Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
পাঁচ দিন ভোগান্তি পান্ডুয়ার আলুচাষিদের

ঝান্ডা পুঁতে হিমঘর বন্ধ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

এখন আলুর ভরা মরসুম। প্রায় সর্বত্র খেত থেকে আলু তোলার কাজ চলছে।

শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন্ধ গেটের সামনে লাগানো ছিল তৃণমূলের পতাকা।—নিজস্ব চিত্র।

শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন্ধ গেটের সামনে লাগানো ছিল তৃণমূলের পতাকা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৭
Share: Save:

এখন আলুর ভরা মরসুম। প্রায় সর্বত্র খেত থেকে আলু তোলার কাজ চলছে। কিন্তু আলু তোলার পরেও পান্ডুয়ার বেরেলা-কোঁচমালি পঞ্চায়েতের বহু চাষি পাঁচ দিন ধরে এলাকার হিমঘরে তা পাঠাতে পারেননি। কারণ, দাবি মেনে লোক নিয়োগ না-করায় গেটের সামনে দলের ঝান্ডা পুঁতে ওই হিমঘর বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এলাকার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলের পরে পুলিশ গিয়ে হিমঘর খুলে দেয়। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে ভোগান্তি এবং দুশ্চিন্তার জন্য চাষিরা ওই নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বোড়াগড়ি গ্রামে ‘বৈদ্যনাথ কোল্ড স্টোরেজ’ নামে ওই হিমঘরটি কয়েক দশকের পুরনো। সেখানে এক লক্ষ প্যাকেট (৫০ কেজিতে এক প্যাকেট) আলু রাখা যায়। সেটি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর পান্ডুয়া ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষের বিরুদ্ধে। হিমঘরের মালিক কৌশিক কুণ্ডু জানান, তাঁর তিনটি হিমঘর আছে। বাকি দু’টি বর্ধমানে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমিও তৃণমূল করি। কোনও সমস্যা থাকলে আমাকে সরাসরি বলতে পারত। হঠাৎ করে এ ভাবে দলের ঝান্ডা লাগিয়ে হিমঘর বন্ধ করা কি ঠিক? কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্তকে বিষয়টি জানাই।’’ শনিবার পুলিশ গেট খুলে দিলেও কৌশিকবাবুর আতঙ্ক কাটছে না। তিনি বলেন, ‘‘নেতারা কিন্তু কেউ এসে পরিস্থিতি দেখেননি। আতঙ্কে আছি।’’

অভিযোগ মানেননি সঞ্জয়। তাঁর দাবি, ‘‘আমি হিমঘর বন্ধ করিনি। আমি শুধু বলেছি, দলের স্থানীয় লোককে কাজে নিলে ভাল হয়। মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’’ তপনবাবু এবং জেলা তৃণমূলের তরফে পান্ডুয়া ব্লকের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী অসীমা পাত্র অভিযোগ জানার পরেই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। অসীমাদেবীর কথামতো শনিবার বিকেলের পরে পুলিশ গিয়ে হিমঘরটি খুলে দেয়। অসীমাদেবী বলেন, ‘‘দলের কেউ এই কাজ করলে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

হিমঘর সূত্রের দাবি, দিন কুড়ি আগে তৃণমূল নেতা সঞ্জয় দলবল নিয়ে এসে স্মারকলিপি জমা দেন। তাতে তাঁর দাবি, দশ জন কর্মী অবসর নিয়েছেন। তাঁদের বদলে শীঘ্রই লোক নিতে হবে। মুখে জানিয়ে দেন, তাঁর পছন্দের লোকদেরই নিতে হবে। কথা না-শুনলে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন বলে হিমঘর-কর্মীদের অভিযোগ। বিজয় ঘোষ নামে এক হিমঘর-কর্মী বলেন, ‘‘বিষয়টি মালিককে জানাই। মঙ্গলবার সকালে স্টোরের হিমঘরের প্রধান দরজায় ওরা তালা দিয়ে দেয়। দরজার সামনে বাঁশ দিয়ে ঘিরে তৃণমুলের ঝান্ডা লাগিয়ে দেয়।’’

হিমঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেখানে ৫০০ প্যাকেট আলু জমা ছিল। তা ছোট গেট দিয়ে চাষিদের বের করে নিতে বলা হয়েছিল। কয়েকজন চাষি কিছু প্যাকেট নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে হিমঘরটি বন্ধ থাকায় বহু আলুচাষিই সমস্যায় পড়েন। বেরেলা, বীরপুর, বেলাপুর, শ্যামনগর, কাঁটাগড়-সহ স্থানীয় অনেক গ্রামেই জমি থেকে এখন আলু তোলার কাজ চলছে। চাষিদের বক্তব্য, আলু অন্য হিমঘরে নিয়ে যেতে হলে গাড়ি ভাড়া বেশি লাগবে। তাই এতদিন তাঁরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন।

কাঁটাগড়ের আলুচাষি গোবিন্দ রুইদাস বলেন, ‘‘দশ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। একেই বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে। হিমঘরটা বন্ধ থাকায় কোথায় আলু রাখব বুঝতে পারছিলাম না। হিমঘরটি বন্ধ করে কার লাভ হল? আমাদের পাঁচ দিন দুশ্চিন্তায় কাটাতে হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cold Storage TMC Recruitment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE