Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
গাছে পেরেক মারা চলছে অবাধে, চুপ প্রশাসন

বিজ্ঞাপনে বিদ্ধ গাছ

আহত: গাছে পেরেক পুঁতে টাঙানো হয়েছে বিজ্ঞাপন। পান্ডুয়া জি টি রোডের ধারে। নিজস্ব চিত্র

আহত: গাছে পেরেক পুঁতে টাঙানো হয়েছে বিজ্ঞাপন। পান্ডুয়া জি টি রোডের ধারে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল ও সুশান্ত সরকার
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৯
Share: Save:

দোকানের ঠিকানা পাল্টেছে। বলে দেবে গাছ!

কম্পিউটার স্কুলে ভর্তি চলছে। জানবেন কী করে? গাছের দিকে তাকালেই হবে!

কম টাকায় ভাল জুতোর হদিসও দিচ্ছে গাছ!

জিটি রোডের ধারে, সিমলাগড় কালীমন্দিরের কাছে নানা কিসিমের বিজ্ঞাপনের বোর্ড ফ্লেক্সে ঢাকা একটি অশ্বত্থ গাছের ওই হাল দেখে ক’দিন আগেই আফসোস করছিলেন এক পরিবেশপ্রেমী। তবে, শুধু পান্ডুয়ার সিমলাগড়েই নয়, বলাগড়, মগরা, পোলবা, বাঁশবেড়িয়া, জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীত‌লা— বহু জায়গাতেই রাস্তার ধারের বড় বড় গাছের কাণ্ড ঢাকছে বিজ্ঞাপনের বহরে। দেদার গেঁথে যাচ্ছে পেরেক। নিখরচায় বিজ্ঞাপন। গাছের ক্ষতি হলেও দেখার কেউ নেই।

এ ভাবে বিজ্ঞাপন সাঁটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূর অস্ত‌্, বন দফতরের ন্যূনতম নজরদারি পর্যন্ত নেই বলে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, হুগলিতে কখনও আবাসন তৈরি, কখনও রেলস্টেশনে শেড তৈরি, কখনও সড়ক সম্প্রসারণে বা উড়ালপুল তৈরির জন্য অসংখ্য গাছ কাটা পড়েছে। তার উপরে বিজ্ঞাপনের জন্য এ ভাবে গাছের ক্ষতি করা হচ্ছে। ভোটভিক্ষায় রাজনৈতিক দল বা রোগী ধরতে চিকিৎসকও এমন পন্থা নিচ্ছেন। পান্ডুয়ার এক চিকিৎসক মানছেন, ‘‘কখনও তো কেউ কেউ কিছু বলেনি। তবে জীবন্ত গাছে আঘাত করে ফ্লেক্স লাগানো ভুল হয়েছে, বুঝতে পারছি। খুলে ফেলব।’’

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাছে বিজ্ঞাপন লাগাতে গেলে তাদের অনুমতি নিতে হয়। আবেদন বিচার করে দড়ি দিয়ে বিজ্ঞাপন লাগানোর অনুমতি দেওয়া হয়। বন দফতরের কর্তারা মানছেন, অনুমতির ধার ধারেন না কেউ। বছর কয়েক আগে রেল স্টেশনে শেড তৈরির জন্য গাছ কাটার প্রতিবাদ করেছিল নালিকুলের একটি সংস্থা। সংস্থার সদস্য হিন্দোল আহমেদ এবং ইমন সাঁতরা বলেন, ‘‘পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগানো বন্ধ করতে আইন করে বন্ধ করা দরকার। জন-সচেতনতার ব্যবস্থাও করা উচিত।’’ বন দফতরের হুগলির রেঞ্জ অফিসার রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা প্রচার চালাই। কিন্তু সচেতনতার অভাব রয়েছে। গাছ যে আমাদের বন্ধু এবং আঘাত করলে আখেরে যে আমাদেরই সমস্যা সেটা মানুষকে বুঝতে হবে।’’

কয়েক মাস আগে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার একটি পরিবেশ সংস্থার তরফে গাছের গায়ে পেরেক দিয়ে লাগানো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা খুলে দেওয়া হয়। হুগলিতে অবশ্য এমন কাজ সে ভাবে চোখে পড়েনি। নজরদারির অভাবে দিন দিন এই জেলায় পেরেকবিদ্ধ গাছের সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ।

পেরেক পুঁতলে গাছের কী ক্ষতি হয়? শ্রীরামপুর কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সুমন দত্তের বক্তব্য, মোটা গাছের বাকল পোক্ত হয়। বাকল গাছের মৃত অংশ। ফলে, পেরেকে তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু গাছের জীবিত অংশে পেরেক প্রবেশ করলে সংশ্লিষ্ট অংশে ‘শক’ বা আঘাত লাগে। সেখানে পরিবর্তন আসতে পারে। ছোট গাছের পক্ষে আঘাত সহ্য করা বেশি কষ্টকর হয়। তিনি বলেন, ‘‘পেরেকের জন্য গাছের নির্দিষ্ট কাণ্ড মরে যেতে পারে, পাতা ঝরে যেতে পারে।’’ ওই কলেজেরই শরীরবিদ্যার শিক্ষক দেবরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘পেরেকের ক্ষত ছাড়াও ফ্লেক্স-ব্যানারে আড়াল হওয়ায় সরাসরি সূর্যালোক বা জল পাওয়া থেকে গাছের সংশ্লিষ্ট অংশ বঞ্চিত হতে পারে। এতে সালোকসংশ্লেষ বা পাতা থেকে গাছের খাদ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।’’

বিজ্ঞাপন সাঁটার সময়ে কে আর এ সব মনে রাখেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Advertisement Hoarding Tree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE