Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
পুলিশের উদ্যোগ সত্ত্বেও সংশয়ে বিরোধীরা

তল্লাশিতে জোর, এক মাসে ধৃত ৫৩১ দুষ্কৃতী

বোমাবাজি থেকে খুন, ব্যাঙ্ক লুট থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই— গত এক বছরে বারবার দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে আতঙ্কে কেঁপেছে হুগলি শিল্পাঞ্চল। এমনকি, অস্ত্র কারখানারও খোঁজ মিলেছিল চন্দননগরের সাবিনাড়ায়।

দুষ্কৃতী: ধৃত কোবরা ও গৌরব (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র

দুষ্কৃতী: ধৃত কোবরা ও গৌরব (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

ক’দিন আগে চুঁচুড়ার কানাগড়ে তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে দু’টি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধারের ঘটনায় সরগরম হয়েছিল হুগলি শিল্পাঞ্চল। ভোটের মুখে শিল্পাঞ্চল-সহ গোটা হুগলিতে অস্ত্রের রমরমা নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। সাধারণ মানুষও প্রশ্ন তুলেছিলেন। চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, দুষ্কৃতী ধরতে এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তারা পুরোদস্তুর অভিযান চালাচ্ছে। তবু, ভোটের সময়ে অশান্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা যাচ্ছে না।

বোমাবাজি থেকে খুন, ব্যাঙ্ক লুট থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই— গত এক বছরে বারবার দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে আতঙ্কে কেঁপেছে হুগলি শিল্পাঞ্চল। এমনকি, অস্ত্র কারখানারও খোঁজ মিলেছিল চন্দননগরের সাবিনাড়ায়। দু’বছর আগে শিল্পাঞ্চলের ৯টি থানাকে নিয়ে চন্দননগর কমিশনারেট গঠন করে লাভ কী হল, এ প্রশ্নও উঠেছে নানা মহলে।

গত মঙ্গলবার নির্বাচন ঘোষণার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এই এক মাসে সমন থাকা মোট ৫৩১ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩৮টি কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে কমিশনারেটের দাবি। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে চন্দননগরের উর্দিবাজারের বাসিন্দা আফরোজ খান ওরফে কোবরা, শ্রীরামপুরের বিকাশ তিওয়ারি, চুঁচুড়ার গৌরব ঘোষ ঠাকুর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ঘড়ির কাঁটা ধরে পুলিশের চিরুনি-তল্লাশি চলছে। নির্বাচনের মুখে যাতে নতুন করে কোথাও অশান্তি না-হয়, তা রুখতে পুলিশ তৎপর। সমন থাকা কিছু দুষ্কৃতী এখনও পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। তবু পুলিশ যে কিছুটা চিন্তায় রয়েছে, তা মানছেন কমিশনারেটের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের চিন্তা অল্পবয়সী দুষ্কৃতীরা। কারণ, তারা ঘুরপথে অস্ত্র জোগাড় করে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করছে। চুঁচুড়া থেকে গৌরব নামে যে দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে, তার বয়স ২২ বছর। তার কাছ থেকে কার্তুজ এবং আগ্নেয়াস্ত্র মিলেছিল।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমাদের তল্লাশি চলছে। আগ্নেয়াস্ত্র যেমন উদ্ধার করা হচ্ছে, পাশাপাশি ফেরার দুষ্কৃতীদেরও তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অভিযান চলবে।’’

তবু অনেক সাধারণ ভোটার এবং বিরোধী দলগুলি আশ্বস্ত হতে পারছে না। গ্রেফতারের পরেও কানাগড়ের তৃণমূল নেতার ছেলে জামিন পাওয়ার পরের দিন চুঁচুড়া থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘‘গোলা-বারুদ, অস্ত্রের ভাণ্ডার হয়ে উঠেছে এই জেলা। এই গোলা-বারুদের সামনে দাঁড়িয়ে জেলার ভোটাররা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।’’ বিজেপি নেতা তথা দলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান স্বপন পাল বলেন, ‘‘এখন পুলিশ চাকরির দায়ে হয়তো কিছুটা নড়াচড়া করছে। কিন্তু শাসকদলের হয়ে যারা পাড়ায় পাড়ায় দাদাগিরি করে, তাদের ক’জনকে পুলিশ জেলে পুরেছে?’’ পুলিশি তৎপরতা নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘এখন নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় হয়তা পুলিশ কিছুটা নড়াছে। তবে এখনই পুলিশকে শংসাপত্র দেওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত পুলিশের তৎপরতার প্রশংসাই করেছেন। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘শাসকদল দুষ্কৃতী নিয়ে চলে না। অবান্তর অভিযোগ তুলে লাভ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chinsurah Anti Social Arrest Police TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE