Advertisement
E-Paper

হুগলিতে ফের বন্ধ দুই কারখানা, দুশ্চিন্তায় শ্রমিকরা

গত কয়েক বছর ধরেই হুগলি শিল্পাঞ্চল ধুঁকছে। অনেক চটকলের চেহারা মলিন হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাহাগঞ্জের ডানলপ এবং উত্তরপাড়ার হিন্দমোটর কারখানা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০২:০৫
বন্ধ: লক-আউটের নোটিশ পড়ছেন দুই শ্রমিক। সোমবার সকালে জয়শ্রী টেক্সটাইলসের গেটে। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: লক-আউটের নোটিশ পড়ছেন দুই শ্রমিক। সোমবার সকালে জয়শ্রী টেক্সটাইলসের গেটে। নিজস্ব চিত্র

প্রথমে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল। তারপরে শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল। সোমবার বন্ধ হল রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলস এবং শ্রীরামপুরের একটি বিস্কুট কারখানা। এক মাসে আঁধার ঘনাল এই চার কারখানার অন্তত ১৪ হাজার শ্রমিকের পরিবারের।

গত কয়েক বছর ধরেই হুগলি শিল্পাঞ্চল ধুঁকছে। অনেক চটকলের চেহারা মলিন হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাহাগঞ্জের ডানলপ এবং উত্তরপাড়ার হিন্দমোটর কারখানা। এ বার এক মাসে চারটি কারখানা বন্ধ হওয়ায় এই শিল্পাঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়লেন এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে থাকা বহু মানুষ। কারণ, তা সরাসরি স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

কারণ, কারখানাগুলির আশপাশে রয়েছে পান-সিগারেট, পাউরুটি, ঘুগনি, চায়ের দোকান-সহ বেশ কিছু দোকান। ওই সব ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদেরও উপার্জন কমবে। কারণ, শ্রমিকেরাই তো আসবেন না। তাঁরাই তো তাঁদের প্রধান ক্রেতা।

কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে পুজোর বাজার। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এর মধ্যেই মোটা টাকার মাল কেনার জন্য তৈরি হচ্ছেন। কারখানাগুলি অবিলম্বে চালু না হলে তাঁদেরও ব্যবসায় মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শ্রম দফতরের আধিকারিকরা সমস্যার কথা মানছেন। জয়শ্রী টেক্সটাইলস নিয়ে সোমবার শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওখানে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা আলোচনার মধ্যেই আছি। আজও শ্রম দফতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আশা করছি শীঘ্রই একটা সমাধানসূত্র বের হবে।’’ অন্য কারখানাগুলির ক্ষেত্রেও শ্রম দফতরের বক্তব্য প্রায় একই।

চটকল দু’টির ক্ষেত্রে কাঁচা পাটের জোগানের অভাবকেই মূল সমস্যা বলে জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। জয়শ্রী বা বিস্কুট কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পিছনে রয়েছে শ্রমিক-মালিক বিরোধ। তবে, সব ক্ষেত্রেই উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য মালিকপক্ষকে দায়ী করছেন শ্রমিকেরা। জয়শ্রী টেক্সটাইলসে দিন কুড়ি ধরে অচলাবস্থা চলছিল। সোমবার কারখানা বন্ধের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে হাতেগোনা দু’-এক জন শ্রমিকের দেখা মিলল। বৃষ্টির মধ্যেই দুই শ্রমিক কারখানা লাগোয়া রেললাইনের ধারে বসেছিলেন। এক জন কাজ করেন ‘উইভিং’ বিভাগে। অন্য জন ‘ওয়েস্টেড’-এ। দু’জনেরই মুখ ভার। এক জনের ক্ষোভ, ‘‘কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতি তৈরি করলেন। ছোট্ট ঘটনাকে বড় আকার দেওয়া হল। তবে নেতাদের ভূমিকাও ভাল নয়।’’ অপর জনের খেদ, ‘‘শ্রমিকদের কথা কেউ ভাবে না। আমাদের সংসার চলবে কী করে, ভাবুন তো!’’

শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষই দায়ী। তাঁরা শ্রমিক স্বার্থেই পদক্ষেপ করেছেন। কারখানার এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘শ্রমিকরা শৃঙ্খলা মেনে চললে কোনও সমস্যাই হতো না। শ্রমিক এবং শ্রমিক সংগঠনের একাংশের জন্য এমন অবস্থা।’’

শ্রীরামপুরে বন্ধ হওয়া বিস্কুট-কারখানা ‘প্রিয়া ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড’-এর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কাজের যা বরাত মিলছে, সেই তুলনায় শ্রমিক বেশি। কিন্তু এ ব্যাপারে দু’পক্ষের ঐক্যমত্য হয়নি। শ্রমিকদের মজুরি দিতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। সেই কারণেই ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর সিদ্ধান্ত।

ওই কারখানার শ্রমিক সন্দীপ মালোর কথায়, ‘‘ছাঁটাই হলে তাঁরা যাবেন কোথায়? আর এখন যা হল, তাতে সবাই সমস্যায় পড়লাম।’’ শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ ভূবন মণ্ডল বলেন, ‘‘বছর আড়াই বিস্কুট কারখানাটা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে লোক ঢুকিয়েছেন। এখন বলছেন‌, সত্তর জনকে ছাঁটাই করতে হবে। এটা কী ভাবে সম্ভব?’’

factories Close down Labour Strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy