Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বয়স বাধা নয়, ইচ্ছেশক্তিতেই বাজিমাত

রবিবার, সকাল সাড়ে সাতটা। গাছের ফাঁক দিয়ে সবে মাত্র রোদ এসে পড়েছে রাস্তায়। ছুটির দিন, তাই লোকজনও কম। মোড়ের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েক জন যুবক। হঠাত্‌ই তাঁদের চোখে পড়ল দূর থেকে সাদা টুপি মাথায় দিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে আসছে একটি দল। কাছে এলে মালুম হল ওঁরা সবাই প্রবীণ। লাঠিতে ভর দিয়ে কার্যত ছুটছেন বছর ৯২-এর কালীপদ ভট্টাচার্য। পিছিয়ে নেই মহিলারাও।

উত্‌সাহের কমতি নেই।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

উত্‌সাহের কমতি নেই। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

রবিবার, সকাল সাড়ে সাতটা। গাছের ফাঁক দিয়ে সবে মাত্র রোদ এসে পড়েছে রাস্তায়। ছুটির দিন, তাই লোকজনও কম। মোড়ের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েক জন যুবক। হঠাত্‌ই তাঁদের চোখে পড়ল দূর থেকে সাদা টুপি মাথায় দিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে আসছে একটি দল। কাছে এলে মালুম হল ওঁরা সবাই প্রবীণ। লাঠিতে ভর দিয়ে কার্যত ছুটছেন বছর ৯২-এর কালীপদ ভট্টাচার্য। পিছিয়ে নেই মহিলারাও। পাশে থাকা মেয়ের হাত ছাড়িয়ে ঝুঁকে পড়া কোমর সোজা করে হেঁটে চলেছেন বছর ৭০-এর পদ্মা সাঁধুখা। প্রত্যেকের চোখ আনন্দে উজ্জ্বল।

সম্প্রতি হাওড়ার সালকিয়ার জিটি রোডের এই দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রথমে ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না এলাকাবাসী। তার পরে মাইকে ঘোষণা শুনে বুঝতে পারলেন সালকিয়া ফুটবল কোচিং ক্যাম্পের আয়োজনে জেলিয়া পাড়া লেন থেকে প্রবীণদের হাঁটা প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানেই যোগ দিয়েছেন এলাকারই প্রায় জনা ষাটেক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। মাইকের ঘোষণা শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন কচিকাঁচারাও। হাওড়ার সালকিয়ায় এই বিরল দৃশ্যে তখন রাস্তার ধারে ভিড় জমে গিয়েছে। কেউ বা বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সাইকেল থেকে নেমে প্রবীণদের পিছনে তখন হেঁটে চলেছেন তাঁরাও। ৮০ বছরের জগন্নাথ মুখোপাধ্যায় এক গাল দাড়ি নিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে রাস্তার লোকজন দেখেই হাঁটার জোর বাড়িয়ে দিলেন। বলতে লাগলেন, “আমি খুব জোরে হাঁটতে পারি।”

সমাজে বয়ষ্করাও যে কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ বলে জানান সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা সজল দে। একে হাল্কা ভাবে নিতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। জেরেন্টোলজিস্ট ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী সালকিয়ার মানুষদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এর পিছনে রয়েছে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে অতল সাগরের কিনারায় এসেও বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা। দেশের প্রত্যেক মানুষের কিছু অধিকার রয়েছে। যার মধ্যে যে কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার অধিকারও বর্তমান। কিন্তু প্রবীণ নাগরিকেরা তা পান না। এই ধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও পুরনো শরীরে এবং একঘেয়েমির জীবনে নতুন ভাবে বেঁচে থাকার শক্তি পান প্রবীণরা।

পদ্মা সাঁধুখার মেয়ে নয়নতারা দাস বললেন, “কয়েক দিন ধরে মা খুব আনন্দে আছেন। রবিবার সকালে উঠেই নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন সবার সঙ্গে হাঁটবেন বলে।” প্রাক্তন ফুটবলার বিশ্বনাথ রায়ও সস্ত্রীক হাজির ছিলেন হাঁটার ময়দানে। এর মধ্যেও প্রবীণদের মুখে শোনা গেল বঞ্চনার কথা। এক প্রবীণ বললেন, “আমরা আরও বাঁচতে চাই। তা হলে তো হাঁটতে হবে। এলাকার মধ্যে কোনও মাঠ নেই যে সেটা সম্ভব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE