Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বছর এল শব্দদূষণেই

দুই জেলাতেই ইংরেজি নতুন বছর এল শব্দদূষণে ভর করে।

উদ্দাম: পুলিশের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ডিজে বাজিয়ে নাচ পান্ডুয়া ডিভিসি পাড়ে। ছবি: সুশান্ত সরকার

উদ্দাম: পুলিশের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ডিজে বাজিয়ে নাচ পান্ডুয়া ডিভিসি পাড়ে। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৩
Share: Save:

ছবিটা এ বারও বদলাল না।

দুই জেলাতেই ইংরেজি নতুন বছর এল শব্দদূষণে ভর করে। ডিজে এবং শব্দবাজির দাপটে কান ঝালাপালা হল বহু মানুষের। তা বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতারও তেমন চোখে পড়ল না।

শব্দবাজি এবং ডিজে-র তাণ্ডব রুখতে হুগলিতে নাগরিকদের একাংশ অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন। দুই জেলায় পরিবেশকর্মীরাও সক্রিয়। কিন্তু পুজোর মরসুমে ডিজে এবং শব্দবাজি রুখতে পুলিশ প্রশাসনের যে তৎপরতা দেখা যায়, বর্ষবরণের দিনে এবং তার আগের রাতে সে উদ্যোগ কোথায়? প্রশ্ন পরিবেশকর্মীদের।

অথচ, উদ্যোগী হলে যে ডিজে-র উৎপাত রোখা যায়, বুধবার নতুন বছরের প্রথম দিনে তা দেখিয়ে দিয়েছেন আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল। জয়পুরের সিয়াগড়িতে দামোদর ও রূপনারায়ণের সংযোগকারী খাল শর্টকাট চ্যানেলের ধারে এ দিন অনেকে পিকনিক করতে আসেন। সেখানে প্রথম দিকে জোরে ডিজে বাজছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেদের নিয়ে সেখানে যান সুকান্তবাবু। তাঁদের অনুরোধে সবাই ডিজের শব্দ কমিয়ে দেন। সুকান্তবাবু বলেন, ‘‘এখানে এখন শীতকালে বহু পরিযায়ী পাখি আসে। জোরে ডিজে বাজলে সেই সব পাখির সমস্যা হয়। সেটা আমরা পিকনিকে আসা লোকজনকে বোঝাই। তাঁরা নিজেরাই ডিজে-র শব্দ কমিয়ে দেন।’’

ব্যতিক্রম শুধু সিয়াগড়ি। এ ছাড়া দুই জেলার প্রায় সর্বত্রই বোতল থেকে বেরিয়ে আসে শব্দদানব। হুগলির উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, আরামবাগ বা হাওড়ার বাগনান, উলুবেড়িয়া-সহ প্রায় সর্বত্রই ছবিটা ছিল একই রকম। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকেই শব্দবাজির তাণ্ডবের শুরু। রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শব্দবাজির দাপট ছিলে সবচেয়ে বেশি। কোথাও কোথাও তা রাত ২টো পর্যন্ত ফেটেছে। বাগনানের মুর্গাবেড়িয়া গ্রামে এত জোরে ডিজে বাজছিল যে তা অনেক দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। পরিবেশকর্মী জয়িতা কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমাকে ওখানকার কয়েকজন ফোন করে জানান ডিজে-র প্রকোপে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’ জয়িতার দাবি, তিনি থানায় বিষয়টি জানানোর পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ডিজে-র প্রকোপ কিছুটা কমে।

চুঁচুড়ার বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষিকা সোমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে যা শুরু হয়েছিল, তা কালীপুজোর রাতকেও হার মানায়। রাতে তো পুলিশ রাস্তায় থাকে। বাজির আওয়াজ তাঁদের কানে পৌঁছয় না?’’ শ্রীরামপুরের এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এখানে বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান তারস্বরে বক্স বাজানো বা শব্দবাজি ফাটানো রীতি হয়ে গিয়েছে। আমাদের মতো মানুষের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে পুলিশের কোনও হেলদোল নেই।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশ‌নার হুমায়ুন কবীর অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে আমি রাস্তায় ছিলাম। বাজির দাপট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।’’

রাত শেষে বুধবার সকালেও শব্দদানবের হাত থেকে রেহাই মেলেনি আমজনতার। শব্দবাজির পরিবর্তে শুরু হয়ে যায় পিকনিক দলের ডিজে-র দৌরাত্ম্য। বলাগড়ের সবুজদ্বীপ, পান্ডুয়ার ডিভিসির পাড় এবং পোলবার চন্দ্রদিঘির পার্কের কাছে ডিজে বাজিয়ে মদ্যপদের নাচতে দেখা যায়। সিঙ্গুরের নিউ দিঘা পার্কের বাইরে কাঠ-কুন্তী নদীর পাড়ে অবাধে বেজেছে ডিজে। আরামবাগের চাঁদুর বনে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭টি ডিজে বক্স বেজেছে বলে বনকর্মীদের অভিযোগ। উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বর সেচ বাংলো, মহিষরেখা থেকে শুরু করে বাগনানের পানিত্রাস, নাউপালা সর্বত্রই চড়ইভাতি করতে আসা লোকজন তারশ্বরে ডিজে বাজাতে থাকেন। এ নিয়ে নাউপালাতে পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনের তর্কাতর্কিও বেঁধে যায়। চড়ুইভাতি করতে আসা কয়েকজনের বিরুদ্ধে পরিবেশকর্মীরা পুলিশের কাছে হেনস্থার অভিযোগ জানান।

কেন এ বারও আটকানো গেল না ডিজে?

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বর্ষবরণের দিনে মানুষ একটু উৎসবের মেজাজে থাকেন। ফলে, সবসময় কঠোর হওয়া যায় না। তবে জোরে ডিজে বাজানো বা শব্দবাজির প্রকোপ নিয়ে তাঁরা নজর রেখেছিলেন ওই পুলিশকর্তা দাবি করেন। জেলা পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বলেন, ‘‘আমরা সর্বত্রই নজর রেখেছিলাম। যাঁরা জোরে ডিজে বাজাচ্ছিলেন, তাঁদের বারণ করেছি।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘মদ খেয়ে জোরে বাইক চালানো এবং ডিজে বাজানো-সহ বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশ মোট ১০১ জনকে আটক করেছে। আমরা কমিশনারেট এলাকায় আর ডিজে বাজাতে দেব না।’’

কিন্তু বহু মানুষেরই আশঙ্কা, আগামী বছর ফের ‘স্বমহিমায়’ হাজির হবে শব্দদানব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE