Advertisement
E-Paper

তোলাবাজি বন্ধ হতেই জেলে তাণ্ডব নেপুর

পাশাপাশি জেলের ভিতরেও অন্য বন্দিদের থেকে চলে দেদার টাকা তোলা। এমনই চলে আসছে বহু বছর ধরে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জেলের ভিতর আর বাইরে—শব্দ দুটো শুনে দুই ভিন্ন জগৎ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুই জগতের মধ্যে যোগাযোগ রাখাটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ নেপু-আক্রমদের কাছে। সঙ্গীদের সঙ্গে সমান্তরাল যোগসূত্রে বাঁধা পড়ে এই দুই দুনিয়া। জেল থেকে মোবাইল ফোনে দেওয়া নির্দেশ মতো কাজ সামলানোর মতো লোক ছড়ানো রয়েছে বাইরে। আর পাশাপাশি জেলের ভিতরেও অন্য বন্দিদের থেকে চলে দেদার টাকা তোলা। এমনই চলে আসছে বহু বছর ধরে।

হুগলি জেলে তাহলে হঠাৎ তাহলে অপরাধীদের বিদ্রোহ হল কেন?

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হুগলি জেল থেকে এক পদস্থকে রায়গঞ্জে বদলি করা হয়। সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয় অন্য একজনকে। নতুন এই কারাকর্তা জেলের ভিতরে এতদিনের অনুশাসন আর বোঝাপড়ার মূলে কুঠারাঘাত করতে চেয়েছেন। মোবাইল ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্দিদের থেকে তোলাবাজিও তিনি বন্ধ করতে চাইছেন। আর তাতেই হুগলি জেলে বিদ্রোহী নেপু-আক্রমের দল।

জেলে থাকা নেপু-আক্রমদের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগসাজশের গল্প চমকে দেওয়ার মতোই।

এলাকার লোক ইট-বালির ব্যবসায়ী শ্যামল দাসকে নিপাট ভদ্রলোক হিসেবেই চিনতেন।। এ হেন শ্যামলবাবু একদিন ভরদুপুরে কোন্নগরের নবগ্রাম কলেজ গেটের কাছে বেমালুম দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন। এলাকার লোকেরা ভেবেছিলেন, নির্ঘাৎ ব্যবসা নিয়ে কোনও গণ্ডগোল। কিন্তু তদন্ত এগোতেই সামনে এল অন্য কাহিনী।

পুলিশ জানিয়েছে, মাঝবয়সী ভদ্রলোক শ্যামলবাবু আদতে অন্ধকার জগতের এক জন। হুগলির ত্রাস হুব্বা শ্যামলের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল এক সময়। হুব্বা খুন হতে দল পাল্টে হুগলি-হাওড়া শিল্পাঞ্চলের ত্রাস রমেশ মাহাতোর দলে নাম লেখায়। আসলে ইট-বালির ব্যবসার আড়ালে তোলাবাজির টাকা তোলাই কাজ ছিল শ্যামলের। কিন্তু সেই টাকা নিয়ে গরমিল হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। পুলিশের দাবি, তার জেরেই গারদের আ়ড়ালে থাকা নেপু আর আক্রম ইশারায় খুন হতে হল শ্যামলকে।

খুনের তদন্তে নেমে কলকাতার দমদম এলাকা থেকে রাজু সাউ নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজু পুলিশকে জানায়, জেলে বসেই নেপু আ আক্রমরা নির্দেশ দিত, কার থেকে টাকা তুলতে হবে। শ্যামল সেখান থেকে তোলা নিত। কিন্তু যে টাকা নেপুদের কাছে পৌঁছনোর কথা, আসত তার থেকে কম টাকা। এ নিয়ে বহুবার সর্তক করার পরও না শোনায় নেপু আর আক্রমের দলবলের নিশানা হয় শ্যামল। গুলির জবাবেই চরম শাস্তি দেয় তারা।

শুধু বাইরে থেকে টাকা তোলা নয়। জেলের ভেতরেও চলে দেদার তোলাবাজি। বাইরের মতোই রোমাঞ্চকর সেই গল্পও।

শুধু দুষ্কৃতীরা নয়। ব্যবসায়ী, নানা পেশার বহু সাধারণ মানুষও নানা অপরাধে আদালতের ফরমানে জেল খাটেন। বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করার ছাড়পত্র থেকে ওষুধ, খাবার, মোবাইল নিত্য হরেক কিসিমের প্রয়োজন তাঁদের। আর সেখানেই এক শ্রেণির জেল ওয়ার্ডেনের মদতে অলিখিত নিয়ম রয়েছে নেপু-আক্রমদের। নানা দাবি জানালেই তার জন্য নজরানা লাগে।

শুধু তাই নয়, বিশেষ কিছু অপরাধের জন্য জেলে নিয়ম করে মারধরের ব্যবস্থাও রয়েছে। যেমন, মহিলাদের উপর নির্যাতনের অপরাধে যারা জেলে আসে তাদের অন্য বন্দিরা মারধর করে। গৃহবধূদের উপর অত্যাচারে মারের মাত্রা আরও বেশি। তবে সবথেকে মার বেশি জোটে, যদি কেউ শিশুদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।

কিন্তু সব কিছুরই তো কিছু ফাঁক থাকে। জেলে নেপু-আক্রমদেরও ক্ষেত্রেও নিয়মটা খুব একটা বদলায় না। মার থেকে বাঁচতে শুধু রেস্ত একটু বেশি লাগে। বন্দির ক্ষমতা অনুয়ায়ী সেই টাকার কম-বেশি হয়। যত বেশি টাকা, জেলের ভিতরে ততটাই নিরাপদ আর আরামের বন্দোবস্ত। অভিযোগ, বন্দিদের পরিবারের থেকে প্রতিদিন সেই তোলার একাংশের বখরা যায় কারারক্ষীদের হাতে। আর সেই টাকার সিংহভাগই লোটে নেপু-আক্রমরা।

নতুন কারা-কর্তার জমানায় জেলে ফের সহাবস্থান ফিরে আসে, না জেলের ভিতর লাগাম পড়ানো হয় নেপু-আক্রমদের, সেটাই দেখার।

Hoogly Jail জেল হুগলি Hooliganism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy