Advertisement
E-Paper

চোদ্দো বছরে প্রতিদিন স্কুলে, পুরস্কার অনুষ্কাকে

নজিরবিহীন হাজিরায় চন্দননগরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তাদের সদ্যপ্রাক্তন ছাত্রী অনুষ্কা সাবুইকে পুরস্কৃত করল। তবু কিঞ্চিত আফসোস তরুণীর গলায়, ‘‘বুলবুলের জন্য গত মাসে তিন-চার দিন কলকাতায় কলেজে যেতে পারিনি। না হলে ছ’মাসে কলেজেও কোনও দিন কামাই হত না। হাওড়া পর্যন্ত গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। কলেজের সামনে জল জমে গিয়েছিল।’’

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৫
স্বীকৃতি: উপহার হাতে অনুষ্কা। —নিজস্ব চিত্র।

স্বীকৃতি: উপহার হাতে অনুষ্কা। —নিজস্ব চিত্র।

একদিনের জন্যেও কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি।

না রোদ, না বৃষ্টি, না ঝড়, না অসুস্থতা। টানা ১৪ বছর প্রতিদিন তিনি স্কুলে হাজির!

এমন নজিরবিহীন হাজিরায় চন্দননগরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তাদের সদ্যপ্রাক্তন ছাত্রী অনুষ্কা সাবুইকে পুরস্কৃত করল। তবু কিঞ্চিত আফসোস তরুণীর গলায়, ‘‘বুলবুলের জন্য গত মাসে তিন-চার দিন কলকাতায় কলেজে যেতে পারিনি। না হলে ছ’মাসে কলেজেও কোনও দিন কামাই হত না। হাওড়া পর্যন্ত গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। কলেজের সামনে জল জমে গিয়েছিল।’’

চন্দননগরের বড়বাজারের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী সুজিত সাবুইয়ের দুই মেয়ের মধ্যে অনুষ্কা ছোট। বড় মেয়ে অনসূয়া ওই স্কুলেই পড়তেন। তিনিও কোনও দিন স্কুল কামাই করেননি। আট বছর আগে তিনি স্কুল থেকে পাশ করে যান। তখন স্কুলে হাজিরার জন্য পুরস্কার চালু হয়নি।

দিদির দেখানো পথে হেঁটেই এ বার পুরস্কার জিতে নিলেন অনুষ্কা। ২০০৫ সালে ওই স্কুলের নার্সারিতে ভর্তি হন তিনি। এ বছর আইএসসি পাশ করে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ভর্তি হয়েছেন। সম্প্রতি স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানেই তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়মিত হাজিরা থাকায় সহপাঠীদের বড় ভরসার জায়গা হয়ে গিয়েছিলেন অনুষ্কা। কারণ, তাঁদের কেউ স্কুলে গরহাজির হলেও জানতেন, অনুষ্কা আছে। পড়াশোনা জেনে নেওয়া যাবে। স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘ওঁর ১০০ শতাংশ হাজিরা দেখে আমরাও অবাক। স্কুলের প্রতি এই ভালবাসাও নজিরবিহীন। ও অন্য ছাত্রীদের কাছে অনুপ্রেরণা হবে।’’ কেন রোজ স্কুলে যেতেন অনুষ্কা? ওই কলেজ ছাত্রীর কথায়, ‘‘আসলে স্কুলে না যাওয়ার কথা কোনও দিন মাথাতেই আসেনি। দিদিকে দেখতাম, অসুবিধে সত্ত্বেও ও প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে। তাই আমিও সেটা অনুসরণ করি। পড়াশোনারও অনেক সুবিধে হয়।’’

মেয়ের শরীর খারাপ হলে তাঁরা অবশ্য স্কুলে যেতে বারণ করতেন বলে জানান সুজিতবাবু। কিন্তু সেই বারণ শোনে কে? সুজিতবাবু বলেন, ‘‘কতদিন ওকে অসুখ-বিসুখে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলেছিলাম। কিন্তু ও ওষুধ খেয়ে চলে গিয়েছে। নিজে থেকে কোনও দিন স্কুলে যাবে না বলেনি। শুধু হাজিরা নয়, পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ও খুব নিয়ম মেনে চলে।’’
শিক্ষাবিদদের অনেকে মনে করছেন, অনুষ্কার কথা অনেক ছাত্রছাত্রীর প্রেরণা জোগাবে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সনৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ধরনের স্কুলমুখী ছাত্রী দেখাই যায় না। বর্তমানে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করতে গিয়ে স্কুলের প্রতি পড়ুয়ার আনুগত্য কমে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কোনও কামাই না করে ১৪ বছর একটানা স্কুলে হাজির হয়ে ছাত্রীটি নজির গড়েছে।’’

Education Hooghly Chandannagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy