চিকিৎসাধীন: হাসপাতালে তপন কর্মকার। নিজস্ব চিত্র
দলীয় জাঠায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই ‘অপরাধে’ তারকেশ্বরের এক সিপিএম নেতাকে মেরে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক উপপ্রধান ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। ভাঙচুর চালানো হয় তাঁর বাড়িতেও। রবিবার দুপুরে তারকেশ্বরের মালপাহাড়পুর গ্রামের ঘটনা। তপন কর্মকার নামে ওই সিপিএম নেতাকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর ডান পা ভেঙেছে। বাঁ পায়েও গুরুতর চোট রয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই তৃণমূল নেতা। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্য পঞ্চাশের তপনবাবু সিপিএমের মালপাহাড়পুর এরিয়া কমিটির সদস্য। এক সময়ে নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতের প্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন। পেশায় সুতো ব্যবসায়ী। নিকাশি নালার জায়গা না-দিয়ে রাস্তা করা নিয়ে শাসকদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তাঁর বিবাদ চলছিলই। তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও চলছে। শনিবার বিকেলে তপনবাবুর নেতৃত্বেই গ্রামের আস্তারা মোড় থেকে ক্যানেল ধার পর্যন্ত সিপিএমের একটি জাঠা বের হয়। তাতে ভালই লোকজন হয়েছিল। অভিযোগ, বিষয়টি ভাল ভাবে নেননি শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব।
রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা। তপনবাবু বাড়িতেই ছিলেন। সেই সময় ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ মনিরুল ওরফে আকাশের নেতৃত্বে জনাপঁচিশ তৃণমূল সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে ওই বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বাড়িতে ভাঙচুর চলে। তপনবাবুর ব্যবসার জিনিসপত্র, আলমারিও ভেঙে তছনছ করা হয়। বাধা দিতে গেল হামলাকারীরা তপনবাবুকে বেধড়ক মারধর করে। লাঠি দিয়ে তাঁর পায়ে মারা হয়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি খাটের তলায় ঢুকে পড়েন। তাঁর স্ত্রী-মেয়েরা ঠেকাতে গিয়েও পারেননি। তাঁরা ভয়ে কাঁপতে থাকেন। এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে।
ওই সিপিএম নেতার অভিযোগ, ‘‘আমার উপর তৃণমূলের রাগ অনেকদিনের। বছর দেড়েক আগে ওরা পিয়াসারায় আমার হার্ডওয়্যারের দোকান বন্ধ করে দেয়। তবু আমি সিপিএম ছাড়িনি। এ বার আকাশের নেতৃত্বে ওরা আমায় মেরে, পা ভেঙে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। খাটের তলায় ঢুকে কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়েছি।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘জাঠা করায় ওরা বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। তার জেরেই হামলা করল।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি নস্যাৎ করেছেন আকাশ। তাঁর দাবি, ‘‘দুপুরে আমি গ্রামেই ছিলাম না। নেত্রী অসীমা পাত্রের বাড়িতে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলাম। ওই ঘটনা সিপিএম-বিজেপি গোলমালের জের। গ্রামের কিছু সিপিএম কর্মী তলে তলে বিজেপি করছেন।’’ একই সঙ্গে আকাশের সংযোজন, ‘‘তপনবাবু পোড়খাওয়া নেতা। নাটক করছেন। ২০১৪ সাল থেকেই ওঁর পা ভাঙা। পায়ে প্লেট বসানো আছে।’’ এ দিন সকালে ওই গ্রামেই আকাশের দলবলের বিরুদ্ধে এক বিজেপি সমর্থককে মারধরের অভিযোগও ওঠে। কিন্তু আতঙ্কে তাঁরা থানায় যাননি বলে জানান বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য তারকেশ্বরের এই গোলমালে দলীয় নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। দোষ প্রমাণিত হলে কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy