গিজগিজে: টোটোর দখলে হাওড়ার রাস্তা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
এক দিকে শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেআইনি টোটো। পাশাপাশি রাস্তায় নামতে শুরু করেছে সরকারি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ই-রিকশা। পরিবেশবান্ধব এই দুই গণপরিবহণের ভিড়ে এখন কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে হাওড়া শহরের।
এমনিতেই হাওড়ার পথঘাট যথেষ্ট সঙ্কীর্ণ। রাস্তার সংখ্যাও কম। তার উপরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় চলছে টোটোর দৌরাত্ম্য। যার জেরে অন্যান্য যানবাহনের গতি কমে গিয়েছে অনেকটাই। এমনকি, রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হচ্ছে বলে পথচারীদের অভিযোগ। অথচ, সরকারি ভাবেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে রুটে ই-রিকশা চলবে, সেই রুটে টোটো চলবে না। পুলিশ গিয়ে টোটো বন্ধ করে দেবে।
কিন্তু অভিযোগ, আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যে ২২টি রুটে ই-রিকশা চলতে শুরু করেছে, সেই সমস্ত রুটে একটি টোটোও বন্ধ করেনি পুলিশ। যার ফলে ওই রুটগুলিতে যানজট তো কমেইনি, বরং দিনদিন তা বেড়ে চলেছে। ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অবশ্য দাবি, গত মাসে জেলাশাসকের বাংলোয় হাওড়া সিটি পুলিশ, হাওড়া পুরসভা ও আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকদের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, বেআইনি টোটো বন্ধের ব্যাপারে যৌথ ভাবে অভিযান শুরু হবে। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না করায় গোটা বিষয়টি থমকে গিয়েছে। হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিষেক তিওয়ারি বলেন, ‘‘পুলিশ ওই রুটগুলিতে টোটো বন্ধ করতে কেন অভিযানে নামছে না, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। পুলিশ সময় পায়নি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কাজটা করতেই হবে।’’
এ নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘খুব শিগগিরই অভিযান হবে। তবে গোটা বিষয়টি পুরসভা ও পরিবহণ দফতর-সহ সবার সঙ্গে সমন্বয় রেখে করতে হবে।’’
কিন্তু জেলাশাসকের বাংলোয় বৈঠকের পরেও কেন এত দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন ওই পুলিশকর্তা। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার চাইলেও বেআইনি টোটো বন্ধ করতে এখনই ততটা সক্রিয় হচ্ছে না জেলা প্রশাসন বা পুলিশ।
আদালতের নির্দেশ মোতাবেক, আগামী ১০ মে-র মধ্যে হাওড়া শহরে টোটো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ৪৮০০টি টোটোকে ই-রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। অফার লেটার দেওয়া হয়েছে তিন হাজার চালককে। তার মধ্যে গত তিন মাসে টোটো কাটাই হয়েছে মাত্র ৪৪৯টি। এই সংখ্যাটি যে খুবই কম, তা মানছেন আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, দুটো কারণে এই সংখ্যা বাড়ছে না। প্রথমত, পরিবহণ দফতর থেকে অফার লেটার পাওয়ার পরেও টোটোমালিকদের অনেকেই এখনও জল মাপছেন। যদি কোনও ভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয় ও টোটো চালু থাকে। দ্বিতীয়ত, টোটো কাটাই করার তারিখ পেতেও সমস্যা হচ্ছে। কারণ, এক দিনে সব নিয়ম মেনে বেশি সংখ্যায় টোটো কাটাই করা যাচ্ছে না।
নিয়ম অনুযায়ী, পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে অফার লেটার পাওয়ার পরেই টোটো কাটাই করা হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায়। সেখানে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অফিসারদের সামনে এই কাজ করতে হচ্ছে। কাটাই হওয়ার পরে বিক্রির রসিদ, ছবি, বিমা দেখার পরেই ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যাচ্ছে।
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু লোক রটাচ্ছে যে, খোলা বাজারে ই-রিকশা বিক্রি হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সরকার-স্বীকৃত বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়া কেউ ই-রিকশা বিক্রি করতে বা কিনতে পারবেন না। যদি কিনেও থাকেন, তা হলে পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন না তিনি। আমাদের নথিভুক্ত প্রথম দফার ৪৮০০টি ই-রিকশাকেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy