Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
মাতৃযান অমিল, ক্ষোভ পুরশুড়ায়

বাইকে প্রসব হয়ে ভূপতিত সদ্যোজাত

সোমবার ভোরে পুরশুড়ার শ্রীরামপুর বাজারে ওই ঘটনার পরে পম্পা শীট নামে ওই মহিলা এবং তাঁর শিশুকন্যাকে তড়িঘড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পীযূষ নন্দী
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫২
Share: Save:

প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন মহিলা। ফোন করেও মেলেনি ‘মাতৃযান’ পরিষেবা। তাই পড়শির মোটরবাইকে পুরশুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পথে ঝাঁকুনিতে তিনি বাইকেই প্রসব করে বিপদে পড়লেন। সদ্যোজাত মাটিতে পড়ল। গায়ে লাগল ধুলো-বালি।

সোমবার ভোরে পুরশুড়ার শ্রীরামপুর বাজারে ওই ঘটনার পরে পম্পা শীট নামে ওই মহিলা এবং তাঁর শিশুকন্যাকে তড়িঘড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক রোহন পাল বলেন, “প্রসবের জেরে মহিলা কিছুটা জখম হন। অনেকগুলি সেলাই করতে হয়েছে। শিশুটি মাতৃদুগ্ধ খাচ্ছে। আশা করি বিপদ এড়ানো গিয়েছে।”

দুর্ঘটনার জেরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ‘মাতৃযান’ অ্যাম্বুল্যান্সটি প্রায় ১২ দিন ধরে বসে গিয়েছে। কিন্তু বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না-হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন প্রসূতি এবং শিশুরা। ব্লক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে। ক্ষুব্ধ আশাকর্মীরাও। তাঁদের অভিযোগ, মাতৃযান না-থাকলে ১০২ নম্বরে ফোন করলে আ্যাম্বুল্যান্স পাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে ওই নম্বরে ফোন করে সাড়া মেলে না। আবার কখনও সাড়া মিললেও গাড়ি পেতে আড়াই-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। প্রসূতি বা অসুস্থ শিশুকে ততক্ষণ বাড়িতে ফেলে রেখে ঝুঁকি নেওয়া যায় না। বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হয়। এ দিনই ১০২-তে ডায়াল করে অনেক দেরিতে পাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সে এক প্রসূতি হাসপাতাল ফটকে ঢোকার মুখেই প্রসব করে ফেলেন।

আশাকর্মীদের পক্ষে তাপসী দাঁ বলেন, “শনিবারই ডেঙ্গি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে মাতৃযান নিয়ে সমস্যা এবং বিকল্প ব্যবস্থার জন্য ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অনুরোধ করেছি। প্রসূতি এবং অসুস্থ শিশুদের হাসপাতাল আনতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।”

মাতৃযান না-থাকায় সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত বাগ। তিনি বলেন, “মাতৃযানটি না-সারানো পর্যন্ত ১০২ নম্বরের অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস মিলেছে। বাইকে প্রসব হওয়া প্রসূতি এবং শিশুটি ভাল আছে।’’ ১০২-তে ফোন করার পর সাড়া না পেলে বা সেখানে মাতৃযান দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এবং প্রসূতিদের হাসপাতালমুখী করতে ২০১০ সাল মাস নাগাদ ‘নিশ্চয়যান’ তথা ‘মাতৃযান’ প্রকল্প চালু করে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন। হুগলিতে চালু হয় ২০১১ সালের এপ্রিলে। প্রসূতি তো বটেই, এক বছর পর্যন্ত তাঁর সন্তানকেও নিখরচায় অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। ওই পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানার গাড়ি-মালিকরা সরকারের সঙ্গে কিলোমিটারপিছু নির্দিষ্ট দরে চুক্তিবদ্ধ হন। ‘মাতৃযান’ পাওয়ার জন্য ১০২-তে ডায়াল করতে হয়।

পম্পার শ্বশুর বাড়ি হরিপালে। এক মাস ধরে তিনি অবশ্য পুরশুড়ার শ্রীরামপুর পশ্চিমপাড়ায় বাপেরবাড়িতে রয়েছেন। রবিবার রাত ২টা নাগাদ তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁর আত্মীয় রাখি রায় বলেন, ‘‘মাতৃযানে ফোন করে সাড়া পাইনি। ফোন বন্ধ ছিল। অগত্যা পড়শির সাহায্য চাই।’’ বিশ্বজিৎ রায় নামে ওই পড়শি বলেন, “আর এক মহিলাকে নিয়ে পম্পাকে মোটরবাইকে তুলি। শ্রীরামপুর বাজারে পম্পার অবস্থা দেখে বাইক থামাই। তখনই ওঁর প্রসব হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাটা নীচে ফুটপাতে পড়ল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Newborn Pursura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE