Advertisement
০২ মে ২০২৪
গোঘাট

ডাইনি অপবাদ, এ বার বধূকে বাঁচালেন শিক্ষক

ঠিক এক মাসে আগে গোঘাটের খাটগ্রামের আদিবাসী পাড়ার এক প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে নিগ্রহের চেষ্টা হয়েছিল। চার যুবকের প্রতিবাদে রক্ষা পেয়েছিলেন প্রৌঢ়া।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

ঠিক এক মাসে আগে গোঘাটের খাটগ্রামের আদিবাসী পাড়ার এক প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে নিগ্রহের চেষ্টা হয়েছিল। চার যুবকের প্রতিবাদে রক্ষা পেয়েছিলেন প্রৌঢ়া।

শুক্রবার সেই খাটগ্রাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে গোঘাটেরই গোয়ালসারা গ্রামে একই ভাবে এক আদিবাসী বধূ নিরাপত্তা পেলেন স্থানীয় এক মাদ্রাসা-শিক্ষকের তৎপরতায়। এল পুলিশ। গ্রেফতার করল এক মোড়ল, জানগুরু-সহ সাত জনকে।

ডাইনি-প্রথার মতো কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোঘাটে প্রচার-অভিযান চলছে। কিন্তু তার মধ্যেই কোথাও কোথাও মহিলাদের ‘ডাইনি’ অপবাদ দেওয়ার কথা সামনে চলে আসছে। যেমন এল শুক্রবার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন দশেক ধরে মাঝেমধ্যেই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন গোয়ালসারা গ্রামের ওই বধূ। পড়শিদের পরামর্শ অনুযায়ী গত মঙ্গলবার ওই বধূকে নিয়ে তাঁর মা গ্রামেরই জানগুরু লখিন্দর টুডুর কাছে যান। সঙ্গে পড়শিরাও ছিলেন। জানগুরু জানিয়ে দেয়, বধূর উপর ‘ডাইনি’ ভর করেছে। বধূর মায়ের অভিযোগ, জানগুরুর কাছ থেকে ফেরার পর থেকেই এক বছর ধরে গ্রামবাসী থেকে গরু-ছাগলের অসুখ, মৃত্যু— সব মেয়ের কারণেই হয়েছে বলে হুমকি-সহ মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।

এ নিয়ে শুক্রবার চূড়ান্ত সালিশি সভার আয়োজন করেন গ্রামের দুই মোড়ল— বাবু সরেন এবং মোহন্ত মান্ডি। অন্য গ্রাম থেকেও কয়েক জন মোড়ল আসেন। মোড়লেরা বধূর সাজা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে যখন জল্পনা চলছে, তখন বধূর মা গ্রামের জুনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক শেখ আনোয়ার আলির কাছে গিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান। আনোয়ার পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় দুপুর একটা নাগাদ। তখন সালিশি সভার তোড়জোড় চলছে। বধূর বাড়ির উঠোনে মোড়ল এবং পড়শিরা হাজির। চলছিল কটূক্তি, হুমকি। পুলিশ দেখেই মোড়ল বাবু সরেন পালায়। মোহন্ত মান্ডি, লখিন্দর টুডু -সহ সাত জনকে পুলিশ ধরে।

আনোয়ার বলেন, ‘‘বধূর মা এসে আমায় জানান, তাঁর মেয়েকে পুড়িয়ে মারা বা মারধর করে পাড়াছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই আর দেরি করিনি। পুলিশকে জানাই।’’ আনোয়ারের তৎপরতায় রক্ষা পেয়ে ওই বধূ বলেন, ‘‘ওই শিক্ষককে ধন্যবাদ। জানগুরু ভুল বোঝানোয় গ্রামবাসীদের অনেকে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। আমি যাতে এ বার গ্রামে ভাল ভাবে থাকতে পারি, প্রশাসন সেটা দেখুক।’’ পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। খাটগ্রামের মনোরঞ্জন হাঁসদা বলেন, ‘‘আমরাও ওই গ্রামে গিয়ে মানুষকে এ বিষয়ে বোঝাব।’’

গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও অসিতবরণ ঘোষ জানান, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চলছে। মানুষ সেই প্রচারে ভিড়ও করছেন। তারপরেও একই ঘটনা ঘটায় প্রশাসনিক ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Witch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE