Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কার হোক নিম্ন দামোদর, চায় সেচ দফতর

গত তিন বছর ধরে সেচ দফতর লাগাতার ভাবে দামোদরের বাঁধ সংস্কার করেছে। তার পরেও সেই বাঁধ কী ভাবে ভাঙল সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। জলমগ্ন এলাকার অনেকটাই রয়েছে আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

নতুন করে বৃষ্টি সেভাবে হয়নি। জলও ছাড়েনি ডিভিসি। তাই হাওড়া ও হুগলির জলমগ্ন অনেক এলাকা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনও জল জমে রয়েছে খানাকুল ২ এবং আমতা ২ ব্লকের কয়েকটি এলাকায়। সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তাদের দাবি, নিম্ন দামোদর সংস্কার না হওয়াতেই এ বারের

বন্যা পরিস্থিতি।

জল নামার পরে গ্রামীণ হাওড়ায় বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। এ বার ডিভিসির ছাড়া দামোদরের বাঁধের প্রায় ৪০টি জায়গা ভেঙে গিয়েছে। বুধবার উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়োয় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

গত তিন বছর ধরে সেচ দফতর লাগাতার ভাবে দামোদরের বাঁধ সংস্কার করেছে। তার পরেও সেই বাঁধ কী ভাবে ভাঙল সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। জলমগ্ন এলাকার অনেকটাই রয়েছে আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। ওই কেন্দ্রের বিধায়ক অসিত মিত্রের অভিযোগ, ‘‘কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও আদৌ বাঁধ মেরামতির কাজ ঠিকমতো হয়েছে কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’’

সেচ দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, ডিভিসি অতিরিক্ত জল ছাড়ার জন্যই বাঁধ ভেঙেছে। ডিভিসি কম করে জল ছাড়লে সমস্যা হত না। তাঁদের মতে, বর্ধমানের জামালপুরের বেগুয়াহানা থেকে হাওড়ার শ্যামপুরের গড়চুমুক পর্যন্ত দামোদরের অংশটি কার্যত ডিভিসি-র ‘নিকাশি খাল’-এ পরিণত হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টি হলেই ডিভিসি-র ছাড়া জল বেগুয়াহানা থেকে মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদরে এসে পড়ে।

সেচ দফতরের কর্তারা জানান, ‘নিম্ন দামোদর’ বলে পরিচিত ওই অংশে ১৯৭৪ সালে শেষ বার নাব্যতা বাড়ানোর কাজ হয়েছিল। এছাড়া পরিবেশ দফতরের নির্দেশে গত দু’বছর ধরে হাওড়ায় বালি তোলা বন্ধ। তাই নদীর গভীরতা বাড়েনি। এই সব কারণেই বার বার ডুবছে দামোদর সংলগ্ন দুই ব্লক।

মঙ্গলবার রাতে খানাকুল ২ ব্লকের জগৎপুরে সর্পদষ্ট হয়েছিলেন অসীমা ওরফে রেবতী মাইতি (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। বুধবার সকালে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। দিন কয়েক আগে খানাকুল ১ নম্বর ব্লকের বামনখোলা গ্রামের অদিতি সামন্ত (৩) নামের এক শিশু সাপের ছোবলে মারা যায়। কিন্তু তার দেহের ময়না-তদন্ত হয়নি। বিষয়টি বুধবার জানতে পারে প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার যে জায়গাগুলি থেকে জল নেমেছে, সেখানে নলকূপ পরিশোধন-সহ অন্যান্য পুনর্গঠন শুরু করেছে। স্বাস্থ্য দফতর এবং পঞ্চায়েত যৌথভাবে ব্লিচিং পাউডার ছড়াচ্ছে। পূর্ত দফতর ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলির খতিয়ান নেওয়া শুরু হয়েছে। আরামবাগ শহরের জুবিলি পার্ক সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর ভাঙ্গা বাঁধটি মেরামত করা হচ্ছে। খানাকুল ২ ব্লকের বিডিও সুজিতকুমার রায় বলেন, “১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাড়োখানা এবং জগৎপুর জলমগ্ন রয়েছে। এছাড়া চিংড়া, রাজহাটি ১ ও ২, শাবলসিংহপুর, পলাশপাই ১ ও ২ এবং ধান্যগোড়ির কিছু জায়গায়
জল রয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরেই ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। বুধবার বিকালে ত্রাণের দাবিতে গোঘাটের কুমুড়শা পঞ্চায়েতে চড়াও হয়ে ইট ছোড়েন স্থানীয় হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত ঘেরাও হয়। সমস্যা মেটাতে প্রশাসনিক স্তর ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন-সহ বিভিন্ন সংগঠন, ক্লাব এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্তদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। গত ৩০ জুলাই থেকে পুরশুড়া এবং খানাকুলের বিভিন্ন গ্রামে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য ফিশারি অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের হুগলি শাখা এবং কল্যাণ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনও ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে। বুধবার আরামবাগ বয়েজ স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা খানকুলের বন্দর এবং সংলগ্ন এলাকায় ত্রাণ বিলি করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE