Advertisement
E-Paper

আধুনিকতাকে উপহাস করে বেহাল নিকাশি

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরে মাথা তুলেছে রেস্তোঁরা। পা রেখেছে আধুনিক মল। শহরে ঘুরে বেড়ালে আধুনিকতার ছাপ চোখ এড়ায় না। কিন্তু ক্রমশ আধুনিক হতে চলা এ শহরের নিকাশি ব্যবস্থা অবশ্য প্রাচীনতার চাদরেই মোড়া। শহরের জনসংখ্যার চাপ বাড়লে যে নিকাশি ব্যবস্থাও আমূল এবং আশু পরিবর্তন প্রয়োজন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছে এ শহর।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫০
প্রবাহ নেই। জল সরে না বৈদ্যবাটি খালে (বাঁদিকে)। ডানদিকে, কচুরিপানায় বুজে গিয়েছে ডিভিসি খাল। ছবি: দীপঙ্কর দে।

প্রবাহ নেই। জল সরে না বৈদ্যবাটি খালে (বাঁদিকে)। ডানদিকে, কচুরিপানায় বুজে গিয়েছে ডিভিসি খাল। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহরে মাথা তুলেছে রেস্তোঁরা। পা রেখেছে আধুনিক মল। শহরে ঘুরে বেড়ালে আধুনিকতার ছাপ চোখ এড়ায় না। কিন্তু ক্রমশ আধুনিক হতে চলা এ শহরের নিকাশি ব্যবস্থা অবশ্য প্রাচীনতার চাদরেই মোড়া। শহরের জনসংখ্যার চাপ বাড়লে যে নিকাশি ব্যবস্থাও আমূল এবং আশু পরিবর্তন প্রয়োজন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছে এ শহর। আর সেই কারণেই মাঝেমধ্যে এবং বর্ষায় নিকাশির শোচনীয় দশাটা হাড়ে হাড়ে টের পান শহরবাসী। সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রমাণ গোনেন তাঁরা। আর নাগাড়ে বৃষ্টি হলে তো...!

শহরের মূল দু’টি নিকাশি হল বৈদ্যবাটি আর ডিভিসি খাল। বলাবাহুল্য বেশ কয়েক দশক ধরেই সেগুলির কোনওরকম সংস্কার হয়নি। ২০০৮ সালে আদালত নির্দেশ দেয়, গঙ্গার পাড়ের যে সমস্ত পুরসভা রয়েছে সেগুলি শহরের নিকাশি নালার জল সরাসরি গঙ্গায় ফেলতে পারবে না। গঙ্গার দূষণ রোধে আদালত সেই সময় কড়া পদক্ষেপও করে। যদিও বৈদ্যবাটি পুরসভার মূল দুই নিকাশি বৈদ্যবাটি এবং ডিভিসি-খালের সঙ্গেই গঙ্গার যোগ রয়েছে। এবং পুর এলাকর সমস্ত বর্জ্য ওই দুই খাল দিয়েই গঙ্গায় গিয়ে পড়ে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খালে পলি জনে তা প্রবাহ হারিয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেচ দফতরে বার বার আবেদন করেও খাল দু’টি সংস্কারের ব্যবস্থা করা যায়নি। সংস্কার না হওয়ার জেরেই প্রতি বর্ষায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয় পুরবাসীর।

কেমন সে জলছবি?

বৈদ্যবাটি পুর এলাকায় বর্তমানে মোট ২৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। মোট বাসিন্দা ১ লক্ষ ৩৭ হাজার। বাড়ি রয়েছে অন্তত ৩৫ হাজার। তার মধ্যে নয়টি ওর্য়াডেই নিকাশি ব্যবস্থা মূলত বর্ষায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পুর এলাকায় নিকাশির সমস্ত জলই গিয়ে পড়ে দু’টি খালে। কিন্তু দু’টি খালই বেশ কয়েক দশক সংস্কার না হওয়ায় নাব্যতা একেবারেই কমে গিয়েছে। বর্ষায় জল বাড়লেই সেই জল একেবারে উল্টো দিকে ঠেলা মারে। যার পরিণাম, দু’টি খালের জলই ঢুকে পড়ে বৈদ্যবাটি পুর এলাকার নয়টি এলাকায়। শহরের অধিকাংশ এলাকার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন।

পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়া। বৃষ্টি হলেই জল থইথই। একইভাবে পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাঘের বাগান, পম্পা নগর, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাপবাগ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ১১, ১৪, ১৭, ২১ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থাও বর্ষায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আদর্শনগর, বিদ্যাসাগার পল্লি, নিচুমাঠ, কাঁটাপুকুর এলাকার পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে। আদর্শনগর এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “নামেই শহর। বর্ষায় আমাদের এলাকার যা অবস্থা হয় তা একেবারেই বসবাসের উপযুক্ত নয়।”

ডিভিসি খালের অবস্থা বৈদ্যবাটি খালের চেয়েও ভয়াবহ। খালের পাড়ে গত কয়েক বছর ধরেই মৌরসীপাট্টা বেশ কিছু কাটাল মালিকের। সেই সব খাটালের সমস্ত গোবর পড়ে ডিভিসি খালে। তার জেরে খালের জল পুরোপুরি দূষিত হয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে খালের নাব্যতা না থাকায় বর্ষায় জল বাড়লে সেই পচা-নোংরা জল পুর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা দুবির্ষহ করে তোলে।

শহরবাসী নিকাশি নিয়ে পুরসভাকে দুষলেও শহরের বেহাল নিকাশির জন্য পুর কর্তপক্ষ সেচ দফতরকেই দায়ী করেছেন। ২০১০ সালে বাম আমলে বৈদ্যবাটি পুর এলাকার দু’টি খাল সংস্কারের জন্য ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেচ দফতর এরপর আর সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত করেনি বলে জেলা প্রশাসন সূত্র খবর। পুরসভার চেয়ারম্যান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “পুরসভার যে আর্থিক সঙ্গতি তাতে খাল সংস্কারের কোনও সুযোগ নেই। আমরা দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক লাগিয়ে মাঝেমধ্যে খালের পলি তোলার কাজ করি। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় আদৌ যথেষ্ট নয়। তাই একটু বৃষ্টি হলেই খালের জল উল্টো দিকে ঠেলা মেরে পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে ঢুকে পড়ে। আমরা সেচ দফতরে বার বার চিঠি দিয়ে খাল সংস্কারের আবেদন করেছি। কিন্তু ফল হয়নি।”

সেচ দফতরের এক কর্তা জানান, ওই দু’টি খাল সংস্কারের জন্য ২৮ কোটি টাকা লাগবে। ওই পরিমাণ টাকা রাজ্যের হাতে নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় তা করা সম্ভব। তাই ওই সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

(চলবে)

southbengal amar shohor amar sohor drainage system baidyabati gautam bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy