প্রস্তুতি: খালনার একটি মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজোয় আনন্দ তো হয়ই, কিন্তু হাওড়ার খালনা আদতে অপেক্ষা করে কোজাগরী লক্ষ্মীর জন্য। চন্দননগরে যেমন জগদ্ধাত্রী আরাধনার জন্য বিখ্যাত, খালনার তেমন প্রসিদ্ধি লক্ষ্মী আরাধনায়। খালনাকে বলা হয় ‘লক্ষ্মীর গ্রাম’।
আর রাত পোহােলই ধনদেবীর আরাধনা। তাই দম ফেলার সময় নেই খালনার মণ্ডপ শিল্পীদের।
প্রায় তিন মাস ধরে মাটি কেটেছেন সূর্যমূখী বোধক, কল্পনা বাগ, লক্ষ্মী বোধকের মতো গৃহবধূরা। তৈরি করেছেন একটি সুড়ঙ্গ। তার মধ্যে দিয়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করবেন মূল মণ্ডপে। এখানে রাখা থাকবে প্রতিমা। হাওড়ার জয়পুরের খালনা গ্রামে কালীমাতা তরুণ সঙ্ঘের পুজোর মণ্ডপ এমনই।
কালীমাতা তরুণ সঙ্ঘের পুজো এ বার ৯৬ বছরে পড়েছে। ক্লাবের ব্যানারে হলেও এই পুজোতে সামিল হয়েছে স্থানীয় রাজবংশী পাড়ার সকল বাসিন্দারা। থিম কুবেরের ধন। মূল মণ্ডপে পৌঁছানোর জন্য পাতাল রেলে ঢোকার মত কুড়ি ফুট গভীর, পঞ্চাশ ফুট লম্বা এবং দশ ফুট চওড়া একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকতে হবে দর্শনার্থীদের। এই সুড়ঙ্গের ভিতরে দুই দিকের দেওয়ালে রাখা হয়েছে ঘড়া ভর্তি অলঙ্কার, টাকা পয়সা। সবই অবশ্য নকল। ক্লাবের সদস্যরা জানালেন, তাঁরা নিজেরাই মণ্ডপ তৈরি করছেন। গর্তটি খুঁড়েছেন গ্রামের মহিলারা। পুজোর বাজেট প্রায় চার লক্ষ টাকা।
কাছেই তৈরি হচ্ছে অযোধ্যা পাহাড়ের ধাঁচে মণ্ডপ। তার উপরে মন্দির। সেই মন্দিরের ভিতরে থাকবে প্রতিমা। এই প্রতিমা দর্শন করতে হলে আবার দর্শনার্থীদের সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হবে। এই পুজোর বয়স ছয় বছর। উদ্যোক্তা আনন্দময়ী তরুণ সঙ্ঘ। বাজেট প্রায় ছয় লক্ষ টাকা।
মিতালি সঙ্ঘের মণ্ডপ সাজানোর কাজে ব্যস্ত প্রদীপ রীত, সায়ন পালের মতো স্কুল ছাত্রেরা। বাজেট প্রায় তিন লক্ষ টাকা। পুরনো দোতলা বাড়ির ধাঁচে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। একচালার প্রতিমা। ক্লাব সম্পাদক সিদ্ধেশ্বর রীত বললেন, ‘‘পাড়ার ছেলেরাই মণ্ডপ তৈরি করছেন। তাঁরাই বানাচ্ছেন প্রতিমা।’’ কারিগর বা প্রতিমা শিল্পীদের মধ্যে কেউই আর্ট স্কুলে পড়াশোনা করেননি। সিদ্ধেশ্বরবাবু বললেন, ‘‘আগে যাঁরা করতেন তাঁদের থেকে শিখেই চলছে কাজ।’’
এলাকার প্রাচীনতম হল ক্ষুদিরায়তলা সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো। এ বছর পুজো পড়ল ১৫১তম বছরে। বাজেট প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। থিম মা দিয়েছেন ‘দুই হাত ভরে’। উদ্যোক্তারা জানালেন, গত বছরে পুজোর দেড়শো বছরে বাজেট ছিল প্রায় ছয় লক্ষ টাকা। তবে এ বার বাজেট কমেছে। পুজোর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে পুদুচেরির শ্রীঅরবিন্দের আশ্রমের আদলে।
শুধু জাঁক নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজিরও দেখা যায় খালনার পুজোয়। এমনটি দেখা গেল পল্লি সঙ্ঘের মাঠে। এখানে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে মন্দিরের আদলে। মণ্ডপের ২০০ ফুট দূরে রয়েছে ফতে আলি শাহ-এর মাজার। মণ্ডপ এবং মাজারের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানই শুধু নয়, পুজো কমিটিতেও আছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। পুজোর জন্য তৈরি হয়েছে সংগঠন। সংস্থার পক্ষ্যে অভিষেক হাজরা বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর আগে মাজারে সিন্নি চড়ানো আমাদের বহু বছরের প্রথা।’’ অন্য দিকে পুজো কমিটির সদস্য শেখ মোহব্বত আলি, শেখ তাজেল বললেন, ‘‘পুজোর আচারে যোগ দিই না। কিন্তু প্রতিমায় কাঁধ দেওয়া, পুজো আয়োজনের সব কাজ করি।’’
পুজো সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে নানা ব্যবস্থাও নিয়েছে পুলিশ। করা হচ্ছে সহায়তা কেন্দ্র। রাত পোহালেই লক্ষ্মীপুজো। গোটা গ্রাম সেজে উঠবে আলোকমালায়। যেন কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদের আলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে খালনা। চলছে তারই শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy