পড়ুয়াদের মাঝে প্রধান শিক্ষক সুনীল দলুই। ছবি: সুব্রত জানা।
তাঁর হাত ধরেই স্কুলের উন্নতি। ফলে তাঁকে বাদ দিয়ে স্কুল চলতে পারে না। তাঁর অন্য স্কুলে যাওয়া চলবে না।
হাওড়ার জয়পুরের কাশমলি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দলুইকে ওই স্কুলেই আটকে রাখতে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকেরা গত দু’দিন ধরে আন্দোলনে সামিল ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁদের ছেড়ে না যাওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের প্রতিশ্রুতি পেলে আন্দোলন থামে।
মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামবাসীদের মাঝে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসার দাবির কাছে আমি পরাজিত। ঠিক করলাম এই স্কুল ছেড়ে যাব না। চাকরিজীবনের বাকি কয়েকটা দিন এখানেই থাকব।’’ এর পরেই ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে কার্যত মিছিল করে প্রধানশিক্ষক স্কুলে তাঁর নিজের ঘরে ঢোকেন।
কেন বদলি চেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক? সুনীলবাবুর কথায়, ‘‘১৯৯৭ সালে এখানে প্রধানশিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দিই। কিন্তু বর্তমানে শরীর ভাল যাচ্ছে না। তাই বাড়ির কাছে বাগনান গোপীমোহন বিদ্যানিকেতনে বদলি চেয়ে আবেদন করি। স্কুল সার্ভিস কমিশন সেই আবেদন মঞ্জুর করে।’’ প্রধান শিক্ষক অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছেন জানতে পেরে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের আন্দোলন শুরু হয়। সোমবার স্কুলে এলেও ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করেনি। মিড ডে মিলও খায়নি। তাদের একটাই দাবি, ‘প্রধান শিক্ষকের স্কুল ছেড়ে যাওয়া যাবে না’। তিনি যে এই স্কুলেই থেকে যাবেন সে কথা ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা ক্লাস করবে না বলেও ছাত্রছাত্রীরা জানিয়ে দেয়। মঙ্গলবার সুনীলবাবু স্কুলে এলে তাঁকে ঘিরে ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত তিনি জানিয়ে দেন স্কুল ছেড়ে যাচ্ছেন না।
গ্রামবাসীরা জানান, ’৯৭ সালে প্রধান শিক্ষক যখন স্কুলে যোগ দেন তখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল মোটে ৬০০। বর্তমানে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৩০০। স্কুলের তিনতলা ভবন। সবই হয়েছে সুনীলবাবুর আমলে। একাদশ শ্রেণির মন্দিরা বাগের কথায়, ‘‘প্রধান শিক্ষক চলে গেলে আমাদের স্কুল আর চলবে না। তাই স্যারকে যেতে দেওয়া চলবে না।’’ গ্রামবাসী সেখ ফিরোজ আহমেদ, মনোরঞ্জন মণ্ডল, লতিকা মণ্ডল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা বই কিনতে না পারলে প্রধান শিক্ষক তাদের টাকা দেন। এমন শিক্ষককে আমরা যেতে দেব না।’’
তবে সুনীলবাবুর বদলি চাওয়া নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ গুটিকয় শিক্ষক-শিক্ষিকার উপর। তাঁদের অভিযোগ, ওই সব শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলের শৃঙ্খলা মানেন না। প্রধান শিক্ষক তাঁদের নিয়ম মানতে বলেছিলেন। তাই তাঁর সঙ্গে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বনিবনা হচ্ছিল না। সে জন্যই তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy