Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাইফোঁটায় পুজো পান চিত্রগুপ্ত

চার হাতের মধ্যে এক হাতে গদা এবং অন্য হাতে তরোয়াল। বাকি দুই হাতে কলম ও দোয়াত। গায়ের রং সবুজ। বাহন মোষ।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

চার হাতের মধ্যে এক হাতে গদা এবং অন্য হাতে তরোয়াল। বাকি দুই হাতে কলম ও দোয়াত। গায়ের রং সবুজ। বাহন মোষ। পদ্মাসনে বসে আরামবাগের বাতানলের কায়স্থপাড়ায় এই ভাবেই পুজো পেয়ে আসছেন যমরাজের হিসাবরক্ষক চিত্রগুপ্ত।

বহু বছর আগে শহর কলকাতা তো বটেই, মফস্‌সলেও ভাইফোঁটার দিন আড়ম্বরের সঙ্গে চিত্রগুপ্তের পুজো হত। বিভিন্ন এলাকার কায়স্থ সম্প্রদায়ের মানুষ চিত্রগুপ্ত পুজোয় মেতে উঠতেন। এখন সারা রাজ্যে এই পুজোর চল সেভাবে নেই। তবে বাতানল গ্রামে এই পুজোয় ছেদ পড়েনি। গ্রামের সবচেয়ে বড়ো উৎসব এই পুজো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গ্রামের যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন তাঁরা চিত্রগুপ্ত পুজো উপলক্ষে বাড়ি ফেরেন। আলো দিয়ে সাজানো হয় গোটা পাড়া। এ দিন প্রথমে আয়োজক পরিবারের মহিলারা চিত্রগুপ্তকে ভাইফোঁটা দেন। তার পর পাড়ার মহিলারা নিজেদের ভাইদের ফোঁটা দেন।

গ্রামবাসীদের দাবি, গোটা রাজ্যের মধ্যে এখন একমাত্র বাতানল গ্রামেই চিত্রগুপ্তকে পুজো করা হয়। পুজো কমিটির সভাপতি সুজিত সরকার এবং সম্পাদক শিলাদিত্য সরকার জানান, ওই গ্রামে ১৯০৮ সালে চিত্রগুপ্ত পুজো শুরু হয়। একই সময়ে কলকাতার রাধানাথ মল্লিক লেনেও এই পুজো শুরু হয়েছিল। কিন্তু ৬০ বছর চলার পরে কলকাতার পুজোটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে বাতালন গ্রামের পুজো বন্ধ হয়নি। বর্তমানে গ্রামের ১৫টি পরিবার মিলে পুজোটি টিকিয়ে রেখেছেন। পুজো উপলক্ষে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অতীতে একদিনের এই পুজো দেখতে হুগলি জেলা তো বটেই, সংলগ্ন বর্ধমান জেলা থেকেও বিভিন্ন গ্রামের কায়স্থ সম্প্রদায় মানুষ আসতেন। পুজোর দিনে ওই সম্প্রদায়ের অনেকের উপনয়ন হতো চিত্রগুপ্তের সামনে। তবে এখন আর সে সব হয় না। জাঁকও কিছুটা কমেছে।

কায়স্থ পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা শান্তিপ্রিয়দেব সরকার জানান, কায়স্থদের আদি পিতা হলেন চিত্রগুপ্ত। সেই কারণেই কায়স্থেরা তাঁর পুজো করেন। এছাড়াও যমরাজের দরবারে মানুষের পাপ-পুণ্যের হিসাব রাখাই হল চিত্রগুপ্তের কাজ। তাঁর করা হিসেবের উপরেই নির্ভর করে মানুষের স্বর্গ বা নরক বাস। তাই তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতে পুজোর প্রচলন হয়ে থাকতে পারে।

কী ভাবে পূজিত হন চিত্রগুপ্ত?

বংশ পরম্পরায় এই পুজো করে আসছেন বেচারাম মজুমদার। তিনি জানান, পুজো হয় নারায়ণ মন্ত্রে। পুজোর জন্য আলাদা কোনও নিয়ম নেই। চিত্রগুপ্তর মূর্তি তৈরি করা হয় কৃষ্ণ বা কার্তিকের আদলে। মৃৎশিল্পী দাশরথি জানা বলেন, “চিত্রগুপ্তের মূর্তি কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে স্পষ্ট আমাদের কোন ধারণা নেই। তাই কৃষ্ণ বা কার্তিকের মূর্তি গড়া হয়ে আসছে। ভাইফোঁটার পরের দিনে স্থানীয় পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ‘বন্দেপিতররম চিত্রগুপ্তমদেব’ জয়ধ্বনিতে বন্দনা করা হয় চিত্রগুপ্তকে।—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Worship Chitragupta Bhaiphonta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE