Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফিরে কী দেখব, নতুন আতঙ্কে ফিরদৌসরা 

ফিরদৌসের ভাবনা, ‘‘যা পরিস্থিতি তৈরি হল, তাতে পর্যটক কি আর যাবেন কাশ্মীরে! কী ভাবেই বা যাবেন? রোজগার বন্ধ হবে আমাদের। সংসার চলবে না।’’

সম্ভার: চলছে শাল বেচাকেনা। উলুবেড়িয়ায়। —নিজস্ব চিত্র

সম্ভার: চলছে শাল বেচাকেনা। উলুবেড়িয়ায়। —নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৩
Share: Save:

ঘরে ফেরার সময় হয়ে এল, কিন্তু আনন্দের রেশ মাত্র নেই ফিরদৌসদের মুখে। বাগনান-উলুবেড়িয়ার ‘শালওয়ালা’ বাসার হোসেন মির, ফিরদৌস আহমেদ মল্লিকদের রাতের ঘুম উড়েছে, ‘‘বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে। কী করছে ওরা, এরপর কী হবে!’’

১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলার পর তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে আতঙ্ক গ্রাস করেছিল উলুবেড়িয়ায় থাকা কাশ্মীরি ব্যবসায়ীদের। সে সময় তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলেন এলাকার বাঙালিরা। সারা দেশে হিংসা ছড়ালেও ফিরদৌসদের গায়ে আঁচড়টুকু লাগতে দেননি তাঁরা। কিন্তু এ বার ফিরদৌসরা চিন্তায় নিজের বাড়ি নিয়ে।

পুজোর পর থেকে মার্চ পর্যন্ত ‘শীত-কাতুরে’ বাঙালিকে শাল-কম্বলের ভরসা জুগিয়ে ওঁরা ফিরে যান কাশ্মীরে। মার্চের পর থেকে সেখানে পর্যটন মরসুমে। তখন সেখানেই রুজি। ফিরদৌসের ভাবনা, ‘‘যা পরিস্থিতি তৈরি হল, তাতে পর্যটক কি আর যাবেন কাশ্মীরে! কী ভাবেই বা যাবেন? রোজগার বন্ধ হবে আমাদের। সংসার চলবে না।’’

বছর পঞ্চাশের আজাদ মকদোসি শ্রীনগরের বাসিন্দা। গত ৩০ বছর ধরে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা আসছেন উলুবেড়িয়ায়। মাস পাঁচেক ডেরা বাঁধেন বাগনানের এনডি ব্লক এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে। তারপর শুরু হয় গ্রামে ঘুরে ঘুরে শাল বিক্রি। আজাদ বলেন, ‘‘এ বার যখন পশ্চিমবঙ্গে কাশ্মীরিদের উপর অত্যাচারের নানা খবর ছড়াল, আমরাও ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, টাকা পয়সাও আর ফেরত পাব না। ভয়ে বাড়ি থেকে বেরতেও পারছিলাম না। কিন্তু পুরনো খদ্দেররা নিজেরা এসে টাকা মিটিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।’’ ফিরদৌসরা বলেছেন, ‘‘আমরা ভয় পেয়েছি। কিন্তু আবার বুঝেছি, এখানে সবাই এমন উন্মত্ত নন। ভয় ভেঙেছে। আবার আসব। কিন্তু এখন চিন্তা ঘর নিয়ে।’’

সকলেই জানিয়েছেন, কাশ্মীরের মানুষ শান্তি চায়। ‘‘যুদ্ধ আর অশান্তি অনেক দেখে নিয়েছি। ছেলেমেয়েরা স্কুলে গেলে বাড়ির মেয়েরা ভয়ে ভয়ে জানলায় দাঁড়িয়ে থাকে। যতক্ষণ না ওরা ফেরে চিন্তা হয়। শান্তিতে বাড়ি ফিরুক ওরা— আমরা তাই চাই’’ বলেন, বাসার হোসেন। রোজ রাতে ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমে কথা হয় পরিবারের সঙ্গে। হাওড়ায় বসে উদ্বিগ্ন আজাদরা, ‘‘কে জানে আবার কবে ইন্টারনেটও বন্ধ হয়ে যায় কাশ্মীরে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmiri Uluberia Bagnan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE