Advertisement
E-Paper

হাত দেখালে টাকা গুঁজে দেওয়া দস্তুর

গোঘাটের খাঁটুল, বেলি, হাজিপুর, আরামবাগের কালীপুর, পল্লিশ্রী, আরামবাগ শহর সংলগ্ন খামারবেড়িয়া, পুরশুড়ার পীরতলা, সামন্ত রোড, তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙ্গা মতো এলাকায় রাতে তো বটেই, দিনের আলোতেও পুলিশকে ট্রাক থামিয়ে টাকা নিতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। টাকা দিতে না চাইলে গতি বাড়িয়ে পালায় ট্রাক।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ১৫:৩০

কেউ লোকাল ট্রেনের যাত্রী নন। সকলেই ট্রাক চালক। অথচ তাঁদের পকেটে গোঁজা রয়েছে ‘মান্থলি কার্ড’। অভিযোগ, সেই কার্ড দেখেই ট্রাক পিছু টাকা তোলে পুলিশ।

মালবাহী ট্রাকে বহন করা হচ্ছে অতিরিক্ত সামগ্রী। নেই কোনও বৈধ নথি। তবে তাতে অবশ্য কোনও অসুবিধা নেই। কারণ পুলিশের হাতে টাকা বাড়িয়ে দিলেই পথ মসৃণ।

হুগলির আরামবাগ থেকে তারকেশ্বরের নানা এলাকায় ট্রাক থামিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। টাকা দিতে না চেয়ে অনেক ট্রাক গতি বাড়িয়ে পালায়। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। গত রবিবার হুগলির গোঘাট এবং বাঁকুড়ার কোতলপুর বর্ডার চেকপোস্টের কাছে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক দিনমজুরের। অভিযোগ, পুলিশের ‘তোলাবাজি’র হাত থেকে বাঁচতেই ট্রাকটি পালাচ্ছিল। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ মানেনি।

গোঘাটের খাঁটুল, বেলি, হাজিপুর, আরামবাগের কালীপুর, পল্লিশ্রী, আরামবাগ শহর সংলগ্ন খামারবেড়িয়া, পুরশুড়ার পীরতলা, সামন্ত রোড, তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙ্গা মতো এলাকায় রাতে তো বটেই, দিনের আলোতেও পুলিশকে ট্রাক থামিয়ে টাকা নিতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। টাকা দিতে না চাইলে গতি বাড়িয়ে পালায় ট্রাক।

দিনকয়েক আগে গভীর রাতে পুরশুড়া এলাকায় রাস্তায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন কয়েকজন পুলিশ কর্মী। রাস্তায় তেমন আলো ছিল না। দু’পাশ থেকে অহরহ ছুটে আসছিল মালবোঝাই ট্রাক। কয়েকজন পুলিশকর্মী ট্রাকগুলি দাঁড় করাচ্ছিলেন। তার পর চালকেরা হাত বাড়িয়ে ওই পুলিশ কর্মীদের হাতে কিছু গুঁজে চলে যাচ্ছিলেন। ট্রাক চালকদের দাবি, পুলিশ টাকা নিচ্ছিল। যদিও টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের পাল্টা দাবি, বেআইনি ট্রাক ধরতে রুটিন তল্লাশি চলছিল।

গোঘাটের খাদিঘাটে টাকা আদায় করছে পুলিশকর্মী।

আরামবাগ মহকুমার ট্রাক চালকদের অভিযোগ, আরামবাগ থেকে কলকাতা যেতে সব কটি থানা এলাকায় গড়ে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকগুলিতে ১০ টনের জায়গায় ১৫ টনের বেশি মাল নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ ট্রাকে অতিরিক্ত সামগ্রী না থাকলেও পুলিশকে টাকা দিতেই হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলে মাস কয়েক আগে আরামবাগ মহকুমা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ট্রাক চালকেরা। মহকুমা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও কাজ কিছুই হয়নি।

ট্রাক চালকদের অভিযোগ, আরামবাগ থানা এলাকায় টাকা নেওয়ার ‘মান্থলি কার্ড’ চালু হয়েছে। ওই কার্ড থাকলে ট্রাক পিছু ১০০ টাকার বেশি নেওয়া হয় না। কিন্তু কার্ড না থাকলে ট্রাক পিছু ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা অবধি টাকা দিতে হয়। কোনও ক্ষেত্রে যদি ট্রাকে অতিরিক্ত সামগ্রী না থাকে তাহলে ট্রাকটির ব্লু বুক, বিমার কাগজ, ধোঁয়া বিষয়ক ছাড়পত্র, দেখতে চায় পুলিশ। সেগুলি না থাকলে ‘কেস’ দেওয়া হয়।

যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ট্রাক থামিয়ে টাকা তোলার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হুগলির পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন। তিনি বলেন, “পুলিশের তোলাবাজি নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ নেই। এই সংক্রান্ত কোনও প্রমাণও নেই। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।”

ছবি: মোহন দাস

Bribe Police Truck ট্রাক তোলাবাজি পুলিশ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy