Advertisement
E-Paper

অরণ্য বাঁচানোর বার্তায় গাছের চোখে জলের ধারা

নরম আলোয় ঠাওর করলে বোঝা যায়, সবুজ ঘাসের প্রলেপে গাছরূপী মানুষের অবয়ব। কেউ কুঠারের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছে। কেউ আবার কুঠারধারীকে আটকাতে উদ্যত। আবার বিশালাকার গাছ-মূর্তির চোখ দিয়ে ঝরছে অত্যাচারের বেদনায় জলের ধারা। কুঁকড়ে যাওয়া ডালপালায় ফুটে উঠেছে যন্ত্রণার আর্তি। সেই আর্তি ছুঁয়েছে শিকড়।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩১
সাধনকাননের প্রতিমা।

সাধনকাননের প্রতিমা।

নরম আলোয় ঠাওর করলে বোঝা যায়, সবুজ ঘাসের প্রলেপে গাছরূপী মানুষের অবয়ব। কেউ কুঠারের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছে। কেউ আবার কুঠারধারীকে আটকাতে উদ্যত। আবার বিশালাকার গাছ-মূর্তির চোখ দিয়ে ঝরছে অত্যাচারের বেদনায় জলের ধারা। কুঁকড়ে যাওয়া ডালপালায় ফুটে উঠেছে যন্ত্রণার আর্তি। সেই আর্তি ছুঁয়েছে শিকড়। কবির কল্পনায় নয়, রিষড়া স্টেশনের পশ্চিমে সাধনকানন অঙ্কুরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপে এ বার গাছ বাঁচানোর থিমে ‘দাও ফিরে সে অরণ্যের’ বার্তা।

শুধু সাধনকাননই নয়, জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে হরেক থিমের জোয়ারে ভাসছে গঙ্গাপাড়ের এই জনপদ। অলিগলিতে আলোর বন্যা। রকমারি মণ্ডপসজ্জা, নজরকাড়া প্রতিমা, আলোকসজ্জা আর ঢাকের আওয়াজে শনিবার থেকেই জগদ্ধাত্রীময় রিষড়ার রাজপথ থেকে তস্য গলি।

রেল স্টেশনকে মাঝে রেখে দু’দিকেই ছোটবড় মিলিয়ে পুজোর সংখ্যা নেহাত কম নয়। গত কয়েক বছর ধরে চন্দননগরের পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজোর নিরিখে নিজস্ব একটা পরিচয় গড়ে তুলতে চেষ্টায় ত্রুটি নেই এই শহরের। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিধানচন্দ্র রায় কলেজের পাশে জিটি রোড লাগোয়া গলিতে মিলন স্টারের পুজোয় দর্শনার্থীদের জন্য অপেক্ষায় জেলেদের গ্রাম। গলিতে ঢোকার মুখেই সুদৃশ্য নৌকো। অদূরে বিবেকানন্দ স্পোর্টিংয়ের মণ্ডপে গাছের বাকল দিয়ে নানা ধরনের মডেল তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপে চটের কাজ। সারদামাতা ফরওয়ার্ড ক্লাবের মণ্ডপ জুড়ে পাইন কাঠ দিয়ে নানা কারিকুরি। আলোকমালায় শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে মহান বিপ্লবী এবং মনীষীদের। হরিসভা যুব গোষ্ঠী এবং পিটি লাহা স্ট্রিটের পুজো দেখতে লম্বা লাইন। জাগরণ ক্লাব এ বারও চমক এনেছে পুজো ভাবনায়। থিম সামুদ্রিক জগৎ। মণ্ডপে ঢুকলে দর্শকের মনে হবে সমুদ্রের তলদেশে। নুড়ি-পাথর থেকে সামুদ্রিক মাছ, প্রবাল, ডুবুরি কি নেই সেখানে।

সারদামাতা ফরওয়ার্ড ক্লাব।

দক্ষিণ ভারতের গ্রামের আদলে মণ্ডপ তেঁতুলতলা রবীন্দ্র সঙ্ঘের। সেখানকার ঘরদোর, হাঁড়িকুড়ি সবই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেনিন মাঠ যুবগোষ্ঠীর পুজো প্রচুর আলোর কলকায় সাজানো। আলোর কারিকুরিতে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে জোড়হাতে দণ্ডায়মান শ্রীরামকৃষ্ণ। আবার মিকি মাউস, ছোটা ভিম বা চিড়িয়াখানার পশুপাখি আলোয় এ সবও দেখা যাবে সেখানে। পার্ক সম্মিলনীর মণ্ডপ নজরকাড়া। অন্য নামী পুজোগুলির মধ্যে পার্ক তরুণদল, চারবাতি ইয়ং স্টাফের পুজোও দর্শনার্থীদের অবশ্য গন্তব্য। গোটা চত্বর জুড়ে কার্যত মেলা বসে গিয়েছে। ব্রহ্মানন্দ মাঠ বন্ধু গোষ্ঠীর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে মন্দিরের আদলে। চোখ টানবে এখানকার প্রতিমাও। লক্ষ্মীপল্লি অধিবাসীবৃন্দ বা কোরাস ক্লাবের পুজো দেখতেও ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

এ বারেও ধুমধাম করে পালিত হল বাংলার প্রথম বারোয়ারি গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনীর পুজো। বিন্ধ্যবাসিনীর পাশাপাশি প্রাচীন এই জনপদে আরও অনেক পুজো হয়। ফলে জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে গুপ্তিপাড়া হয়ে উঠেছিল জমজমাট। বহু মানুষ এখানে ঠাকুর দেখতে আসেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে গাইড-ম্যাপ প্রকাশ করা হয়। রবিবার ছিল বিসর্জন। বিকেল থেকেই রীতিমতো শোভাযাত্রা সহকারে গঙ্গায় প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় রথের সড়ক মাঠে আয়োজিত হয় আতসবাজি প্রদর্শনী। বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে হুগলির পাশাপাশি বর্ধমান এবং নদিয়া থেকেও বহু মানুষ এসেছিলেন। শিয়াখালার পশ্চিম তাজপুর বিবাদি সঙ্ঘের পুজোও ধুমধাম করে পালিত হয়। চণ্ডীতলার হরিপুর গ্রামে এ বার জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা ৫০। পুজো উপলক্ষে গোটা গ্রামই আলোয় সেজেছিল। জনকল্যাণ ও জনরক্ষা সমিতির থিম ছিল গঙ্গা বাঁচাও। সোমবার শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে বিসর্জন পর্ব শেষ হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

rishra jagadhatri pujo prakash pal southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy