Advertisement
০৫ মে ২০২৪
রাসবিহারীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি সংরক্ষণের দাবি

সুড়ঙ্গ ধাক্কা খেল সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ, গুপ্তধন না পেয়ে উধাও ভিড়

বাড়িটি আগে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর দিদির শ্বশুরবাড়ি ছিল। পরবর্তীকালে সেটির একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। বর্তমানে বাড়িটির মালিক রঞ্জন হালদার এবং প্রদীপ হালদার।

উৎসুক: সুড়ঙ্গ দেখতে ভিড় উৎসাহীদের। ছবি: সুব্রত জানা

উৎসুক: সুড়ঙ্গ দেখতে ভিড় উৎসাহীদের। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

গুপ্তধন!

সোমবার দুপুর থেকে শুধু একটা শব্দই ঘুরপাক খাচ্ছিল ডোমজুড়ের কোলড়া এলাকার লোকজনের মুখে মুখে। কারণ ওই এলাকার একটি বাড়ি ভাঙার সময়ে সুড়ঙ্গের মুখের খোঁজ মিলেছিল সোমবার। তার পর থেকেই দলে দলে মানুষ সেখানে ভিড় করেন। ভিড় সামলাতে কালঘাম ছোটে পুলিশ-প্রশাসনের। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে চলে আসে রাজ্য প্রত্নতত্ব বিভাগের একটি দল। শেষ পর্যন্ত খানিক হতাশই হতে হল সবাইকে। কারণ সব খতিয়ে দেখে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা জানিয়ে দিলেন, সেখানে গুপ্তধন নেই। সুড়ঙ্গের মুখ বলে যেটিকে সন্দেহ করা হয়েছিল সেটি আসলে একটি সিঁড়ির ‘ল্যান্ডিং’। মেলেনি কোনও পাতালঘরের সন্ধান। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, ওই বিশাল বাড়িটি প্রায় চারশো বছরের পুরনো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িটি আগে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর দিদির শ্বশুরবাড়ি ছিল। পরবর্তীকালে সেটির একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। বর্তমানে বাড়িটির মালিক রঞ্জন হালদার এবং প্রদীপ হালদার। তাঁরা ২০০৮ সালে জনৈক রাধারমণ সরকারের থেকে বাড়িটি কিনেছিলেন। এই রাধারমণবাবু আবার সুশীলাদেবীর শ্বশুরবাড়ির শরিক। তিনি ১৯৯০ সালে সুশীলাদেবীর বংশধরদের থেকেই বাড়িটি কিনেছিলেন। গত দু’বছর ধরে বাড়িটি ভাঙার কাজ চলছে। সোমবার দুপুরে বাড়িটি ভাঙার সময়ে সুড়ঙ্গের মুখের সন্ধান মিলেছিল। যে সব মিস্ত্রিরা বাড়ি ভাঙার কাজ করছিলেন তাঁরাই বিষয়টি প্রচার করে দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায় সেই ছবি। কেউ কেউ রটিয়ে দেন, সুড়ঙ্গ থেকে গুপ্তধন পাওয়া গিয়েছে। ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। মঙ্গলবার তাঁরা আসেন। সঙ্গে ছিলেন ডোমজুড়ের বিডিও রাজা ভৌমিক, আইসি সুবীর রায়।

ঘটনাস্থলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরা। নিজস্ব চিত্র

এলাকার প্রবীণ মানুষেরা জানিয়েছেন, ওই বাড়ির ছেলে আশুতোষ সরকার ছিলেন রাসবিহারী বসুর দিদি সুশীলাদেবীর স্বামী। তিনি কম বয়সে মারা যান। তারপরে আমৃত্যু ওই বাড়িতেই বসবাস করতেন সুশীলাদেবী। জনশ্রুতি, দিদির সঙ্গে দেখা করার জন্য রাসবিহারী বসু একাধিকবার সেখানে এসেছিলেন। জাপানে যাওয়ার আগেও শেষবারের মতো তিনি ওই বাড়িতে যান। কিন্তু পুলিশ তার গতিবিধির খবর পেয়ে যাওয়ায় তিনি দিদির তৈরি রান্না না খেয়েই চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর তিনি জাপানে গিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করেন। ওই বাড়ি সংলগ্ন মাঠে এখনও প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং রাসবিহারী বসুর জন্মদিন একসঙ্গে পালন করা হয়।

তবে সোমবার এবং মঙ্গলবার যাঁরা ওই ভাঙা বাড়ির সামনে ভিড় করেছিলেন তাঁদের অনেকেই রাসবিহারী বসুর নাম শোনেননি। তাঁদের আগ্রহ ছিল শুধুমাত্র গুপ্তধন নিয়ে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা কৌতুহলী লোকজনকে ডেকে দেখিয়ে দেন, সেখানে গুপ্তধন বা সুড়ঙ্গ কিছুই নেই। মঙ্গলবার দুপুরের পরে পুলিশি পাহারাও তুলে নেওয়া হয়। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের দাবিতেই পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতামত জানার পরে সেটি তুলে নেওয়া হয়েছে। গুপ্তধনই যদি না থাকে তাহলে পুলিশ রেখে কী হবে?’’ তবে তারপরেও অনেকেই মুখেই শোনা গিয়েছে গুপ্তধন সংক্রান্ত নানা কথা।

গুপ্তধন না মিললেও বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব মেনে নিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা। বাড়িটি রক্ষায় কিছু করা হবে কী না জানতে বর্তমান মালিক রঞ্জনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। তিনি এখন ওই বাড়িটির কাছেই থাকেন। সেখানে গেলে একজন জানান, তিনি বাড়িতে নেই। পরে তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলে বলা হয়, তিনি ফোন রেখে বাইরে চলে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE