Advertisement
E-Paper

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শাঁখা-সিঁদুর

গল্প-গাথায় জড়িয়ে থাকা রাজা রণজিৎ রায়ের চালু করা ‘দিঘির মেলার’ ঐতিহ্য পাকা কাঁচকলা বিক্রি। সেই ঐতিহ্য আর নেই বললেই চলে। কমে গিয়েছে মুদিখানার সরঞ্জাম, কাঠের দরজা-জনালা-খাটের পসরা, তাল পাতার পাখা, মাছ ধরার ফলুই বিক্রি। তবে আরামবাগের ডিহিবয়রা গ্রামের প্রাচীন এই মেলায় শাঁখা-সিঁদুর ব্যবসাটি শুধু অম্লান আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৯
দিঘির মেলায় হাজির হয়েছে ডান্স। ছবি: মোহন দাস।

দিঘির মেলায় হাজির হয়েছে ডান্স। ছবি: মোহন দাস।

গল্প-গাথায় জড়িয়ে থাকা রাজা রণজিৎ রায়ের চালু করা ‘দিঘির মেলার’ ঐতিহ্য পাকা কাঁচকলা বিক্রি। সেই ঐতিহ্য আর নেই বললেই চলে। কমে গিয়েছে মুদিখানার সরঞ্জাম, কাঠের দরজা-জনালা-খাটের পসরা, তাল পাতার পাখা, মাছ ধরার ফলুই বিক্রি। তবে আরামবাগের ডিহিবয়রা গ্রামের প্রাচীন এই মেলায় শাঁখা-সিঁদুর ব্যবসাটি শুধু অম্লান আছে।

বর্তমানে মেলায় ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটেছে বুগি বুগি ডান্স, জুয়া আর হাঁড়িয়া ও চোলাই ঠেকের। দশ দিনের মেলা খাতায় কলমে শেষ হয়েছে বুধবার। কিন্তু বুগি বগি ডান্সের চাহিদায় আরও দিন কয়েক চলবে মেলাটি। মেলা কমিটির সম্পাদক তথা রাজার বংশধর ভবানী রায় অবশ্য বলেন, ‘‘কমিটির অনুমতি না নিয়েই আমাদের বংশের কিছু যুবক মেলায় ঐতিহ্য বিরোধী কিছু ব্যবস্থপনা করেছে। এগুলি পরের বার থাকবে না।’’

অনুপ্রবেশ থাকবে কি থাকবে না আপাতত সেই বিতর্ক দূরে থাক। তবে মেলা শুরু হয়েছিল কী ভাবে? অনেকের সঙ্গে কথা মেলার প্রকৃত বয়স জানা যায়নি। তবে গড়বাড়ির রাজা রণজিৎ রায়ের খনন করা দিঘির পাড়ে আমবারুণী উপলক্ষে এই মেলা বসে। কথিত আছে রাজার শিশু কন্যা আমবারুণীর দিন ওই দিঘিতে ডুবে মারা যায়। ডুবে যাওয়ার আগে সে এক শাঁখারির কাছে শাঁখা পরে। ওই শাঁখারি রাজাকে রাজকন্যার দিঘির জলে অন্তর্ধানের খবর দিয়ে শাঁখার দাম চান। রাজা দিঘির কাছে মেয়েকে হাঁক দিয়ে ডেকে, সে কেমন শাঁখা পরেছে দেখতে চান। তখন শাঁখা পরা হাত দু’টি জলের উপরে দেখা যায় বলে কথিত আছে। সেই শাঁখা পরা হাত দেখতে এতই ভিড় হয় যে, সেদিন থেকেই মেলা চালু হয়। তখন থেকেই বারুণীর দিন ওই দিঘিতে স্নানের রেওয়াজ চালু হয়। রায় পরিবার বংশপরম্পরায় শুনে এসেছেন— এই দিঘি খনন হয় মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে। দলিলে দিঘিটির জল এলাকা ১২ একর ৭২ শতক। চারদিকের পাড় এলাকা ১২ একর ৮৪ শতক জায়গা নিয়ে। বছর তিরিশ আগে পর্যন্ত পুকুরের চার পাড় জুড়ে মেলাটা বসত। পশ্চিম পাড়ে হাত পাখা, ময়না-টিয়া সহ নানা পাখি, আর মুদিখানার যাবতীয় সরঞ্জাম, পূর্ব পাড়ে শুধু পাকা কাঁচকলা এবং জিলিপি, দক্ষিণ পাড়ে থাকত মাদুর, ফলুই, কাঠের দরজা-জানালা-খাট ইত্যাদি। উত্তর পাড়ে থাকত মিশ্র দোকান যেমন লাঙ্গল, জোয়াল, গরুর গাড়ির চাকা, নানা ধরনের মিস্ত্রিদের যন্ত্রপাতি, কাচের চুড়ি, কড়াই ইত্যাদি। দিঘির মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল— পাকা কাঁচকলা মুড়িতে মাখিয়ে খাওয়া। এ ছাড়া মেলা থেকে সারা বছরের মুদিখানার শুকনো লঙ্কা, গোটা হলুদ, জিরে, ধনে, পোস্ত, ডাল ও কলাই কিনে নিয়ে গরুর গাড়িতে ফিরে যেতেন মানুষ। বর্ধমান-বাঁকুড়া এবং অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা থেকেও গরুর গাড়ি নিয়ে দর্শনার্থীরা আসতেন।

এই মেলা করার জন্য জেলা পরিষদের অনুমতি নেওয়া হয়। পুলিশ ক্যাম্পেরও দাবি জানানো হয়। যদিও পুলিশ থাকে না বলে অভিযোগ। মাঝে মধ্যে এলেও জুয়া বা মদের ঠেকগুলো থেকে টাকা নিয়ে পালায়। এই মেলাকে যথাযথ টিকিয়ে রাখার জন্য জেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেছে মেলা কমিটি। তবে বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, আপাতত প্রাচীন এই মেলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে শাঁখা-সিঁদুর ব্যবসা।

fair
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy