিশোরদের পরিবারের দিকে আঙুল তুলেছেন। পান্ডুয়ার কালনা-রোড মোড়ে এক দোকানির কথায়, ‘‘মাঝে মধ্যে দেখি বড়রা মোটরবাইকে বসে ছোটদের সিগারেট কিনতে পাঠাচ্ছেন। এটাও বন্ধ হওয়া উচিৎ।’’ সিমলাগড়ের শুঁটকিপাড়ার এক দোকানি বলেন, ‘‘অনেক বাচ্চাই সিগারেট কিনতে আসে। জিজ্ঞাসা করলে বলে, বাবার জন্য কিনতে এসেছে। তখন দিয়ে দিই।’’
মশাটের সিগারেট বিক্রেতা বিকাশ ঘোষাল বলেন, ‘‘বাড়ির বাবা-কাকারা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সিগারেট কিনতে পাঠায়। আমি না দিলে তারা অন্য দোকান থেকে কিনবে। তখন নিজেদের লাভ দেখতে হয়।’’ তবে বিক্রেতাদের দাবি, যদি সরকার নিয়ম করে সব দোকানে ১৮ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝোলাতে বাধ্য করে, তা হলে ভাল হয়। হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য অবশ্য দাবি করেন, ছোটরা নেশা করছে, এমন অভিযোগ পেলে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy