স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাদুড়িয়া-কাণ্ডের জেরে এই পরিষেবার ঘৃণ্য দৃশ্য সকলের নজরে এসেছে। স্বভাবতই এই দৃশ্য সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে হাওড়া-হুগলি জেলা প্রশাসনও।
হাওড়ার মতো হুগলি জেলার নার্সিংহোমগুলির হাল-হকিকত খতিয়ে দেখতে এ বার স্বাস্থ্য দফতর নজরদারি শুরু করল। নার্সিংহোমগুলির উপর কড়া নজর রাখার পাশাপাশি শীঘ্রই প্রতিটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠাচ্ছে প্রশাসন। নিয়ম নেমে সব কাজ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বিশেষত যে সব নার্সিংহোমে প্রসব করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের নার্সিংহোমগুলির পরিস্থিতি জানতে ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তা হলে কি নার্সিংহোমগুলির উপরে এত দিন নজরদারি ছিল না? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক নার্সিংহোমের উপর নজর রাখে মূলত সিএমওএইচ বা এসিএমওএইচ-এর দফতর। হুগলির সিএমওএইচ শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শহরাঞ্চলের যে নার্সিংহোমগুলিতে সরকারি নজরদারি রয়েছে। সেই নজরদারি আরও বাড়ানো হল। এর পাশাপাশি গ্রামের নার্সিংহোমগুলির উপর নজর রাখতে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের পরিকাঠামোকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা যাই দাবি করুন, জেলার নার্সিংহোমগুলি নিয়ে প্রায়ই নানা অভিযোগ ওঠে। বহু ক্ষেত্রেই চড়া হারে টাকা নিয়েও পরিষেবা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ ওঠে। হুগলিতে সরকারি তথ্য অনুয়ায়ী এই মুহূর্তে অন্তত দেড়শো নার্সিংহোম আছে। বিভিন্ন সময়ে নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামোগত নানা ত্রুটি নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তোলেন। নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নেওয়ার যেমন অভিযোগ আছে, তেমনি চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ডাক্তারদের ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ আছে। এর মধ্যে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে বেআব্রু হয়ে পড়ে পুরো পরিকাঠামো। ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে তখন।
নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে যতই নানা অভিযোগ উঠুক, প্রয়োজনে তাদের উপর নির্ভর করতে হয় মানুষজনকে। কিন্তু বাদুড়িয়ার ঘটনার পরে স্থানীয় নার্সিংহোমগুলির উপর ঠিক কতটা নির্ভর করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এ বার থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সর্তকতার সঙ্গে পা ফেলতে চাইছে। কিন্তু শুধু নার্সিংহোম নয়, সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ নিয়েও অনেক সময়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শোনা যায়। সেই সব পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? শিশু পাচারের মতো ঘটনাই বা কী ভাবে সামাল দেবে সরকারি হাসপাতালগুলি?
এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে নার্স ছাড়াও যে সব স্পেশাল অ্যাটেনডেন্স (আয়া) থাকেন তাঁরা সরকারি তালিকাভুক্ত। তাঁদের উপরও এখন প্রতিটি হাসপাতালে থাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি ব্যবস্থা চালু আছে।’’
কেমন ব্যবস্থা
• নার্সিংহোমগুলির সঠিক পরিকাঠামো, নথি ও কাগজপত্র যথাযথ আছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে।
• কোনও নার্সিংহোম নিয়ে মানুষের অভিযোগ থাকলে সেই অভিযোগের ঠিক কী ধরনের, সেই অভিযোগের সারবত্তা আছে কি না তা দেখবে স্বাস্থ্য দফতর।
• নার্সিংহোমগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সরকারি পরিকাঠামোকে আরও বেশি করে কাজে লাগাবে স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্র: হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy