Advertisement
E-Paper

অনিয়মের জাতীয় সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম ভেঙে একমুখী রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়েই দুর্ঘটনায় পড়েছিল মোটরবাইকটি। আর দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটির কারণ ছিল বাসের বেপরোয়া গতি। 

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০২:০৪
অনিয়ম: বিধি উড়িয়ে একমুখী রাস্তায় উল্টো দিক থেকে ঢুকছে বাইক।

অনিয়ম: বিধি উড়িয়ে একমুখী রাস্তায় উল্টো দিক থেকে ঢুকছে বাইক।

এ যেন কার্যত মৃত্যু সড়ক!

এই রাস্তায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন গাড়িচালকেরা। কখনও গাড়ি উল্টে গিয়ে চালক-আরোহীদের হাত-পা ভাঙছে, আবার কখনও বেপরোয়া গাড়ির চাকা পিষে দিচ্ছে কাউকে। রাস্তার ‘গোলকধাঁধা’য় পথ হারিয়েও দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন অনেকে। বালির ২ ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে এমনই অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে গাড়ি চালকেরা।

কয়েক দিন আগেই বালির নিশ্চিন্দা এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে লরির সঙ্গে ধাক্কায় মোটরবাইকের চালক জামাই এবং তাঁর শাশুড়ির মৃত্যু হয়েছিল। পরের দিনই রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটি ছোট গাড়ির চালককে ধাক্কা মেরেছিল একটি বাস। দু’টি দুর্ঘটনায় মারা যান তিন জন। পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম ভেঙে একমুখী রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়েই দুর্ঘটনায় পড়েছিল মোটরবাইকটি। আর দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটির কারণ ছিল বাসের বেপরোয়া গতি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বামুনডাঙা থেকে নিবেদিতা সেতুতে যাওয়ার সময় অধিকাংশ চালকই নিয়ম ভাঙেন। নিয়মানুযায়ী, বামুনডাঙা থেকে নিবেদিতা সেতুর রাস্তায় উঠতে গেলে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের জয়পুর বিল পার করে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। ফলে শর্টকাট করতে গাড়িগুলি বামুনডাঙা থেকে উল্টো দিকে (ডানকুনি থেকে বালি আসার রাস্তা) গিয়ে নিবেদিতা টোলের রাস্তা ধরে। একমুখী ওই রাস্তায় নিয়ম ভেঙে ঢুকে কয়েক মিনিটেই পৌঁছনো যায় নিবেদিতা সেতুতে। ফলে নিয়ম ভাঙে প্রায় সকলেই। চালকদের আবার অভিযোগ, জাতীয় সড়কের নকশায় গলদের জন্যেই এতটা রাস্তা ঘুরে আসতে হয়।

প্রায় ১৮ বছর আগে সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পে ২ ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ হয়েছিল। সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তখন দিনে ৫০০টি গাড়ি যেত। এখন ৫ হাজার যায়। ফলে চাপ অনেক বেড়েছে।’’ কিন্তু তুলনায় পরিকাঠামোর উন্নতি হয়নি, ফলে সমস্যা বেড়েছে। পর্যাপ্ত পথ নির্দেশক বোর্ড এবং আলো না থাকায় অনেক গাড়িই রাতে রাস্তা হারিয়ে ফেলে। নজরদারির জন্য নেই সিসি ক্যামেরাও। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ট্রাক টার্মিনাস ছাড়া বর্ধমান পর্যন্ত আর কোথাও কোনও টার্মিনাস নেই। ফলে জাতীয় সড়কের যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, ট্রাক, ট্রেলার। রাতের অন্ধকারে কোথায় লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা বুঝতে না পেরেও ঘটে দুর্ঘটনা। সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে দখলদারির সমস্যাও।

এত অনিয়ম দেখার জন্য প্রশাসনের নজরদারি কেমন? জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ট্র্যাফিক আইন কেউ মানছে কি না, তা দেখার মতো পরিকাঠামো তাদের নেই। পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। হাওড়া ও হুগলির সীমানায় মাইতিপাড়া পোস্টে থাকেন এক জন মাত্র ট্র্যাফিক পুলিশ। এ ছাড়া বাকি রাস্তা প্রায় অরক্ষিতই। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে তবেই পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, রাত ১১টার পরে ট্র্যাফিক পুলিশের ডিউটি থাকে না এবং সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক গার্ড ও থানায় পুলিশ কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। তাই ২ এবং ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশি নজরদারির তেমন কোনও পরিকাঠামোই নেই।

এ প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি ট্র্যাফিক (১) শেখর রায় বলেন, ‘‘একমুখী রাস্তায় গাড়ি ওঠা আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ট্র্যাফিকের থেকে মাঝেমধ্যেই টহল দিয়ে বেআইনি পার্কিং সরানো হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে আলো ও অন্যান্য বিষয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও লাভ হয়নি। শেষে স্থানীয় বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় কয়েকটি জায়গায় আলো এবং পথ নির্দেশিকা বোর্ড লাগানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।

Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy