Advertisement
E-Paper

প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে খুন স্বামীকে

শম্ভু এবং সনাতনের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় সে। কিন্তু সনাতন কেন এই পরিকল্পনায় যোগ দিল সে বিষয়ে জ্যোতি কিছু বলতে চায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০১:৩৪
অভিযুক্ত: সনাতন ভুঁইয়া ও জ্যোতি দাস। নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত: সনাতন ভুঁইয়া ও জ্যোতি দাস। নিজস্ব চিত্র

প্রেমিক ও এক বন্ধুর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠল স্ত্রীর বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার সাঁকরাইলের আড়গোড়ি গ্রামে। মৃতের নাম তারক দাস (২৬)। তারককে খুনের অভিযোগে তাঁর স্ত্রী জ্যোতি দাস ও স্ত্রীর বন্ধু সনাতন ভুইঁয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শম্ভু ভুঁইয়া নামে একজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। শম্ভুই তারকের স্ত্রীর প্রেমিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে বারাসতের

মনুয়া-কাণ্ডের কথা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁকরাইলের ঝোড়হাটের মেয়ে জ্যোতির সঙ্গে তারকের বছর চারেক আগে বিয়ে হয়। পেশায় দর্জি তারক বাড়িতে বসেই কাজ করতেন। দিঘার বাসিন্দা শম্ভু আন্দুল স্টেশনের কাছে একটি হোটেল চালাত। স্বামীর সঙ্গে সেই হোটেলে মাঝেমধ্যেই খেতে যেত জ্যোতি। সেখানেই তার আলাপ হয় শম্ভুর সঙ্গে।

পুলিশ জানিয়েছে, মাস চারেক আগে শম্ভুর সঙ্গে ঘর ছাড়ে জ্যোতি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জিঞ্জিরাবাজারে দু’জনে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। এই সময়ই তাদের সঙ্গে আলাপ হয় সনাতনের। সনাতন হাওড়া স্টেশনে কেক ও বিস্কুট বিক্রি করে। সে-ও দিঘার বাসিন্দা। জিঞ্জিরাবাজার থেকে শম্ভুর সঙ্গে দিঘায় তার বাড়িতে চলে যায় জ্যোতি। সঙ্গে যায় সনাতনও। এইসময়ই একদিন তারক খবর পেয়ে দিঘা যান জ্যোতিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে। ওই সময়ে শম্ভুর সঙ্গে তাঁর বচসা, মারামারি হয় বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জ্যোতিকে নিয়েই বাড়ি ফেরেন তারক।

রক্তাক্ত: বিছানায় লেগে রক্ত। নিহত তারক (ইনসেটে) ছবি: সুব্রত জানা

পুলিশ জানিয়েছে, তারকের সঙ্গে বাড়ি ফিরে এলেও শম্ভু এবং সনাতনের সঙ্গে জ্যোতির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। শম্ভুর সঙ্গেই সংসার করার জন্য মনস্থির করেছিল জ্যোতি। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় তারক। এই কারণেই জ্যোতি ও শম্ভু মিলে তারককে খুন করার পরিকল্পনা করে। এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয় সনাতনও।

সোমবার রাতে স্ত্রী, তিন বছরের শিশুকন্যা এবং মাকে নিয়ে একটি ঘরেই শুয়ে পড়েন তারক। শোওয়ার আগে জ্যোতি স্বামী এবং শাশুড়িকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। ফলে সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়েন দু’জন।

পুলিশ জানিয়েছে, শম্ভু এবং সনাতন কাছাকাছিই কোথাও একটা লুকিয়ে ছিল। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দু’জনে দরজায় টোকা দেয়। জ্যোতি দরজা খুলে তাদের ভেতরে ঢোকায়। ঘুমন্ত অবস্থায় তারকের পা চেপে ধরে সনাতন। মুখে বালিশ চেপে ধরে শম্ভু ও জ্যোতি। ধস্তাধস্তিতে তারক জেগে ওঠেন। তখন চপার দিয়ে তাঁর মুখে এবং ঘাড়ে আঘাত করে শম্ভু। তারক নেতিয়ে পড়লে শম্ভু এবং সনাতন পালিয়ে যায়। এর মধ্যে ঘুম ভেঙে যায় তারকের মায়ের। তিনি দেখেন, ছেলের রক্তমাখা শরীর কোলে নিয়ে বসে আছে জ্যোতি। তারকের মা প্রতিবেশীদের ডাকলে তাঁরা তারককে নিয়ে যান হাওড়া জেলা হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর খবর পেয়েই পুলিশকে জানান প্রতিবেশীরা। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ এসে জ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা ঘটনাটি জানতে পারে পুলিশ। এরপর বেলা ১১টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে ধরা হয় সনাতনকে। শম্ভুর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ দিন বিকেলে আড়গোড়িতে তারকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন। তাঁরাই জানান, তারকের মা রত্না দাস ছেলের মৃতদেহ আনতে মর্গে গিয়েছেন। তারকের তিন বছরের মেয়ে তখন বাড়িতে একা। পুলিশ জানিয়েছে, তারকের মেয়ে খুনের ঘটনাটির অনেকটাই দেখেছে। তাকে সাক্ষী করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হবে। থানায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্যাকাসে নীল সালোয়ার-কামিজ পরে বসে আছে জ্যোতি। শম্ভু এবং সনাতনের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় সে। কিন্তু সনাতন কেন এই পরিকল্পনায় যোগ দিল সে বিষয়ে জ্যোতি কিছু বলতে চায়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, সনাতনেরও আসক্তি ছিল জ্যোতির উপরে। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, খুনের দায়ে শম্ভুকে ফাঁসিয়ে সে জ্যোতিকে নিয়ে সংসার পাতবে।

Crime Murder Extra Marrital Affair
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy