ব্যতিক্রমী: মসজিদে নমাজ পাঠ মহিলাদের। আরামবাগে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
বন্ধ ঘরে, বড়জোর বাড়ির ছাদে। ইদে নমাজ পড়ার জায়গা বলতে এতদিন এই চৌহদ্দিতেই অভ্যস্ত ছিলেন রিজিয়া খাতুন, রুনা লায়লা, আলিয়া বেগমরা। সোমবার ছবিটা বদলাল। বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে গ্রামের নতুন মসজিদে গিয়ে দল বেঁধে নমাজ পড়লেন ওঁরা।
হুগলির আরামবাগ মহকুমার আমগ্রামে আশপাশের চারটি গ্রামের মানুষের চাঁদায় তৈরি এই মসজিদের উদ্বোধন হয়েছে গত ২৬ মে। সেখানেই এ দিন আমগ্রাম, পূর্ব কৃষ্ণপুর, অরুণবেড়া, সাহাবাগ গ্রামের কয়েকশো মহিলা নমাজ পড়েছেন। প্রার্থনা করেছেন বিশ্বশান্তির। গ্রামের পুরুষদের নমাজ পড়ার বন্দোবস্ত হয়েছিল স্থানীয় ইদগাহে। পূর্ব কৃষ্ণপুরের বধূ রিজিয়া খাতুন বলছিলেন, “মহিলাদের যে বেড়াজালে আটকে দেওয়া হয়েছিল, তার বাইরে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে নমাজ পড়তে পেরে খুব ভাল লাগছে।” মসজিদে নমাজ পড়তে পেরে খুশি অরুণবেড়ার রুনা লায়লা, সাহাবাগ গ্রামের আলিয়া বেগমরাও। আলিয়ার কথায়, “আমরা চাই সর্বত্রই মসজিদে মেয়েদের নমাজ পাঠের ব্যবস্থা হোক।”
বীরভূমের মাড়গ্রামে এই বন্দোবস্ত শুরু হয়েছিল এক দশক আগে। মাড়গ্রামের গোদামপাড়া মসজিদে মহিলাদের প্রথম পৃথক নমাজ পাঠ হয় ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। শ্বশুরবাড়িতে ইদের নমাজে যোগ দিয়ে এলাকার মহিলাদের বাড়ির বাইরে নমাজ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন পেশায় চিকিৎসক বেগম সঙ্ঘমিতা চৌধুরী। স্বামী প্রাক্তন বিচারপতি এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীর স্ত্রী সঙ্ঘমিতা ২০১৪ সালে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সাংসদ হন। ২০০৬ সালে মসজিদ চত্বরে মহিলাদের জন্য নমাজের আলাদা জায়গা হয়েছিল। সে বার হাতেগোনা কয়েকজন নমাজ পড়েছিলেন। এ বছর ইদে সেখানেই নমাজ পড়েছেন শতাধিক মহিলা। সঙ্ঘমিতা বলছিলেন, ‘‘আরও বেশি সংখ্যক মেয়ে মসজিদে নমাজ পড়তে আসছেন, সেটাই বড় প্রাপ্তি।’’
২৩ বছর ধরে বাড়ির বাইরে নমাজ পড়ছেন বর্ধমান শহরের গোদা এলাকার মহিলারাও। প্রথমে ব্যক্তিগত খামারবাড়িতে, পরে মাজেদপাড়ায় মসজিদ হলে নমাজ পড়ার ব্যবস্থা হয়েছে। মকসুরা খাতুন, আঞ্জু মনোয়ারা বেগমরা বলেন, ‘‘খামারবাড়িতে হাতেগোনা কয়েকজন আসতেন। এখন গোদার সব মহিলাই মসজিদে নমাজ পড়েন।’’ এ দিন প্রায় তিনশোজন মহিলা নমাজে যোগ দিয়েছিলেন।
মাড়গ্রাম থেকে আমগ্রাম হয়ে বিবিগ্রাম— বদলের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। মালদহের ইংরেজবাজারের বিবিগ্রামের ইদগাহ ময়দানে বহু দিন ধরে একসঙ্গে নমাজ পড়েন মহিলারা। স্থানীয় মহিলা নমাজ কমিটির সম্পাদক সামিয়ারা বেগম বলেন, ‘‘গোড়ায় অনেকে আপত্তি করতেন। এখন বাধা জয় করেই মেয়েরা আসেন।’’ এখানে মসজিদ গড়ার দাবিও তুলেছে মহিলা নমাজ কমিটি।
আরামবাগের আমগ্রামেও সেই দাবি ছিল। তা পূরণ করতে পেরে খুশি অন্যতম উদ্যোক্তা জামালউদ্দিন খান। বললেন, “মহিলাদের জন্য মসজিদে নমাজের বন্দোবস্ত করা জরুরি ছিল। ইদে সাড়াও মিলেছে।’’
(তথ্য সহায়তা: জেলা ব্যুরো)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy